রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
কুমিল্লায় গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল

নিরপেক্ষ ভোট হলে জামানত থাকবে না

বিভাগের নাম কুমিল্লাই করা হবে ♦ ফন্দিফিকির করে ইভিএম দিয়ে ভোট নিতে চাচ্ছে

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

নিরপেক্ষ ভোট হলে জামানত থাকবে না

কুমিল্লা টাউন হল মাঠে গতকাল বিকালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার কুমিল্লায় ‘মেঘনা’ নামে বিভাগ করার উদ্যোগ নিলেও বিএনপি সরকারে গেলে এই বিভাগের নাম কুমিল্লাই করা হবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষ আর আপনাদের ভাঙা নৌকায় চড়বে না। তাই সময় থাকতে মানে মানে কেটে পড়ুন। অন্যথায় কীভাবে বিদায় করতে হয়, তা এ দেশের মানুষ জানে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের জামানত থাকবে না। তাই তারা আবারও ফন্দিফিকির করছে, ইভিএম দিয়ে ভোট নিতে চাচ্ছে। একই উদ্দেশ্যে আবারও সেই গায়েবি মামলা শুরু করেছে। রাজশাহীতে ১১টি গায়েবি মামলা হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণ মামলা হয়েছে। অথচ কেউ কোথাও ককটেল বিস্ফোরণের কোনো আওয়াজই পায়নি।

গতকাল বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বেলা ১১টায় বিএনপির এই গণসমাবেশ শুরু হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে সারা দেশে এই কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, বরকত উল্লাহ বুলু, মনিরুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, মোস্তাক মিয়া, জসিম উদ্দিন, উদবাতুল বারী আবু, ইউসুফ মোল্লা টিপুসহ চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা উপজেলার নেতারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। জোর করে দুবার আওয়ামী লীগ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছে। ২০১৪-তে কেউ ভোট দিতে যায়নি। যশোরে তিনি (শেখ হাসিনা) রাষ্ট্রীয় খরচে সমাবেশে বলেছেন, আওয়ামী লীগে ভোট দিলে মানুষ শান্তিতে থাকে। আপনারা (উপস্থিত জনতা) কি শান্তিতে আছেন? এখন সবাই বলছে, আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না। জনগণ ভাঙা নৌকায় উঠতে চায় না। তাই সময় থাকতে মানে মানে কেটে পড়ুন। অন্যথায় কীভাবে বিদায় করতে হয়, তা এ দেশের মানুষ জানে।

তিনি বলেন, ২২ তারিখ থেকে ১০৪টি মামলা দিয়েছে ঢাকাসহ সারা দেশের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে, ঢাকায় যাতে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ বন্ধ করতে পারে। আজকে কি আপনাদের সমাবেশ বন্ধ করতে পেরেছে? রাজশাহীতেও করা যাবে না। ঢাকাতেও করা যাবে না। নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে দেবে। মির্জা ফখরুল সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, এদের লজ্জাও নেই, শরমও নেই। এদের চামড়া গন্ডারের মতো মোটা হয়ে গেছে। ১০ তারিখের সমাবেশ বন্ধ করার জন্য ঘরে ঘরে মামলা দিচ্ছে। রেইড দিচ্ছে। কিন্তু ঢাকার সমাবেশ বন্ধ করা যাবে না। যেমনটা আগের সমাবেশ বন্ধ করা যায়নি। তারা আগে বলেছিল, ঢাকায় সমাবেশ করা যাবে না। এরপর পূর্বাচল থেকে সোহরাওয়ার্দী আসলেন। একটু এগিয়ে এবার পল্টনে আসুন। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগুন সন্ত্রাসের কথা বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস তো করেন আপনারা। আওয়ামী লীগের চুরির কথা বলতে গেলে দিন-রাত পার হয়ে যাবে। এখন ট্রেজারিতে টাকা নেই। ‘রিজার্ভ কি আমরা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছি’-প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, দেশের রিজার্ভ আপনারা গিলে খেয়ে ফেলেছেন।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আগামী তিন মাস আমদানির টাকা পরিশোধের রিজার্ভ নেই। একটি সংস্থা থেকে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে ৮৬ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। বিদ্যুতের নামে ৭৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। আমাদের শ্রমিকদের-কৃষকদের আয় বাড়ে না। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) এই আয়ের টাকা চুরি করে করে ফুলেফেঁপে মোটা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই সমাবেশ সফল করতে লিফলেট বিতরণকালে ছাত্রনেতা নয়নকে গুলি করে হত্যা করেছে। আজকের সমাবেশে তার বাবা কথা বলেছেন, তার চোখে কোনো অশ্রু ছিল না, ছিল আগুন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে চার বছর কারাগারে রেখেছেন। এখন আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রেখে তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। কিন্তু এই দেশে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। যতদিন শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করেন- ততদিন কোনো নির্বাচন হবে না। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে, সেই কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না।

সর্বশেষ খবর