বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাধা না দিলে হার্ডলাইনে নয়

ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বাধা না দিলে হার্ডলাইনে নয়

সরকার বাধা না দিলে ১০ ডিসেম্বর হার্ডলাইনে যাবে না বিএনপি। দলের সাংগঠনিক কাঠামো ধরে রাখতে দেওয়া হবে নতুন কর্মসূচি। রাজধানীর নয়াপল্টন ছাড়াও ঢাকায় সমাবেশের জন্য আরও দুটি স্থানের নাম প্রস্তাব করেছিল বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনেই সমাবেশের চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যেকোনো মূল্যে ঢাকায় গণসমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর দলটি। এমন কঠোর মনোভাব পোষণ করেছেন মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দ। পুলিশ বা প্রশাসন অনুমতি না দিলে কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করবেন তারা। ঘোষণা করবেন নতুন কর্মসূচি। এমন প্রস্তুতিই নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পরিবহন ধর্মঘট থেকে শুরু করে কোনো ধরনের বাধাবিঘ্নই মানা হবে না। গতকাল দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা করছে বিএনপি। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিএনপি কারও সঙ্গে আপস করবে না।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের জীবন নিয়ে খেলছে। আমাদের সাতজন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান চলছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব করে আর কোনো লাভ হবে না। কারণ সাধারণ মানুষও আমাদের লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ থেকে আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব ইনশা আল্লাহ।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশের স্থান হিসেবে বিএনপির এক নম্বর পছন্দ নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে; যা ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমপি কমিশনারকে জানানো হয়েছে। এর বাইরে আরও দুটি স্থানের কথা মৌখিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে। তার একটি হলো রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং দ্বিতীয়টি মানিক মিয়া এভিনিউ। এ দুটি স্থানের প্রস্তাব ডিএমপি কমিশনার কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে গতকাল নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগরী বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মহাসচিব পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে। জানা গেছে, সেদিন ঢাকায় ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ব্যাপক লোকসমাগমের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে সাংগঠনিক শক্তির জানান দিতে চায় দলটি। সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ করতে তারা বদ্ধপরিকর। ওই মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে দলের ঢাকা বিভাগে ১১টি সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন ইউনিটে কর্মিসভা চলছে প্রতিদিন। সংগঠনের ৯ বিভাগে গণসমাবেশ শেষ করার পর প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশাল জমায়েত ঘটিয়ে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনই মুখ্য উদ্দেশ্য। সে ক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ করতে চায় তারা। দলের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনার কার্যালয় থেকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। তারা বলেছেন এ সমাবেশ করাটা আমাদের নাগরিক অধিকার। তবে সমাবেশের স্থান সম্পর্কে নয়াপল্টন ছাড়া আরও বিকল্প স্থানের কথা বলেছেন। এজন্যই আমরা আরও দুটি স্থানের নাম উল্লেখ করে ডিএমপি কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের মহাসচিব পরিষ্কারভাবে বলেছেন নয়াপল্টনেই সমাবেশ হবে। ১০ ডিসেম্বর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ সেগুলো যুগপৎভাবে পালনের জন্য সমমনা সব রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিও আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনো সরকার পতন আন্দোলন শুরু করিনি। ১০ ডিসেম্বর সরকার পতন আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি নয়। এটা আমাদের পূর্বঘোষিত ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশের অংশ। তবে সেদিন নতুন করে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ বিএনপির আরেক নীতিনির্ধারক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সেদিন ঢাকায় অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ একটি সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। আশা করি সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে আমরা সঠিক আচরণটাই পাব। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সরকার বা ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে যেসব হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে সেগুলো বাঞ্ছিত নয়। কোনো বাধাবিঘ্নই ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ আটকাতে পারবে না।’ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘ঢাকায় সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে একটি সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। কিন্তু সেই সমাবেশে সরকার বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হলে জনগণ তা কিছুতেই মানবে না। আমরা কোনো সংঘাত চাই না। রাজধানীতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় একটি মহাসমাবেশ করতে চাই।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘ঢাকার মহাসমাবেশ নিয়ে সরকার রীতিমতো আতঙ্কিত। আতঙ্কে তারা নানা রকমের কথাবার্তা বলা শুরু করেছে। ঢাকাকে নাকি সেদিন অবরুদ্ধ করে ফেলা হবে। আমাদের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানো হচ্ছে। চলছে গ্রেফতার, ধরপাকড়। সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে ঢাকার মানুষ বিএনপির শান্তিপূর্ণ এ গণসমাবেশ সফল করে তুলবে।’ ঢাকা মহানগরী উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘আমরা ঢাকা মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ করতে চাই। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঢাকাবাসীও সে সমাবেশে যোগ দিতে প্রস্তুত। আশা করি গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকার কোনো বাধা দেবে না। আর বাধা দিলে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই তার দায় বহন করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর