রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

এত কাজের পরও মন ভরে না কিছু লোকের : প্রধানমন্ত্রী

নতুন বছরে সম্প্রীতি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রত্যাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এত কাজের পরও মন ভরে না কিছু লোকের : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে বলেছেন, এত কাজ করার পরও কিছু লোকের মন ভরে না। তাতেও তারা বলবে আমরা নাকি কিছুই করি নাই। কিছুই করি নাই যারা বলে সেই শ্রেণিটা চোখ থাকতেও অন্ধ। তারা দেখবেই না। তাদের মাথার ভিতরে ‘নাই’ শব্দটা ঢুকে গেছে। আমরা ‘নাই’তে থাকতে চাই না। আমরা পারি, বাংলাদেশের মানুষ পারে। আমরা সেটাই প্রমাণ করতে চাই। নাই নাই শুনব না। আমরা করতে পারব, এটা করতে হবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বই তুলে দিয়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ ১ জানুয়ারি সারা দেশে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ। যেখানে প্রতিটি মানুষের প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকবে এবং দেশ বিশ্ব পরিমন্ডলে পিছিয়ে থাকবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা এবং লার্নিং যেমন ই-শিক্ষা, ই-স্বাস্থ্য, ই-ব্যবসা, ই-ইকোনমি, ই-গভর্ন্যান্স হবে প্রযুক্তিগত জ্ঞানভিত্তিক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, এরপর হবে স্যাটেলাইট-২। সেটাও আমরা করব। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপাঞ্চল থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই আমরা ব্রডব্যান্ড অনলাইনে কাজ করার প্রযুক্তি নিয়ে যাব। একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হবে। সে ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিচ্ছি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, বর্তমান সরকার ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ?যাপনের সময় উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কাজেই বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলার চোখে দেখতে পারে না। বাংলাদেশ বিশ্বে তার একটা স্থান করে নিয়েছে। আর ২০৪১-এর বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, যেটা হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। সরকারপ্রধান বলেন, করোনা, নানা ঝামেলা, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ- এসব কারণে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী কষ্ট, তার মধ্যেও কিন্তু আমরা শিশুদের কথা ভুলিনি। তাদের বই ছাপানোর খরচটা অন্য দিক থেকে আমরা সাশ্রয় করছি, বই ছাপানোর দিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি। পাশাপাশি কম্পিউটার শিক্ষা অর্থাৎ প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ছেলে-মেয়েরা কেন পিছিয়ে পড়ে থাকবে।

করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমার ঘর আমার স্কুল, অর্থাৎ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ- কাজেই ঘরে বসে পড়াশোনা চলে। কেউ যাতে পড়াশোনায় ফাঁকি দিতে না পারে সেই ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। সংসদ টিভি, বিটিভির মাধ্যমেও শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। আমি মনে করি, দেশের শিশুদের আন্তরিকতার সঙ্গে গড়ে তুলতে পারলে বিশ্বের কোনো শক্তি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ঠেকাতে পারবে না। শিক্ষা সম্প্রসারণে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কৃষি, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামী-আরবি, টেক্সটাইল, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও এরোস্পেস, বেসরকারি ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ সরকার করে দিয়েছে। বর্তমান সরকার চায় আকাশ গবেষণাটা করতেই হবে। এ সরকার চায় আমরা যেমন চাঁদে যেতে পারি তেমনি যুদ্ধজাহাজ এবং এরোপ্লেনও প্রস্তুত করবে দেশে। সেগুলো আমাদের ছেলে-মেয়েরা যাতে করতে পারে সে জন্য এ শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা যে এ দেশের মানুষকে নিরক্ষরতামুক্ত করবে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ’৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করে আবার নতুন করে শিক্ষা কমিশন গঠন করি। সাক্ষরতার হার বাড়াতে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করি। বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থাও সেখানে সংযুক্ত ছিল। তিনি বলেন, জনগণকে যদি দারিদ্র্যমুক্ত করতে হয় তাহলে শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কাজেই সমগ্র জাতিকে আমরা শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নিই। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। কারণ আমাদের পাঁচ বছরের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর তারা দেশকে আবার অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দেয়। এটা হলো বাস্তবতা। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আরেকটা অন্ধকার যুগ আমাদের জীবনে চলে আসে। ২০০৮-এর নির্বাচনে নৌকা মার্কায় মানুষ ভোট দেয়। তখন থেকে আমাদের আবার লক্ষ্য হয়, কীভাবে আমরা এ দেশের মানুষকে নিরক্ষরতামুক্ত করব এবং ২০১০ সাল থেকে আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করি।

আজ বই উৎসব : আজ রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে পাঠ্যবই উৎসব উদযাপন করবে। এবার ১ জানুয়ারি সারা দেশে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩ কোটি ৯১ লাখ ১২ হাজার ৩০০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। যার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ১৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হবে। ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সর্বমোট ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২১১ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিস্টীয় নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। নববর্ষ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ শুভেচ্ছা জানান। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন বছরে মানুষে-মানুষে সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও জোরদার হোক, সব সংকট দূরীভূত হোক। সব সংকীর্ণতা পরাভূত হোক এবং সবার জীবনে আসুক অনাবিল সুখ ও শান্তি। সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান। বাসস। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতির নিয়মেই নতুন বছর মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার করে এবং নতুন উদ্যমে সুন্দর আগামীর পথচলায় অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি বলেন, ২০২২ বাঙালি জাতির জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করি। ১৯৭২ সালে এশিয়ার প্রায় সবকটি দেশ, রাশিয়া, তৎকালীন সোভিয়েত ব্লকের অন্যান্য দেশ, ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগ দেশ, ফ্রান্স, কানাডা, গ্রেট ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অধিকাংশ স্বাধীন রাষ্ট্র নবীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয় এবং জনগণের কল্যাণ হয়। কারণ একমাত্র আওয়ামী লীগই স্বাধীনতার সুমহান আদর্শ ধারণ করে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে। আসুন আমরা দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি এবং ধর্মীয় উগ্রবাদসহ সন্ত্রাসবাদ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলি।

সর্বশেষ খবর