বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

হুন্ডি সহজ করতে মধ্যপ্রাচ্যে অ্যাপস ব্যবহার : সিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হুন্ডিতে জড়িত একাধিক চক্র। গত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এক চক্রই প্রায় ৩ কোটি টাকা হুন্ডি করেছে। শুধু তা-ই নয়, এমএফএসের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন করা হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ও সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এই ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ, নির্ভুল ও দ্রুততম উপায়ে শেষ করার জন্য চক্রগুলো বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।

সোমবার রাতে কুমিল্লা ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে এই হুন্ডি চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তারা হলেন- মীর মো. কামরুল হাসান শিশির (২৮), খোরশেদ আলম (৩৪), ইব্রাহিম খলিল (৩৪),  কাজী শাহ নেওয়াজ (৪৬), আজিজুল হক তালুকদার (৪২) ও নিজাম উদ্দিন (৩৫)। তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব জব্দ করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ২ হাজার এজেন্ট সিমের বেশ কিছু এজেন্ট সদস্য হুন্ডির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত। ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ, নির্ভুল এবং দ্রুততম উপায়ে শেষ করার জন্য তারা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। ‘ফ্রিডমফ্লেক্সি২৪ডটকম’ এমন একটি সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি কারবারিরা বাংলাদেশে যে নম্বরগুলোতে টাকা পাঠানো হবে সেই নম্বরগুলো ইনপুট দিতেন এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টের সহায়তায় বাংলাদেশি হুন্ডির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে প্রাপকের কাছে যেত। এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগিতায় চক্রের সদস্যরা বিদেশে স্থানীয় সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচা, মাদক কেনা-বেচা, স্বর্ণচোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ বহু অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা দেশে না পাঠিয়ে ওই বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে। পরে দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপে পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশি মুদ্রায় ওই অর্থ এমএফএসের এজেন্টকে প্রদান করে। তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএসের এজেন্ট কর্তৃক বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএসের নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে। চক্র দুটি প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ-ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি চক্র প্রায় ৩ কোটি টাকা হুন্ডি করেছে। সিআইডি প্রধান বলেন, মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের মালিকানাধীন কুমিল্লার লাকসামে অবস্থিত বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউস জেএ এন্টারপ্রাইজের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিআইডি সন্দেহজনক দুটি এজেন্ট সিম নিয়ে কাজ করে, যার মাধ্যমে গত ৬ মাসে ৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পায়। এ দুটি সিম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এ রকম আরও ১১টি এজেন্ট সিমের সন্ধান পায় সিআইডি। যাদের মাধ্যমে এ রকম সন্দেহজনক তথা ডিজিটাল হুন্ডির তথ্য পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিআইডির প্রধান বলেন, সব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের আওতায় অনেক ডিস্ট্রিবিউশন হাউস রয়েছে। এ ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের মালিক ও কর্মচারী তাদের উচিত অধীনস্ত যে সব এজেন্টগুলো আছে তাদের কর্মকান্ড মনিটরিং করা। যদি মনিটরিং না করে তাহলে তারা আইনের আওতায় আসবে। পাশাপাশি বিকাশ, রকেট ও নগদের কর্তৃপক্ষ যারা ডিস্ট্রিবিউশন হাউস অনুমোদন দিয়েছে তাদের ডিস্ট্রিবিউশন হাউস অবশ্যই মনিটরিং করবে। তারা যদি মনিটরিং না করে তাহলে আমরা বাধ্য হব তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য। প্রবাসীরা যেন তাদের ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠায়। সে ক্ষেত্রে দেশের উন্নতি হবে ও তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে থাকবে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিরা ভিপিএন ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে পারে। তাই জঙ্গি ছিনতাইয়ের বিষয়ে আগাম কোনো গোয়েন্দা তথ্য মেলেনি।

সর্বশেষ খবর