শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আরাকান অ্যালায়েন্স নামে নতুন জোট রোহিঙ্গাদের

একাত্মতা ১৫ সংগঠনসহ আরএসওর

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জাতিভিত্তিক সংগঠনগুলোর নতুন একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে। জোটের নাম দেওয়া হয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স বা আরাকান অ্যালায়েন্স। এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের ছোট ছোট কমপক্ষে ১৫টি সংগঠন এই জোটের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ জোটের নেপথ্যে রয়েছে মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)’-এর শীর্ষ কয়েকজন নেতা। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ। এ বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সশস্ত্র মানসিকতা থেকে বের হয়ে যদি রাজনৈতিক আন্দোলনের উদ্দেশ্যে এ জোট হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই এটা ভালো দিক। এ জোটের নেপথ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকলেও তাদের নিয়ন্ত্রণে সরকারকে প্রদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’ ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একসময় আরএসওর অবস্থান থাকলেও অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এক সময়ের প্রভাবশালী এ জঙ্গি সংগঠন। ক্যাম্পের নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতেই ছোট সংগঠনগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার করতে কৌশলে মাঠে নেমেছে। মূলত ভিন্ন পথে ক্যাম্পে আধিপত্য ফিরে পেতেই নতুন কৌশলে মাঠে নেমেছে আরএসও।’ এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একসময় আরএসওর একক আধিপত্য চললেও বর্তমানে খর্ব শক্তির সংগঠনে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে আধিপত্য রয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ এবং জমিউয়তুল মুজাহিদ্বীনের। পুরনো অবস্থান ফিরে পেতে মাঠে নেমেছেন আরএসওর সিনিয়র নেতারা। তারা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার নামে ক্যাম্পে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে। সশস্ত্র সংগঠনের ইমেজকে আড়াল করে প্রত্যাবাসনের নামে তারা নতুন এ জোট করেছে। এ জোটের নাম দেওয়া হয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স বা আরাকান অ্যালায়েন্স। জোটের নেপথ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করা আরএসও নেতা মাস্টার নুরুল ইসলাম, কানাডায় অবস্থানরত ডা. ইউনুস, মালেশিয়ায় অবস্থানরত রেজা উদ্দিন, মাস্টার আনোয়ার এবং মাস্টার আমান। তাদের মধ্যে নুরুল ইসলাম এবং ইউনুস জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এর আগে গ্রেফতারও হয়েছিলেন পুলিশের হাতে। গত ২০ নভেম্বর এ জোটের রূপরেখা অনুমোদন করেন নতুন এ জোটের নেতারা। রূপরেখা নির্ধারণ হওয়ার পর মাঠে নেমেছেন এ সংগঠনের নেতারা।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরাকান অ্যালায়েন্সের এক নেতা বলেন, ‘এ জোটের নেপথ্যে আরএসও সিনিয়র নেতারা থাকলেও এটা জঙ্গিভিত্তিক সংগঠনগুলোর কোনো জোট নয়। ছোট ছোট সংগঠন নিয়ে এ জোট করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের জন্য। জোটের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা এবং যোগাযোগ স্থাপন করা, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দ্রুত কার্যকর করার জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের সোচ্চার হওয়া।’

সর্বশেষ খবর