সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

যৌথবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

যৌথবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আকাশ

আজ ৫ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলা ও ভারতীয় বিমানবাহিনীর ক্রমাগত বোমা হামলায় তছনছ হয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনীর বেশকিছু শক্তিশালী ঘাঁটি। হানাদারদের অধিকাংশ বিমান ঘাঁটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের আকাশ দখলে নেয় যৌথবাহিনী। এদিন দিল্লিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব কে বি লাল বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ। আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাজ করে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করব।’ ৫ ডিসেম্বর ভারতের বিমানবাহিনী তেজগাঁও ও কুর্মিটোলাতেই ফেলে ৫০ টনের মতো বোমা। এতে হানাদারদের ৯০টি অস্ত্রবাহী ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেরুদন্ড ভেঙে যায় হানাদার বাহিনীর। বিজয়ের খবর আসতে থাকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। কুড়িগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, মৌলভীবাজারের জুড়ী, সিলেটের করিমগঞ্জ, মুন্সীনগরসহ দেশের বেশকিছু এলাকা এদিন হানাদারমুক্ত হয়।  যৌথবাহিনী এই দিনে কুমিল্লা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানি ঘাঁটি দখল করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের উন্মুক্ত আকাশে যৌথবাহিনীর যুদ্ধ বিমানগুলোকে উড়তে দেখা যায়। মুক্তিকামী মানুষ বাড়ির ছাড়ে উঠে হাত নেড়ে স্বাগত জানায় বিমানগুলোকে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও ৫ ডিসেম্বর ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশবিষয়ক প্রশ্নে যুদ্ধবিরতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ভারত ও পাকিস্তানের সেনা অপসারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোয় বাতিল হয়ে যায়। ভেটো দেয় পোল্যান্ডও। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১১টি দেশ। ভোটে অংশ নেয়নি চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। যুদ্ধে কোণঠাসা পাকিস্তান আশা করেছিল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলে তারা বাংলাদেশের মাটিতে নিরাপদে থাকতে পারবে আরও দীর্ঘদিন। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব বাতিল হওয়ায় সেই আশা ভঙ্গ হয়ে যায়। ৫ ডিসেম্বর বিমান হামলার পাশাপাশি মিত্রবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট স্থলপথে এগিয়ে আসে। মিত্রবাহিনী ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নাটোর, রংপুর, যশোর ও রাজশাহীর সড়কপথের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জায়গায় জায়গায় অবস্থান নেয় তারা। যশোরের নোয়াপাড়া থেকে লেফটেন্যান্ট এস এম খালেদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একটি দল খাইরাই স্কুলে অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালালে তারা পালিয়ে  খাইরাই শহরে প্রবেশ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়াতে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশনের মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে হানাদার বাহিনী। তাদের কিছু সেনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে যায়। আখাউড়া দখলের পর যৌথবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী সিলেটের করিমগঞ্জ দখল করে মুন্সীনগরের দিকে এগিয়ে যায়। এদিন মুন্সীনগরও দখল করে মুক্তিবাহিনী। ঝিনাইদহের উত্তর ও পশ্চিমে অবস্থানরত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় ভারতীয় চতুর্থ ও নবম ডিভিশন। এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যশোর সড়কের পাশে অবস্থান নেয়। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে যশোর-কুষ্টিয়া রেলওয়ে জংশন দখল করে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় মুক্তিবাহিনী। খুলনার পাইকগাছার রাজাকার ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীর হামলায় প্রায় ১০০ রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর ৬ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধারা ধরলা নদী অতিক্রম করে কুড়িগ্রাম দখল করে। এ সময় হানাদার বাহিনী  কুড়িগ্রাম থেকে পালিয়ে লালমনিরহাটের দিকে চলে যায়।

সর্বশেষ খবর