শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মরুর বুকে ফুটবল উত্তাপ

বিশ্বকাপে বদলে যাওয়া কাতার

মরুর বুকে ফুটবল উত্তাপ

মেসিসহ আর্জেন্টিনা দল পৌঁছেছে কাতার এএফপি

হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে প্রবেশ করলেই ফুটবল বিশ্বকাপের উত্তাপ অনুভব করা যায়। বদলে যাওয়া কাতারের নানা চিত্র ফুটে উঠে। এয়ারপোর্টের চারদিকেই বিশ্বকাপের নানা প্রতীক স্থান পেয়েছে। কোথাও আছে বিশ্বকাপের মাসকট লাইভ আবার কোথাও বিরাটাকারের লোগো। নানা বিজ্ঞাপনও আছে। বিশ্বকাপকে পুঁজি করে চলছে নিজ নিজ পণ্যের প্রচারণা। এয়ারপোর্টের এখানে-ওখানে গিজ গিজ করছে ফিফার ভলান্টিয়াররা। পথ দেখিয়ে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াই তাদের কাজ। এয়ারপোর্ট ছেড়ে বের হলেই শুরু হয় সত্যিকারের উত্তাপ। মরুভূমির উত্তাপ। নভেম্বরেও এখানে মাটি পোড়ানো রোদের বাহাদুরি। এই রোদকে একটু অবহেলা করলেই শরীরের উন্মুক্ত অংশ কালো হয়ে উঠে! তবে মরুভূমির উত্তাপও যেন হার মানছে বিশ্বকাপের কাছে। ফুটবল বিশ্বকাপ। এই একটা টুর্নামেন্টের জন্য সারা বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল পাগল চার বছর ঠিক চাতক পাখির মতোই অপেক্ষায় থাকে। এবারের অপেক্ষাটা একটু বেশিই হলো। মধ্যপ্রাচ্যের গরমে বিশ্বকাপের আয়োজন প্রায় অসম্ভব ভেবে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা বিশ্বকাপ নিয়ে আসে জুন-জুলাই থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। তাও উত্তাপ কমছে কই! মরুভূমির উত্তাপের সঙ্গে বিশ্বকাপ মিলে কাতার এখন জ্বলন্ত উনুনের মতোই! সারা বিশ্ব থেকে ফুটবলপ্রেমীরা আসছেন। বিশ্বকাপের বেশিরভাগ দলই এসে পড়েছে কাতারে। লিওনেল মেসিদের আর্জেন্টিনাও এসেছে গতকাল। বাকিরাও আজকালের মধ্যে চলে আসবে। সারা বিশ্বের প্রায় ১২ হাজার ক্রীড়া সাংবাদিক আসছেন কাতারে। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন দলে দলে, মিছিলের মতো। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে হয় বিশ্বকাপের অ্যাক্রিডিটেশন। দোহার বিরাটাকারের কনভেনশন সেন্টারকে প্রধান মিডিয়া সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করছে ফিফা। এখানেও নানা দেশের সাংবাদিকদের ভিড়। ইংরেজি না জানা সাংবাদিকের সংখ্যা কম নয়। তথ্যকেন্দ্রে এমন সাংবাদিক এলেই ফিফার দোভাষী ছুটে আসেন সাহায্য করতে। স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, ফ্রেঞ্চ, জার্মান সব ধরনের দোভাষীরই ব্যবস্থা আছে।

বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে কাতার বদলে গেছে অনেক। বড় বড় স্টেডিয়ামের পাশে গড়ে উঠেছে দারুণসব স্থাপনা। কাতারের রাজধানী দোহায় তৈরি করা হয়েছে প্রাসাদতুল্য মেট্রো স্টেশন। সেসব স্টেশনের ভিতরে আছে ফাইভ স্টার মানের রেস্টুরেন্ট, হোটেল। আন্ডারগ্রাউন্ড প্যাসেজগুলোতে প্রবেশ করলে মনে হয় যেন বিশ্বখ্যাত কোনো জাদুঘরের অংশ বিশেষ। দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। বিশ্বকাপ উপলক্ষেই বদলে যাওয়া এই কাতার। দোহায় বসবাসকারী অনেকেই ভাবে, বিশাল এই আয়োজন বিশ্বকাপের পর কী হবে! বিরাট বিরাট স্থাপনা হয়ত পড়েই থাকবে! কাতারের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ হলেও কাতারি নাগরিক কেবল সাড়ে ৩ লাখের কাছাকাছি। ওরা খুব একটা বাইরেই বের হতে চায় না। জীবন কাটিয়ে দেয় মহা আড়ম্বরে। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এসব স্থাপনার কী হবে তাহলে! 

কাতার বিশ্বকাপের আটটি স্টেডিয়াম পাড়ায় এখন দারুণ ব্যস্ততা। নিরাপত্তারক্ষীদের কড়াকড়িতে ভুগতে হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের। তারা যেখানে-সেখানে যেতে পারছেন না। তবে ফিফার স্টিকার লাগানো বাস আর শাটলগুলো চলছে নির্বিঘ্নে। স্টেডিয়াম এলাকা থেকে অনেকটা দূরে থামতে হয় সব যানবাহনকে। এরপর অনেকটা পথ হাঁটতে হয়। ফুটবলপ্রেমীরা অবশ্য হাঁটার কষ্টটুকু উপভোগই করছেন। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই তারা ভিড় জমাচ্ছেন ফ্যান জোন আর দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়ামে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, জার্মানিসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে ভক্তরা এসে হাজির হয়েছেন। হায়া কার্ড দেখালেই তাদেরকে বাড়তি খাতির করে কাতার সরকার। বিনা প্রশ্নে ইমিগ্রেশন পাড়ি দিতে দেয়। নানা সুযোগসুবিধা দিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করে। কাতার সরকারের এমন খাতিরযত্ন পেয়ে তারা মুগ্ধ। বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচারিত নেতিবাচক সংবাদগুলোকে উপেক্ষা করে তারা প্রশংসায় ভাসিয়ে দেয় কাতারকে। দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম, দোহার আকাশছোঁয়া বিল্ডিং, সমুদ্রের নীল জলরাশি সবকিছুই কেমন মোহিত করে দেয় দর্শকদের। কাতারকে ভিন্ন রূপে চেনে তারা। চোখে-মুখে ফুটে উঠে বিস্ময়ের অভিব্যক্তি। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। বিশেষ করে ইউরোপীয়ানরা। কাতারের এতসব আয়োজনের মধ্যেও তারা ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে। সমালোচনা করে। সময়মতো অ্যালকোহল খুঁজে পাওয়া যায় না এখানে। পোশাকের স্বাধীনতা নেই। জনসমক্ষে বের হলে ভদ্রোচিত কাপড় পরতে হয়। ব্যক্তি স্বাধীনতায় কাতার সরকারের এই হস্তক্ষেপ মানতে পারছে না তারা। তাই বলে ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা থেকেও বঞ্চিত হতে রাজি নয় এসব সমালোচক ফুটবলপ্রেমী। বিশ্বকাপের আর মাত্র দুই দিন। কাতার শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় আছে ক্রীড়া জগতের মেগা এই ইভেন্ট আয়োজনের। শেষ মুহূর্তে কেবল নিজেদের পরিকল্পনা নাড়াচাড়া করে দেখছে আয়োজকরা। ভলান্টিয়ারদের প্রায় সবাই চলে এসেছে। কাতারের রাস্তায় বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে নেমেছে ট্যাক্সি ড্রাইভাররা। সবাই প্রস্তুত। এবার কেবল কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচে রেফারির বাঁশি বাজানোর অপেক্ষা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর