রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
নতুন বছর নতুন প্রত্যাশা

ব্যাংকে আস্থার পরিবেশ জরুরি

------ ড. আতিউর রহমান

ব্যাংকে আস্থার পরিবেশ জরুরি

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ব্যাংকে সবসময় আস্থার পরিবেশ বিরাজ করতে হবে। ব্যাংকে আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ এটা বোঝাতে হবে। বলতে হবে আমানতকারী যখনই টাকা চাইবেন তখনই ফেরত পাবেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ড. আতিউর রহমান বলেন, দেশের সব ব্যাংক যেন নিয়মনীতি মোতাবেক মূলধন ভিত্তিটা মেনে চলে। বিভিন্ন ঝুঁকি চিহ্নিত করে এবং এ ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থ জমা রাখতে হয় ব্যাংকগুলোর। আমরা আশা করব ব্যাংকগুলো সেসব ঝুঁঁকি ব্যবস্থাপনা করবে এবং মানুষকে আশ্বস্ত করবে। আমানতকারীদেরকে জানাবে আমাদের কাছে আপনাদের যে টাকা আছে সেটা নিরাপদ। আপনারা সময়, সুযোগমতো যখন চাইবেন সেটা আমরা ফেরত দিব। আমরা বিনিয়োগও করব। এ রকম একটা আস্থার পরিবেশ সব সময় বিরাজও করতে হবে ব্যাংকে।

দেশের খ্যাতনামা এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আর্থিক খাত নিয়মনীতি ঠিকমতো মেনে চলছে কি-না। সুশাসন নিশ্চিত করতে পেরেছে কি-না। তার ওপর নির্ভর করবে আগামী বছরের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা। কারণ আর্থিক খাত মানুষের বিশ্বাসের ওপর চলে। সেটা যেন কোনো অবস্থাতেই ভেঙে না পড়ে। সে দিকে আমাদের সবার খেয়াল রাখতে হবে। এমনকি গণমাধ্যমকেও খেয়াল রাখা জরুরি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকার অনেক ক্ষেত্রে শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে। আর্থিক খাতের অ্যাসেট কোয়ালিটির আর অবক্ষয় হতে দেওয়া যাবে না। উন্নতি করতে হবে। মানুষ যে বিশ্বাস নিয়ে বিনিয়োগ করছে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে। সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, আগামী বছরটাও বিশ্ব অর্থনীতি এবং দেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি একেবারে স্থিতিশীল হয়ে যাবে, এটা আশা করা ঠিক হবে না। তাই সরকার অর্থবছরের শুরুতেই যে কৃচ্ছ্রতা শুরু করেছে, এগুলো আগামী বছরও অব্যাহত রাখতে হবে। প্রকল্পের গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরবর্তীতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে হবে। ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য সরকারকে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহও আরও বাড়াতে হবে নতুন বছরে।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ডলারের একচেঞ্জ রেট যেভাবে ওঠানামা করেছে সেটা আগামী বছর কমে আসবে। গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার এবং টাকার বিনিময় হারে অনেকবার পরিবর্তন এনেছে। এই পরিবর্তনের হারটা হয়তো অব্যাহত থাকবে। আমার ধারণা আগামীতে বাজারভিত্তিক ডলারের দামও নির্ধারণের দিকে আরও অগ্রসর হবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন হয়তো কিছুটা অবমূল্যায়ন হবে টাকার। তবে, একটা স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করবে। আমাদের রপ্তানি বাড়বে। আশা করছি রেমিট্যান্সও বাড়বে। তবে আমাদের নজর রাখতে আনুষ্ঠানিক বা বৈধপথে রেমিট্যান্স যেন বাড়ে। সার্বিকভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। যদিও অনানুষ্ঠানিক খাতে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। আমার ধারণা ঋণ ও আমানতের সুদের হার এবং পুঁজিবাজারের ফ্লোর প্রাইস বাজারের সিগন্যাল মেনে তারা পরিবর্তন করবেন। তার একটা ইতিবাচক প্রভাব আমাদের আর্থিক বাজারে পড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি শুধু নিজেদের সমস্যা ও সম্ভাবনার ওপর নির্ভরশীল নয়। বিশ্ব অর্থনীতির একটা বড় প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর পড়ছে। তবে ভিতরে এবং বাইরে কিছু ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতিও কমতে শুরু করেছে। যুদ্ধ যদি ভয়ানক রূপ না নেয়, তাহলে আন্তর্জাতিক যে চাপটা সেটা অনেকটা কমে আসবে আমাদের অর্থনীতির ওপর থেকে। বিশ্বব্যাপী কমোডিটি প্রাইস কমতে শুরু হয়েছে। যেমন এলএনজি, গ্যাস। এগুলোর দাম আগের অবস্থানে ফিরে আসছে। এমনকি গমের দামও কমে আসছে। ডালের দাম একটু বাড়তি আছে। আমার ধারণা সেটাও স্থিতিশীল হয়ে আসবে।

দেশেও কিছু ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। যেমন আমাদের আমন ধানের উৎপাদন খুব ভালো হয়েছে। আমরা যদি বোরোটা ঠিক মতো করতে পারি। জ্বালানি ও সার সহায়তা অব্যাহত রাখতে পারলে আমাদের খাদ্য সংকটও হবে না।

সরকারের যেসব বিনিয়োগ আছে, যেমন ট্রেজারি বন্ড, সঞ্চয়পত্র। এসব বিনিয়োগের ওপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অনেক বেশি। সরকারের যেহেতু অর্থের দরকার। তাই এগুলোকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করতে হবে। মানে আরও বেশি ট্রেজারি বন্ড ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। এ জন্য ট্রেজারি বন্ড এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি কার্যক্রম আরও সহজ করতে হবে। এতে সরকারকে অর্থের জন্য খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না। দীর্ঘ মেয়াদে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। ব্যাংকের সঞ্চয় সাধারণত এক বছর ছয় মাসের জন্য করা হয়। কিন্তু ট্রেজারি বন্ড ও সঞ্চয়পত্র দীর্ঘমেয়াদি। সঞ্চয়পত্রের দিকে নজর দিলে ম্যাক্র ইকোনমির স্থিতিশীলতা আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর