রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নৌকা ভাড়া না দেওয়ার দাবি তৃণমূল নেতাদের

দলের জন্য কেউ কেউ নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন, আর কেউ কেউ দল বিক্রি করে খাচ্ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা ভাড়া না দিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন দলের তৃণমূল নেতারা। গতকাল বিকালে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে (কাউন্সিল) জেলার নেতারা অনুরোধের সুরে এ দাবি জানান। কাউন্সিল অধিবেশনে বিভিন্ন জেলার নেতারা তাঁদের বক্তব্যে নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তাঁরা অনুযোগের সুরে বলেন, কেউ কেউ দল-অন্তঃপ্রাণ হিসেবে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন, আর কেউ কেউ দল বিক্রি করে খাচ্ছেন।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে রুদ্ধদ্বার এ কাউন্সিল অধিবেশন পরিচালনা করেন শেখ হাসিনা। এতে সিলেট বিভাগের পক্ষে আওয়ামী লীগের সিলেট জেলা সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, রংপুর বিভাগের পক্ষে ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি সাদেক কোরাইশী, ময়মনসিংহ বিভাগের পক্ষে জামালপুর জেলা সভাপতি বাকী বিল্লাহ, ঢাকা বিভাগের পক্ষে ফরিদপুর জেলা সভাপতি শামীম হক, রাজশাহী বিভাগের পক্ষে বগুড়া জেলা সভাপতি মুজিবুর রহমান মজনু, বরিশাল বিভাগের পক্ষে পটুয়াখালী জেলা সভাপতি কাজী আলমগীর, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী বক্তৃতা করেন।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) আপনার নেতৃত্বে সারা দেশে উন্নয়ন চলছে। কিন্তু সিলেটের বিশ্বনাথ এলাকা উন্নয়ন থেকে পেছনে। কারণ সেখানে আমাদের দলীয় এমপি নেই। এজন্য করজোড়ে অনুরোধ করছি, আগামী নির্বাচনে নৌকা যেন ভাড়া দেওয়া না হয়। আমরা নৌকার প্রার্থী চাই।’ সাবেক এই এমপি বলেন, ‘যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করব।’ তিনি বলেন, ‘সারা দেশে বিএনপির অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা চলছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের এ অপপ্রচার মোকাবিলা করতে হবে।’ সিলেট জেলায় দলীয় কোনো কোন্দল ও দলাদলি নেই বলে দাবি করেন তিনি।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান মজনু বলেন, ‘১৪ বছর দল ক্ষমতায়। আমরা দলকে বুকে লালন করে চলেছি। অনেকে আবার দল বিক্রি করে খাচ্ছি। আশা করব দলকে যারা লালন করেন, পালন করেন আগামী নির্বাচনে তাদের মূল্যায়ন করবেন। তা হলেই বগুড়ায় আমাদের আসন আরও বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এজন্য নতুন কমিটিকে আপনি একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেবেন।’

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও জয় বাংলা খুঁজে পাওয়া যায় না। সরকারি অনুষ্ঠানে জয় বাংলা স্লোগান লেখা হয় না। নিমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপা হয় না।’ তিনি বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছাপানোর প্রস্তাব করে বলেন, ‘এ ছবি দেখলে আমরা শান্তি পাব। শান্তিতে ঘুমাতে পারব।’ অবশ্য প্রধানমন্ত্রী তাতে আপত্তি জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘টাকায় একমাত্র জাতির পিতার ছবিই থাকবে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কোরাইশী বলেন, ‘মিথ্যা (মির্জা) আলমগীরের নির্বাচনী আসন ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো অবস্থান নেই। সেখানে পায়ের নিচে তার মাটি নেই। তিনি ঢাকায় এসে সারাক্ষণ মিথ্যা কথা বলে বড় নেতা হিসেবে নিজেকে প্রচার করছেন। তিনটি নির্বাচনে তাকে আমরা পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছি। আগামী নির্বাচনেও গতবারের চেয়ে বেশি ভোটে পরাজিত করে আপনার হাতে নৌকা তুলে দিতে সক্ষম হব।’ সাদেক বলেন, ‘আমাদের দলের ভিতরকার যে সমস্যাগুলো রয়েছে নিজেরা বসে মিটিয়ে ফেলে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, ‘দেশি-বিদেশি চক্রের প্রচার সেল যতটা শক্ত, আমাদের প্রচার সেল ততটা শক্ত নয়। সরকারের উন্নয়ন প্রতিটি ওয়ার্ড-ইউনিয়নে পৌঁছে দিতে পারলে বিনষ্টকারীদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যাবে।’

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, ‘নেত্রী, আপনার বিকল্প আপনি নিজেই। পটুয়াখালী এখন আর খালি নেই, পটুয়াখালী ভরা। পটুয়াখালীর চারটি আসন আপনার নিজের।’ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ছাড়া বাঙালির বিকল্প নেই।’

সর্বশেষ খবর