শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
জি২০-তে প্রধানমন্ত্রীর ছয় প্রস্তাব

মানবতার স্বার্থে বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতার স্বার্থে বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে হবে

মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে বলে প্রথম প্রস্তাবে উল্লেখ করে জি২০ জোটের সামনে ছয়টি প্রস্তাব রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিকে (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপট) বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।

গতকাল ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগদান করে তিনি এসব কথা বলেন।

এই গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই সম্মেলন বিশ্বজুড়ে তাদের সমকক্ষদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার এক অনন্য সুযোগ করে দেবে। বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের একটি দেশ, ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণার আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জি২০-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানাই। আসুন আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং একটি উন্নত বিশ্বের জন্য একসঙ্গে কাজ করি।

টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তার প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, একটি নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন যা এসডিজির সমান্তরালে সামগ্রিকভাবে বৈষম্যকে মোকাবিলা করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয়ত, স্বল্পোন্নত দেশ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়নের প্রয়োজন, তাদের উত্তরণের সময় এটি পূরণ করতে হবে। তার চতুর্থ প্রস্তাবে, তিনি নারীসহ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইডস’ সেতুবন্ধন রচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনিয়োগ করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা নিন যার জন্য অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর সমর্থন অত্যাবশ্যক, তিনি যোগ করেন। তিনি বলেন, পঞ্চমত, সব মানুষেরই ভালোভাবে জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। তিনি বলেন, বৈশ্বিক সম্প্রদায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যেন ভুলবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করুন। এখানে অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, থিংকট্যাংক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় পাঁচ দশক আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘মহান অর্থনৈতিক উত্থান’-এর মুখে একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জরুরি বোধ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জি২০ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারত সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জি২০ প্ল্যাটফরমকে আরও অর্থবহ করার জন্য তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। সরকারপ্রধান ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট’ আহ্বান করার জন্য এবং ‘মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন’বিষয়ক উদ্বোধনী নেতাদের অধিবেশনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক কভিড-১৯ মহামারি, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বৈশ্বিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব জনজীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সাহসী, দৃঢ় ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

গ্রুপ অব টোয়েন্টিতে (জি২০) রয়েছে- আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, রিপাবলিক অব কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সবার জন্য সামাজিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে স্বীকৃত। দেশের দারিদ্র্যের হার হ্রাসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। এক দশকে আমাদের মাথাপিছু আয় তিন গুণ হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সব ক্রাইটেরিয়া পূরণ করেছে বাংলাদেশ। আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আকাক্সক্ষার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে উন্নত অবকাঠামোর উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। আমরা চাই, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ। ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ, জলবায়ু সহিষ্ণু বদ্বীপ।

প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকায় মেট্রোরেল সার্ভিস চালু, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মাণসহ তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা উল্লেখ করেন।

সর্বশেষ খবর