শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মামলায় আটকা ৮৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ

তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আটকে গেছে বিভিন্ন ধরনের মামলায়। এর বেশির ভাগই অর্থ ঋণ ও সার্টিফিকেট মামলা। এ ছাড়া রিট করেও ঋণ পরিশোধ আটকে রাখা হয়েছে। আদালতে আটকে থাকা মামলাগুলোর মধে কোনো কোনোটি চলছে বছরের পর বছর। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেও এসব ঋণ আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ব্যাংকের টাকা আটকে থাকছে। এতে কমে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের সক্ষমতা। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ শেষে সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মামলাকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ২৫ হাজার ৮ কোটি, জনতা ব্যাংকের ২১ হাজার ৫৭৮ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১৩ হাজার ৫১২ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৮ হাজার ১১ কোটি, বিডিবিএলের ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ও বেসিক ব্যাংকের ১৪ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে এ ছয় ব্যাংকের আদালতের মামলায় আটকে থাকা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। মামলা কমিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণের অর্থ আদায়ের তাগিদ থাকলেও দেখা যাচ্ছে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মামলার সংখ্যা, বাড়ছে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ।

জানা গেছে, ভালোভাবে খোঁজখবর না নিয়ে ঋণ দেওয়ার কারণে অনেক সময় ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত পাওয়া যায় না। কোনো কোনো ঋণগ্রহীতা একই জামানত বারবার ভ্যালু অ্যাড করে অতিরিক্ত মূল্য দেখায়। আবার মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া দলিলপত্র ও ডকুমেন্ট দেখিয়েও ঋণ নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এরপর যখন ঋণ খেলাপি হয়ে যায়, তখন আদায় করতে গিয়ে ঋণের আসলও আদায় করা যায় না। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আবার ঋণ পরিশোধ না করার জন্য প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া ঘোষণা করে। আবার ঋণগ্রহীতা মারা গেলেও উত্তরাধিকার ঋণ পরিশোধ করতে চায় না। এসব কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলার সংখ্যা বাড়ছে।

অগ্রণী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। এর ওপর নতুন মামলা হচ্ছে। অনেক ঋণগ্রহীতা টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য আদালতে রিট করে টাকা আটকে রাখেন। এ কারণে মামলায় আটকা খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এটি শুধু সরকারি ব্যাংক নয়, বেসরকারি ব্যাংকেও একই ঘটনা ঘটছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর এই গবেষক।

সূত্র জানান, আদালতের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের অর্থ আদায় প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলাপ-আলোচনা অর্থাৎ বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর)-এর মাধ্যমে খেলাপি আদায়ে জোর দিচ্ছে। গত ১২ মে বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় বলেছে, ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শুধু মামলা না করে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর)-এর মাধ্যমে ঋণ আদায় করতে হবে। এজন্য একটি লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দিয়েছে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ স্থিতির ন্যূনতম ১ শতাংশ নগদ আদায় এডিআরের মাধ্যমে করতে হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতেও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জায়েদ বখত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনাটি সাম্প্রতিক কালের। এটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো তখনই মামলায় যায়, যখন গ্রাহক নানা অজুহাতে টাকা ফেরত দিতে চায় না। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ থাকলে ব্যাংক কখনো মামলায় যায় না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর