দুই দিনের সফরে আগামীকাল ঢাকা আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। গতকাল শুরু করা নয়াদিল্লি সফর শেষে তিনি ঢাকায় আসছেন। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের কারণে ডোনাল্ড লু-এর সফর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে কূটনৈতিক অঙ্গনে। সফরে পররাষ্ট্র সচিবসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে রবিবার ঢাকা ত্যাগ করবেন ডোনাল্ড লু। সফর উপলক্ষে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেট সেক্রেটারি লু বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের নেতাদের সঙ্গে আমাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা সম্প্রসারণ করা বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জানবেন। দূতাবাস থেকে আরও জানানো হয়, লু ভারত সফরকালে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ফোরামে অংশ নেবেন। এ ছাড়াও তিনি ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার বিষয়ক সহযোগিতা কীভাবে আরও সম্প্রসারণ করা যায় সে নিয়ে ভারতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। দূতাবাস জানিয়েছে, ডোনাল্ড লু ফরেন সার্ভিস অফিসার হিসেবে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অধীনে কাজ করছেন। ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেট সেক্রেটারি হিসেবে যোগদান করেন। এই পদে দায়িত্ব লাভের আগে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু কিরগিজ প্রজাতন্ত্র এবং আলবেনিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইবোলা রেসপন্স-এর ডেপুটি কোঅর্ডিনেটর হিসেবে পশ্চিম আফ্রিকাতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতে ডেপুটি চিফ অব মিশন (ডিসিএম) (২০১০-২০১৩) ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (২০০৯-২০১০)-সহ যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আলবেনিয়ান, রাশিয়ান, জর্জিয়ান, আজারবাইজানি, উর্দু, হিন্দি ও পশ্চিম আফ্রিকার ক্রিও ভাষা জানেন। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিনকেনের পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভুটান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের সঙ্গেকার বিষয়াশয় দেখভাল করেন ডোনাল্ড লু। সর্বশেষ ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের শাহীনবাগের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে উদ্বেগও জানান এই কর্মকর্তা। ঢাকায় ডোনাল্ড লু পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাইডেন প্রশাসনের নীতিনির্ধারকদের সিরিজ সফরের গুরুত্ব পাচ্ছে ঢাকা। দেশটির সঙ্গে ঢাকার ঘনিষ্ঠতা ক্রমান্বয়েই বাড়ছে, যেটিকে শুধু এক নিষেধাজ্ঞায় ফেলে হিসেব করা ঠিক হবে না। বাইডেন প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা উভয় নীতিনির্ধারকের সঙ্গে বৈঠকে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পাশাপাশি শ্রম অধিকার, দরপত্র প্রতিযোগিতায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়গুলো আলোচনা হবে। এ ছাড়া র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, জিএসপি পুনর্বহাল, শান্তিরক্ষা ও প্রতিষ্ঠা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনায়।
