শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিএনপি নেতা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি

প্রতিদিন ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে হামলা ও গ্রেফতারের। রাজবাড়ীতে এক মামলায় অজ্ঞাত ১৫/২০ জনকে আসামি করা হলেও পুলিশ শত শত নেতা-কর্মীর বাড়িতে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতার এড়াতে অনেক নেতা-কর্মী বাড়িছাড়া হয়েছেন। বরিশালের বাকেরগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মুন্সীগঞ্জে গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির ১৬ কর্মী। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি-নাগরিক ঐক্যের ছয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে শতাধিক বিএনপি-জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে গত ২০ নভেম্বর জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে সাতটি ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন উদযাপনের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের। এ সময় পুলিশের কনস্টেবল মো. হাসান গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় ছাত্রদলের আক্তার হোসেন (২৮) ও শিপন শেখ (১৯) নামের দুই সক্রিয় কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক আইনে জেলা যুবদল, ছাত্রদল ও পৌরসভার কাউন্সিলরসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে পুলিশ। মামলায় ১৫/২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি শুরু হযেছে। ককটেল ও পুলিশের ওপর হামলা পুলিশের সাজানো নাটক। এই মামলার মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলা বিএনপি ও সহযোগী  সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন পুলিশ সদস্যরা। নিরীহ নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। অনেক নেতা-কর্মী বাড়িতে থাকতে পারছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী গ্রেফতারের ভয়ে আত্মীয় বাড়িতে রয়েছেন। রাতে বাড়িতে পুলিশ এসেছিল। জিজ্ঞাসা করলাম কেন এসেছেন? তারা উত্তরে বলল, আমার স্বামী বিস্ফোরক মামলার আসামি। আমি খোঁজ নিয়েছি- তার নাম এজাহারে নেই। পুলিশ বলছে অজ্ঞাতনামা আসামি। রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. লিয়াকত আলী বলেন,  বৃহস্পতিবার রাত থেকে পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে। আমাদের অনেক নেতা-কর্মী বাড়িতে থাকতে পারছেন না। পুলিশ একটি প্যানিক সৃষ্টি করেছে। সরকার পুলিশকে ব্যবহার করছে। এটা আসলে ঠিক নয়। বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি চালানোর বিষয়ে কথা বলতে চায়নি রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. মাহবুবুল আলম।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশির বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে। গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ি থেকে পালালে আমরা তাকে খুঁজে বের করব। বরিশাল : জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদরের টিঅ্যান্ডটি মোড় এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন, বাকেরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান রুবেল ও যুবদল নেতা মো. রায়হান এবং গারুড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসবক দল সভাপতি মিজানুর রহমান টিটু। গতকাল বিকালে বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদরের টিঅ্যান্ডটি মোড় এলাকায় দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক স্বপন কুমার দে বাদী হয়ে ২৭ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৬০ থেকে ৬৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি হিসেবে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির ১৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে পৃথক অভিযানে বিভিন্ন নাশকতার মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- গজারিয়া উপজেলার জসিম সরকার, শাহ আলম, করিমখাঁ, মাসুম ও মহসিন; লৌহজং উপজেলার আল-আমিন বেগ, লাল মিয়া সরদার, ইলিয়াস মিয়া, ফারুক হোসেন তপু ও আব্দুস সাত্তার; সিরাজদিখান উপজেলার আজিম আল রাজী, ফারুক হোসেন ও আমান মোল্লা; টঙ্গীবাড়ী উপজেলার আবদুল আলিম, রাজন মুন্সী ও লতিফ দপ্তরি; সদর উপজেলার রকিব উদ্দিন। এসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : সিদ্ধিরগঞ্জে নাশকতার মামলায় বিএনপি ও নাগরিক ঐক্যের ৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তারা হলেন- ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও কাউন্সিলর দিদার আলম, নাগরিক ঐক্যের থানার সমন্বয়ক আলী হোসেন ওরফে নূর আলী, নাগরিক ঐক্যের মাঠ পর্যায়ের কর্মী সংগ্রাহক মেহেদী হাসান রতন, বিএনপি কর্মী সুজন, রুবেল, রবিউল হাসান। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, বৃহস্পতিবার রাতভর তাদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি জানান, নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ বানচাল করতে আমাদের দলের নিরীহ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।  

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, ১ ডিসেম্বরের মামলায় রতন ও বাকিদের ২৭ নভেম্বরের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক দেবাশিষ কুন্ডু বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বিএনপি-জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদের ২১ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এর আগে ২৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করার অভিযোগে বিএনপির ৩৯ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সানোয়ার হোসেন।

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তায় অবরোধ করে ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধাদান, আক্রমণ, আঘাতসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে শতাধিক বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বোয়ালমারী থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৬০/৭০ জনসহ এজাহারনামীয় ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টায় বোয়ালমারী থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক কাজী আবুল বাসার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারদের গতকাল দুপুরে ফরিদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতাররা হলেন- পৌর বিএনপির সহসভাপতি খান আতাউর রহমান, সাবেক কাউন্সিলর ফরিদ হোসেন, রফিক বিশ্বাস, বরকত মোল্যা, মারুফ হোসেন, হামিদুল হক, আবু নাসিরুল মোল্যা এবং সিরাজ মৃধা। এজাহারনামীয় মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসির ইসলাম, উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম কামাল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু, মজিবুর রহমান বাবু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহাবুবুর রশিদ হেলাল, জাকির হোসেন টিয়াই, পৌর বিএনপির সভাপতি শেখ আফছার উদ্দিন, সহ-সভাপতি খান আতাউর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার সাহা প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর