মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অনেক কিছুই লেখা হবে ইন্দো-প্যাসিফিকে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

অনেক কিছুই লেখা হবে ইন্দো-প্যাসিফিকে

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, বিশ্ব সম্প্রদায় হিসেবে আমরা এখন একসঙ্গে যে পদক্ষেপগুলো নেব, সেগুলোই এই সময়টি সংঘাত ও বিরোধের যুগ হিসেবে, নাকি আরও স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের সূচনা হিসেবে পরিচিত হবে, সেটা নির্ধারণ করবে। সেই ভবিষ্যতের অনেক কিছুই লেখা হবে এই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে। গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বহুপক্ষীয় কাঠামোর অপার সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন’ বিষয়ক প্যানেল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা বর্তমানে এক গুরুত্বপূর্ণ দশকের শুরুর দিকে দাঁড়িয়ে আছি। এটি শুধু বঙ্গোপসাগরের জন্য নয়, বরং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ও বিশ্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। যে হুমকিগুলো নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন, সেগুলো একসঙ্গে সমাধানের সুযোগ দ্রুত বন্ধ হয়ে আসছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলরেখা থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত প্রসারিত ইন্দো-প্যাসিফিক বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অঞ্চল। অঞ্চলটি বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের আবাসভূমি এবং পুরো বিশ্বের অর্থনীতির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। এখানে যা কিছু ঘটে তা সমগ্র বিশ্বেই প্রভাব ফেলে। পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশ ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে এমনভাবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে চাই যার বৈশিষ্ট্য থাকবে পাঁচটি। আমরা এমন একটি অঞ্চল চাই যা হবে- অবাধ ও উন্মুক্ত, আন্তসংযুক্ত, সমৃদ্ধশালী, নিরাপদ এবং কষ্ট-সহিষ্ণু। অন্যান্য অনেক দেশের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা এই রূপকল্পটি গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, আমি শুরুতেই এটা বলতে চাই, কোনো দেশকে জোর করে কোনো পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করাটা আমাদের কৌশল নয়। বরং আমরা এ অঞ্চলের অবাধ ও উন্মুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই যেন এখানকার দেশগুলো স্বাধীনভাবে তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বচ্ছ ও সংবেদনশীল শাসন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সর্বজনীন মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তাছাড়া আমরা আইনের আওতায় ন্যায়বিচার ও সমান আচরণ নিশ্চিত করার জরুরি কাজ অব্যাহত রেখেছি বিধায় আমরা স্বাধীনতা ও মর্যাদাকামীদের সঙ্গে একাত্মতা বজায় রাখব। আমরা নিজ দেশে ও সারা বিশ্বে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করব এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে আমরা কুণ্ঠাবোধ করব না। আমরা এটা করি কারণ গণতান্ত্রিক শাসন কেবল মানুষের মর্যাদা সুরক্ষায় কর্তৃত্ববাদকে ক্রমাগত ছাড়িয়েই যায় না, বরং আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী সমাজের দিকে পরিচালিত করে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রশ্নে একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হলো মিয়ানমারের নৃশংস সামরিক অভ্যুত্থান এবং রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যা। মিয়ানমারের সামরিক শাসকেরা তার নিজেদের জনগণের ওপর যে নৃশংসতা ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে সেটা শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু, কিছু দেশ মিয়ানমারের সামরিক শাসকদেরকে প্রাণঘাতী অস্ত্রসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করে চলেছে এবং এর ফলে সহিংসতা ও নিপীড়ন আরও প্রকট হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেজারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে সামরিক বিমানের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

আমরা অবিলম্বে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম, দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা বিক্রয় বা হস্তান্তর বন্ধের জন্য সমস্ত দেশের কাছে অনুরোধ রাখছি। তাছাড়া নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক চাপের মাধ্যমে মিয়ানমারকে জবাবদিহি করতে যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদেশ ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে।

সর্বশেষ খবর