শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

খুনি গ্রেফতারে আলটিমেটাম

লক্ষ্মীপুরে গুলি করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

খুনি গ্রেফতারে আলটিমেটাম

লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত সাবেক যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামের জানাজা শেষে তাদের নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে সদর উপজেলার বশিকপুর ডিএসইউ কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে প্রথম ও দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে অশ্রুসিক্ত চোখে শেষ বিদায় জানান সর্বস্তরের মানুষ।

জানাজায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ অংশ নেন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জোড়া এ খুনের ঘটনার বিচার দাবি করেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এদিকে খুনিদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সদর উপজেলা যুবলীগ পশ্চিম শাখার নেতারা। হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্তও থানায় কোনো মামলার খবর পাওয়া যায়নি। যদিও খুনিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। জানা গেছে, সন্ত্রাসীদের ভয়ে ঘটনার ব্যাপারে এখন মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকেই। সরেজমিন নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারের নারী সদস্যরা প্রিয়জন হারিয়ে হতবিহ্বল অবস্থায় এলোমেলো পড়ে আছেন। গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দিয়ে ‘লাভ কী হবে’ এমন বিশ্বাসে বক্তব্য দিচ্ছেন না কেউ। তবে নোমানের বড় সন্তান নুহাদ, জেহাদী নামের কাউকে দায়ী করে তার বাবার হত্যার বিচার দাবি করেন। নোমানের ভাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জেহাদী ও তার বাহিনীকেই দায়ী করছেন। জানাজা নামাজ-পূর্ব বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে এ বাহিনী অচিরেই নির্মূল করার দাবি তোলেন তিনি।

এদিকে অপর নিহত রাকিবের বাবা রফিক উল্লাহ ও ভাই রুবেল হোসেন একই অভিযোগ করে হত্যাকাণ্ডের বিচার চান সরকারের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই ‘ওই নামটি’ উল্লেখ করে তার বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে জানান, বশিকপুরের মানুষ অস্বস্তিতে রয়েছেন। জানাজা-পূর্ব বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, আওয়ামী লীগ নেতা এম আলাউদ্দিন, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সাত্তার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটোয়ারী, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর পাটোয়ারী, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হাসান পলাশ।

নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম : নিহত দুই নেতা নোমান ও রাকিবের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেককেই অশ্রুসিক্ত নয়নে সহকর্মী হারানোর বেদনায় ব্যথিত অবস্থায় দেখা গেছে। লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ জানান, থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে, পরিবারের অভিযোগের অপেক্ষার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, খুনিদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল রাত পৌনে ১০টার দিকে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় সন্ত্রাসীরা যুবলীগ নেতা নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিবকে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মোবাইল নিয়ে যায় ঘাতকরা। গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থল গিয়ে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাদের পৃথক হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করেন। তারা মাথায় ও মুখে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন। নিহত নোমান সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি (নোমান) প্রস্তাবিত জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। অপর নিহত রাকিব বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা- একই ইউনিয়নের নন্দীগ্রামের রফিক উল্লাহর ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নিহত নোমানের স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান রয়েছে। অপর নিহত রাকিবের স্ত্রী ও সাত মাসের একটি শিশুসন্তান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর