সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পুলিশের অভিযানে শতাধিক আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে বিএনপির ডাকা গণসমাবেশের আগেই রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়। এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতি রাতেই পুলিশ কড়া নাড়ছে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দরজায়। পুলিশ বলছে, কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী হিসেবে নয়, পেন্ডিং মামলার আসামিদেরই   গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। এটা তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে সাধারণ মানুষের ঢল দেখেই রাজধানীতে এমনটা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, তিন মাস ধরে ডিএমপি সদর দফতর থেকেই তালিকা করতে সবগুলো বিভাগের উপকমিশনারদের একটি ফর্দ পাঠানো হয়। তথ্যপ্রযুক্তি, স্থানীয় সোর্স ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় সেই ফর্দে দেওয়া নির্দিষ্ট ছকে তথ্য সংযোজন করে পুনরায় ডিএমপি সদর দফতরে পাঠানো হয়। ডিএমপি সদর দফতর নানা বিচার-বিশ্লেষণ শেষে তৈরি করে তিনটি তালিকা। সে অনুসারেই চলছে অভিযান। শনিবার রাতেও রাজধানীর গুলশান ও মতিঝিল এলাকায় ব্লক রেইড দিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ। রবিবার ভোর পর্যন্ত কেবল রাজধানীতেই বিশেষ অভিযানে ৪৭২ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এর বাইরে ৩৫৮টি মামলায় ১ হাজার ৩৫৬ জনকে সারা দেশে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সমাবেশের আগে সমাবেশস্থলে এসে বিএনপি নেতা-কর্মীদের জড়ো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সে রকম কিছু করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

তিনি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ রয়েছে। সেখানে অনেক পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। কোনো অসাধু চক্র, মানে থার্ড পার্টি কোনো ধরনের সমস্যা যেন না করতে না পারে সে জন্য আমরা কাজ করছি। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে কি না, সে বিষয়েও আগাম তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ এদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকাতে ইতোমধ্যে তাদের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার শুরু করেছে পুলিশ। গত তিন দিনে সারা দেশে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের ৭৭৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঢাকা থেকে। নেতা-কর্মীদের বাসায় পুলিশ হানা দিচ্ছে। কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। বর্তমানে রাজধানীর দিকে বিশেষ নজর দিলেও দু-এক দিনের মধ্যে অভিযান শুরু হবে ঢাকার আশপাশের জেলায়। তবে ডিএমপির একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর ঘিরে একাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। এরা অনেক সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। এ ছাড়া বিএনপিও তাদের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আনার চেষ্টা করছে। জামায়াত-শিবিরও তাদের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত রাখছে। জানা গেছে, বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে ঢাকার বাইরে থেকে কোনো ‘বহিরাগত’ যাতে আবাসিক হোটেল ও মেসগুলোয় উঠতে না পারে, সে জন্য তল্লাশি চালাবে পুলিশ। অকারণে ঢাকার বাইরের কোনো বাসিন্দাকে ঢাকায় অবস্থান করতেও দেওয়া হবে না। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও অভিযান চালানো হবে। তবে এরই মধ্যে শনিবার থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরুর বিষয়টি গত সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ডিএমপি সদর দফতর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আছে তারা রাজধানীতে অবস্থান করার চেষ্টা করবে। একটি মহল বিএনপিকে এমন প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে। তাই ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে ডিএমপি প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে।’ সূত্র বলছে, বিএনপির ঢাকার এ গণসমাবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। একাধিক সংস্থা এ নিয়ে কাজ করছে। বিএনপি ও জামায়াতের ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুরনো রাজনৈতিক মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, বছরের বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে ডিএমপির বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। এটি একটি নিয়মিত কার্যক্রম। বিএনপির সমাবেশ নিয়ে অভিযানের বিষয়টি সত্য নয়। পুলিশ সব সময়ই ওয়ারেন্ট তামিলের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়।

সর্বশেষ খবর