সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশ বাঁচাতে নৌকায় ভোট চাই

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের আয়োজনে জনসমুদ্রে শেখ হাসিনা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশ বাঁচাতে নৌকায় ভোট চাই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভায় বক্তব্য দেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

যুদ্ধাপরাধী ও খুনিদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক দল জামায়াত-বিএনপি যাতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ছাড়া বিএনপি জাতিকে কিছু দিতে পারেনি। তারা ক্ষমতায় থাকতে অর্থ পাচার করে।

গতকাল বিকালে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। জনসভাস্থলে পৌঁছেই চট্টগ্রামে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি ছয়টি উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো বীর চট্টলার মানুষের জন্য আজকে আমার উপহার। চট্টগ্রামের প্রধানমন্ত্রীর এ জনসমাবেশকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ। ভোর থেকেই রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, ব্যান্ড বাজিয়ে রঙিন টুপি পরে নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন পলোগ্রাউন্ড মাঠে। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান দিয়ে সকাল ১০টায় মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর দুপুর ১২টায় ১ মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সভার কার্যক্রম।

চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম আন্তর্জাাতিক বিমানবন্দর করে দিয়েছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক চার লাইন করা হয়েছে। আমরা ছয় লাইন করে দেব। কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন করে দিচ্ছি। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমান করে দিচ্ছি। চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, মেরিন অ্যাকাডেমি- এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নাই যা আমরা করে দিই নাই। প্রত্যেকটা জেলা-উপজেলায় আমরা সরকারি কলেজ করে দিয়েছি, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে।’

চট্টগ্রামের মানুষের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ?এই চট্টগ্রামের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন সমাবেশ করতে পারিনি। এই স্মৃতিময় চট্টগ্রামে আমরা বারবার ছুটে আসতাম। আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে মুক্তি পেতেন, আমাদের চট্টগ্রামে বেড়াতে নিয়ে আসতেন। চট্টগ্রামে এলেই ছুটে যেতাম এম এ আজিজ চাচা, জহুর আহমেদ চাচার বাসায়। এখন তারা কেউ নেই। কিন্তু সব স্মৃতি মনে আছে। চট্টগ্রামবাসীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা আছেন আমার অন্তরে, আমার হৃদয়ে। আপনারাই আমার পরিবার। আপনাদের কাছেই আমার আশ্রয়। ?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জেলা পর্যায়ে জনসভা করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে আবারও নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।

জনসভা সঞ্চালনায় ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। জনসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, জেলা ও মহানগর নেতাদের মধ্যে এম এ সালাম, মোসলেম উদ্দিন, আতাউর রহমান, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেসবাউল হক সাচ্চু, স্বাচিপের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, আবু রেজা মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নদভী এমপি, মাহফুজুর রহমান মিতা এমপি প্রমুখ।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার, আজিজুস সামাদ ডন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, আওয়ামী লীগ নেতা নাইমুর রহমান মুক্তা প্রমুখ।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আপনাদের দোয়া, সহযোগিতা ও ভোট চাই। যাতে যুদ্ধাপরাধী ও খুনিরা আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তিনি বলেন, যাওয়ার আগে আমি আপনাদের কাছে একটি প্রতিশ্রুতি চাই, অতীতের মতো আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দেবেন এবং আমাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। হাত তুলে বলুন, নৌকায় ভোট দেবেন। এ সময় উপস্থিত জনগণ দুই হাত তুলে তাদের সম্মতি জানায়। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত খুনির দল। যুদ্ধাপরাধীর দল। তারা জাতির পিতাকে হত্যার মদদদাতাদের দল। এমনকি আমাকেও বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে। 

বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। ২০১৩ থেকে শুরু করল অগ্নিসন্ত্রাস। লঞ্চ-ট্রেন-রাস্তায় আগুন। গাছ কেটে ফেলছে। চারদিকে শুধু অগ্নিসন্ত্রাস। যাদের মধ্যে মন্যুষত্ব আছে তারা কি এভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে? তাদের আন্দোলন হচ্ছে মানুষ খুন করা। শেখ হাসিনা বলেন, ওরা (বিএনপি) জানে ইলেকশন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তাই তারা নির্বাচন চায় না। এমন কিছু আসুক যারা একেবারে নাগরদোলায় করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে- এটাই তারা আশা করে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান যেমন জাতির পিতাকে হত্যা করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল। ওদের ধারণা ওইভাবেই তারা ক্ষমতায় যাবে। গণতান্ত্রিক ধারা তারা পছন্দ করে না। তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। আত্মসমর্পণের আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর ইত্তেফাকের সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনকে তুলে নিয়ে যায়। এ রকম বহু জনকে তারা তুলে নিয়ে যায়। এই ১০ ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করেছিল। আত্মসমর্পণ করতে হবে জেনে, এই দেশ যেন সামনে এগিয়ে চলতে না পারে সে কথা মাথায় রেখেই তারা এ ঘটনা ঘটায়।

এক দশকের বেশি সময় পর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আঞ্চলিক কথা দিয়ে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল পৌনে ৪টায় বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন- ‘অনরা কেন আছন? বিয়াগুন গম আছননি? তোয়ারালায় আত্তে পেটু পুরের। এতালাই চাইতম আইচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রীর মুখে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক কথা শুনেই সমস্বরে আঞ্চলিক ভাষায় উত্তর দেন জনসভায় আগত নেতা-কর্মীরা।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে খালেদা জিয়া কারাগারে কেন? বিদেশ থেকে টাকা এসেছে এতিমের জন্য। সেই টাকা আর এতিমের হাতে যায়নি। সব নিজেরা পকেটে ঢুকিয়েছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলা করেছে। সেই মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়েছে। তার ছেলে একটা তো (আরাফাত রহমান কোকো) মারা গেছে। তার পাচার করা টাকা আমরা সিঙ্গাপুর থেকে কিছুটা এনেছি। আরেকজন (তারেক রহমান) কুলাঙ্গার বানিয়ে রেখেছে জিয়াউর রহমান। সে এখন লন্ডনে বসে আছে। সে গেল কেন লন্ডনে? ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে আর কোনো দিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে পালিয়েছিল। সেখানে রাজার হালে থাকে। আর দেশের ভিতরে যত বোমাবাজি, খুনখারাপি, নাশকতা সব সেখানে বসে পরিচালনা করে। তিনি বলেন, ’৮০ সালে যখন জিয়াউর রহমান মারা যায় তখন ৪০ দিন ধরে টেলিভিশনে দেখিয়েছে ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি। আমার প্রশ্ন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসতে না আসতেই হাওয়া ভবন খুলে তার ছেলে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। ভাঙা স্যুটকেস জাদুর বাক্স হয়েছে। আর ছেঁড়া গেঞ্জি হয়ে গেছিল ফ্রেন্সসিপন। 

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। জাতির পিতা রাঙামাটিতে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র করে গেছেন। আমরা স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করে বাংলাদেশকে স্যাটেলাইট জগতে নিয়ে গেছি। আজকে সমগ্র বাংলাদেশে আমরা ব্রডব্যান্ড ও ইন্টারনেট চালু করেছি। বিএনপির সময় একজন মন্ত্রী ছিল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চট্টগ্রামেরই লোক। সে একটা মোবাইল ফোনের কোম্পানি খুলেছিল। একটা মোবাইল ফোন কিনতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাগত, আর ১ মিনিট ফোন করতে ১০ টাকা লাগত। ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যেত না। আওয়ামী লীগ সরকার এসে এই মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তিনি বলেন, সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড মেরেছিল। ছাত্রলীগ নেতা তুষারকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা র?্যালি করতে গিয়েছিলাম, সেখানে আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা করল। সেই হামলায় আমাদের আইভি রহমান মারা গেছে। মোট ২২ জন নেতা মারা গিয়েছিল সেদিন। মানবঢাল তৈরি করে আমার নেতা-কর্মীরা আমাকে বাঁচিয়েছিল। সেদিন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ১৩টা গ্রেনেড মারা হয়েছিল। আমি হয়তো বেঁচে নাও থাকতে পারতাম।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে, ব্যাংকে টাকা নেই। যারা টাকা তুলতে গেছে সবাই তো টাকা তুলতে পেরেছে। কেউ কি ফেরত এসেছে। ব্যাংকে টাকা রাখবেন না, কোথায় রাখবেন। ঘরে এনে রাখলে সেই টাকা তো চোরেও নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, গুজব রটিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। মানুষের সর্বনাশ করা বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের কাজ। সরকারপ্রধান আক্ষেপ করে বলেন, আমরা দেশকে ডিজিটাল করলাম, আর ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দয়া করে কেউ গুজবে কান দেবেন না। চিলে কান নিয়ে গেছে শুনেই দৌড়াবেন না, কান আছে কি না সেটা দেখবেন। ওরা মিথ্যা কথা বলে, এটা ওদের অভ্যাস। তিনি বলেন, আমরা যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি, রিজার্ভ কত ছিল ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা কষ্ট করে রিজার্ভ বাড়ালাম। গ্যাস বেচার মুচলেকা দিয়ে ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসে কীভাবে মানুষ খুন করেছে। চট্টগ্রামে আমাদের এমন কোনো নেতা-কর্মী নাই যাদের ওপর হামলা করেনি। তাদের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। হত্যা তারা ভালো করতে পারে। এটাই করে গেছে তারা। তিনি বলেন, আমরা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসি তখন মাত্র ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ ছিল। সেটাকে ৪৮ বিলিয়নে নিয়েছিলাম। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে বিনা পয়সায় কাউকে করোনার ভ্যাকসিন দেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে, আমি দিয়েছি। রিজার্ভের টাকা থেকে নগদ টাকায় কিনে। বিনা পয়সায় মানুষকে খাবার দিয়েছি। বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। শ্রমিক ও কৃষকদের হাতে টাকা পৌঁছে দিয়েছি। আমরা ওষুধ, ভ্যাকসিন ও সিরিঞ্জ কিনেছি। স্পেশাল প্লেন পাঠিয়ে এগুলো এনেছি। আমেরিকা, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে কেউই বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয় না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বাজেট কত ছিল ৬৪ হাজার কোটি টাকা। আমরা এবার ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। আমরা সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। আমরা ঘর করে দিচ্ছি। ৩৫ লাখ মানুষকে আমরা ঘর করে দিচ্ছি বিনা পয়সায়। তিনি বলেন, এই পার্বত্য চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান কী অবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছিল, সেখানে প্রতিনিয়ত সংঘাত হতো। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা সেখানে শান্তিচুক্তি করি। মাত্র কয়েক দিন আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪৫টি রাস্তা আর সারা বাংলাদেশে একসঙ্গে ১০০টি সেতু আমরা উদ্বোধন করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকার আছে, এই আইন জাতির পিতা করে গেছেন। কিন্তু বিএনপি এই আইন ও অধিকার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ কেন নেয়নি। তিনি বলেন, জিয়ার জন্ম কলকাতায়, আর পড়াশোনা করেছে করাচিতে। সেখান থেকে কমিশনে সেনাবাহিনীতে ঢুকে পোস্টিংয়ে বাংলাদেশে আসে। একটা তো ম্যাট্রিক ফেল, আরেকটা এইট পাস, আরেকটা কোনোমতে ইন্টার পাস। সমুদ্রসীমা আইন কী, তারা জানবে কী করে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেই সমুদ্রসীমা জয় করেছি। আজ সেগুলো আমাদের কাজে লাগবে। আমাদের অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি। তিনি বলেন,?১৯৭৫ সালের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের কারণেই বাংলাদেশ সামনের দিকে এগোতে পারেনি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখন দেশের উন্নয়ন হয়। আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। দেশে এখন গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ নিয়ে কিছুদিন কষ্ট হয়েছিল। ভবিষ্যতে আর হবে না ইনশাল্লাহ। তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ, সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আপনারা জানেন না, এই শীতকালে ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কী অবস্থা। সেসব দেশের মানুষ গরম পানি পাচ্ছে না। তারা রুম হিট করতে পারছে না। এক রুমের মধ্যে সব পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে। দোকানে গেলে জিনিস কিনতে পারে না। হয়তো এক প্যাকেট জিনিসের বেশি একটি পরিবার কিনতে পারবে না। এমন অবস্থা তাদের। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে এই অবস্থা হবে না। আমরা মানুষের সব রকম সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখব। কিন্তু আপনাদের সহযোগিতা চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনো পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে মজবুত। বিশ্বব্যাপী এখন খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের অভাব। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সংবিধান সংশোধনের দিবাস্বপ্ন ভুলে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভুলে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর হবে না। তিনি বলেন, লন্ডন ও দুবাই থেকে ফখরুল সাহেবের কাছে টাকা আসে। সেই টাকার বস্তা নিয়ে তিনি সমাবেশ করতে যান। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে সৎ রাজনীতিক, জনপ্রিয় নেতা, দক্ষ প্রশাসক, সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। যিনি মৃত্যুর মিছিলের ওপর দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গান, যিনি ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা ওড়ান, তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা। শেখ হাসিনা সাফল্যের সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করেছেন। তিনি বাংলাদেশের আজকের ক্রাইসিসের ট্রাবল শুটার।

যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা : পলোগ্রাউন্ড ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভা থেকে চট্টগ্রামে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি ৪টি উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলো হলো, জেলার ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, সন্দ্বীপ উপজেলার ৭২ নম্বর পোল্ডারের ভাঙন প্রবণ এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প ও বাঁশখালী উপজেলার ৬৪/১এ, ৬৪/১বি এবং ৬৪/১সি পোল্ডারের সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্প (২য় সংশোধিত), কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে সীতাকুন্ড টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফটিকছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রাউজান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কোতোয়ালি থানাধীন দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসার একটি ৬ তলা ভবন, সীতাকুন্ড টেকনিক্যাল স্কুলে একটি ৫ তলা ভবন ও একটি ৪ তলা প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার্কশপ, একতলা সার্ভিস এরিয়া ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণসহ ভবন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে কোতোয়ালি থানাধীন গুল-এ জার বেগম সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন, কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ১০ তলা একাডেমিক ভবন, কুসুমকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন, পূর্ব বাকলিয়া সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন, পাঁচলাইশ থানাধীন বন গবেষণাগার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন, বোয়ালমারী উপজেলাধীন হাজী মোহাম্মদ জানে আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন, পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন, সন্দ্বীপের সন্তোষপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন এবং ডবলমুরিং থানাধীন সরকারি সিটি কলেজে ১০ তলা একাডেমিক ভবন, পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবন সম্প্রসারণ, সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের লালদীঘি মাঠের ৬ দফা মঞ্চ নির্মাণসহ সংস্কার কাজ এবং খুলশী থানাধীন সিএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনের সম্প্রসারণ। 

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলো হলো, মিরসরাইয়ে হিংগুলি ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং লোহাগড়ায় চুনতি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিটাক চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নারী হোস্টেল নির্মাণকাজ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে নাসিরাবাদ শিক্ষানবিস প্রশিক্ষণ দফতর সংস্কার ও আধুনিকায়ন কাজ।

উদ্বোধনের তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ানহাটে হর্টিকালচার সেন্টারে একটি প্রশিক্ষণ ও অফিস, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন (প্রতিটি ৫০০০ বিএইচপি/ ৭০ টন বোলার্ড পুল) টাগবোট সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্প ও ‘চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ  শীর্ষক প্রকল্প।

এসব প্রকল্পের বাইরে আরও চারটি প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেগুলো হচ্ছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ, আনোয়ারায় বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির আধুনিকীকরণ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান স্থাপন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে চট্টগ্রামস্থ বিপিসি ভবন নির্মাণ।

সর্বশেষ খবর