রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
নতুন বছর নতুন প্রত্যাশা

বিকশিত হোক তরুণরা

------ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

বিকশিত হোক তরুণরা

কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, ২০২৩ সালে তরুণরা আরও বিকশিত হোক, তাদের মেধার প্রকাশ চারদিকে  ছড়িয়ে পড়ুক। এ বছর আমি সুখী, সংঘর্ষ ও হানাহানিমুক্ত একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই। যেখানে নিরক্ষতা এবং শ্রেণিগত, বিত্তগত ও শিক্ষাগত বৈষম্য থাকবে না। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে শ্রমের মর্যাদা দেওয়া হবে। যেখানে দুর্নীতি ক্রমাগতভাবে পেছনের ইতিহাস হয়ে যাবে। যেখানে অপশাসন থাকবে না, আইনের শাসন থাকবে এমন এক বাংলাদেশ আমি চাই। এই প্রেক্ষাপটকে আরও বিস্তৃত করলে বলা যায়, দেশে গণতন্ত্র সচল থাকবে এবং সব দল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐকমত্য পোষণ করবে। আমাদের একাত্তরের ইতিহাস সবচেয়ে গৌরবের ইতিহাস। সেখানে অগৌরবের ঘটনা ঘটিয়েছিল কিছু মানুষ। তারা পাকিস্তানিদের পক্ষে স্বজাতিকে হত্যা করেছিল। নারীদের সম্ভ্রম হারাতে তারা সক্রিয় সাহায্য করেছিল। এটি ছিল আমাদের অগৌরবের ঘটনা। যারা এই অগৌরবের ঘটনা ঘটিয়েছিল তারা এখনো বাংলাদেশ থেকে চলে যায়নি। তারা শক্তি সঞ্চার করছে। দেখা যাচ্ছে এখন যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এতে ওদের একটা বড় ভূমিকা আছে। এটি আমাকে খুব কষ্ট দেয়। আমি মনে করি ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা বিচারগুলো পরিষ্কার হওয়া উচিত। ২০২৩ সালে এই ন্যায়-অন্যায় বিচারে ইতিহাসে কারা নায়ক এবং কারা ভিলেন ছিল তা যেন আমরা জানতে পারি। এটা যেন ভুলে না যাই। এতে ২০২৩ এর বছর শেষে এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে যে নির্বাচন হবে সেখানে যেন এই বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়। সৈয়দ মনজুুরুল ইসলাম বলেন, আমি চাই বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা উন্নত হবে। প্রত্যেকের ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে। নিজের ভোট মানুষ নিজেই দিতে পারবে। এই ভোটের প্রতিফলনও ভোটাররা দেখতে পারবেন। যে কোনো নির্বাচন, তা ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত হোক তা যেন উৎসবের একটি বিষয় হয়। সেখানে প্রাণহানির মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা না ঘটে। এই শিক্ষাবিদ বলেন, আমি চাই আমাদের কৃষক-শ্রমিকের শ্রমের মূল্য যেন মিটিয়ে দেওয়া হয়। পোশাককর্মীরা যেন তাদের নায্য মজুরি পান এবং বোনাসের জন্য যেন তাদের রাস্তায় দাঁড়াতে না হয়। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেন প্রত্যেকেই কাজ করেন। দিনের শেষে এই শ্রমিকরা যেন হাসিমুখে বাড়ি ফিরতে পারেন। তিন ধরনের মানুষের হাত ধরেই আমাদের দেশটি চলছে। সবকিছুর কেন্দ্রেই আছে কৃষক। কৃষকের কৃষি উৎপাদন দিয়ে আমাদের জীবনযাত্রা চলছে। কিছু কৃষিপণ্য দেশের বাইরে রপ্তানি করা হচ্ছে। কৃষক তিন বেলা খাবার দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। আবার কৃষকের কন্যারা এসেছেন আমাদের গার্মেন্ট সেক্টরে। তারা এই খাতে আসায় একদিকে আমাদের শিল্প সচল হলো। আমাদের রপ্তানি পণ্যের উল্লেখযোগ্যই তৈরি পোশাক খাত থেকে আসছে। অনেক পুরুষ এখন এ খাতে কাজ করছে। তারাও কৃষকের সন্তান। আর কৃষকের আরেক সন্তান যাচ্ছে দেশের বাইরে। তারা বিদেশে গিয়ে পরিশ্রম করে আমাদের জন্য রেমিট্যান্স তৈরি করছে। অথচ আমরা লুটপাট করছি। যে ব্যাংকে তাদের টাকা তথা সাধারণ মানুষের টাকা-পয়সা নিশ্চিন্তে থাকার কথা তা থাকছে না। যারা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করছে তারা সেই টাকা লুটপাট করছে। এই পাচার ঠেকাতে আমাদের এত আইন-আদালত থাকার পরও তারা অসহায়। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা বিষয়টি যেন বন্ধ হয়। যারা এই লুটপাটে জড়িত তারা যেন জবাবদিহিতার মধ্যে পড়ে এবং তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হয়। আবার যারা সৎকাজ করে তারা যেন প্রশংসিত হয়। যারা অপরাধ করে তারা যেন শাস্তির সম্মুখীন হয়। এই সরল প্রত্যাশা আমি প্রতি বছরই করে আসছি। এ ছাড়া খেলাধুলায় জাতি আরও এগিয়ে যাক। বাংলাদেশের পতাকা ওপরে তোলার জন্য আমাদের যতগুলো সম্ভাবনা প্রয়োজন হবে তার সবকটিতেই যেন আমরা সফল হই। সারা বছর যেন নানা অঙ্গনে বাংলাদেশের পতাকা আকাশে তুলে ধরতে পারি।  তিনি বলেন, মানুষ মানুষকে যদি ভালোবাসে তাহলে সেটিই হবে সবচেয়ে বড় পাওয়া। কেউ যদি তার প্রতিবেশীকে ভালোবাসে তাহলে তার প্রতিবেশীও তাকে ভালোবাসবে। আর যদি প্রতিবেশীর সম্পদে সে হাত দেয় তাহলে সেও তার সম্পদে হাত দেওয়ার চেষ্টা করবে। এরকম দুষ্টচক্রে যেন আমরা আটকে না থাকি। ২০২৩ সালে এই চক্রটি ভেঙে আমরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে শিখি। অকারণ সমালোচনা ও অশ্রাব্য ভাষার ব্যবহার যেন আমরা বন্ধ করি। এ বছর নারী ও শিশুর প্রতি সম্মান যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিকার যেন আরও প্রতিষ্ঠা পায় এবং নারীর পথ আগলে না রেখে তাকে যেন সমাজ সব ক্ষেত্রে সহায়তা করে। এ বছরটি শিশুদের জন্য যেন অত্যন্ত ইতিবাচক একটি বছর হয়। বাংলাদেশ পুরো পৃথিবীর কাছে একটি বার্তা পাঠাতে পারে। তা হচ্ছে আমরা প্রকৃত গণতান্ত্রিক, প্রকৃত ভদ্র, প্রাচীন সভ্যতা ধারণ করি, যে সভ্যতায় সবাই অংশগ্রহণ করছি যেখানে উপজাতি বলে কেউ নেই। তারা আমাদের মতোই একটি জাতি। তাদের আমরা জাতি হিসেবে সম্মান করব, উপজাতি হিসেবে নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর