সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

৩০ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা পাওনা ২০ খেলাপির কাছে

সরকারি ব্যাংক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও অর্থ আদায় করতে পারছে না। অনাদায়ী ঋণের কিস্তি আদায় করতে তারা খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর এলসি করছে। ব্যবসা চালু রাখতে দিচ্ছে ব্যাংকিং সুবিধা। কিন্তু তাতেও পুরোনো ঋণের কিস্তি আদায় হচ্ছে না টার্গেট অনুযায়ী। বর্তমান পরিস্থিতিতে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি বলে মনে করছেন ব্যাংকিং সেক্টরের নীতি-নির্ধারকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে সরকারি ছয় ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকে টাকা আদায়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আইনি জটিলতা। খেলাপি গ্রাহকদের বড় অংশ মামলা-মোকাদ্দমা করে টাকা আটকে রাখছে। এর ফলে আমরা প্রতিবছর খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায়ে যে টার্গেট গ্রহণ করছি, সে টার্গেট পূরণ হচ্ছে না। সূত্র জানায়, সরকারি ছয় ব্যাংককে চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকে ২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা আদায়ের টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে আদায় হয়েছে সাকল্যে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ২০ লাখ, জনতা ৪৫ লাখ, অগ্রণী ২ কোটি, রূপালী ৩ কোটি ৪০ লাখ, বিডিবিএল ১ কোটি ৭৫ লাখ এবং বেসিক ব্যাংক ১ কোটি টাকার মতো আদায় করতে পেরেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে সোনালী ব্যাংকের ৫ হাজার ৮১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৯ হাজার ৯৭ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, বিডিবিএলের ৫৪৫ কোটি টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা পাওনা ছিল। এর মধ্যে গত বছর ২৫৭ কোটি টাকা আদায় করতে সমর্থ হয়েছিল সরকারি ব্যাংকগুলো। তার আগের বছর ২০২২ সালে আদায় হয়েছিল ২৪৩ কোটি টাকা। এ বছর আদায়ের হার এত কম যে, বছর শেষে তা ১০০ কোটি হয় কি না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে আমরা মামলা-মোকাদ্দমার বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে ঋণ আদায়ের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা চালু রেখে যেন অনাদায়ী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা যায়, সে জন্য তাদের ব্যাংকিং সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। তারা ১০০ টাকা কিস্তি পরিশোধ করলে আমরা হয়তো ৮০ থেকে ৯০ টাকার এলসি সুবিধা দিচ্ছি, যাতে করে এটিও খেলাপি হলে নতুন করে লোকসান না হয়। এতসব প্রচেষ্টার পরও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না।

খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি- এমন মন্তব্য করে ড. জায়েদ বখত বলেন, চট্টগ্রামে যেমন এক খেলাপি গ্রহীতার পাসপোর্ট আটক করা হয়েছিল; এরপর তিনি বেশ কিছু টাকা দিয়েছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের চাপ সৃষ্টি হলে খেলাপি আদায় সম্ভব। 

কারা শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে ঋণ ও আদায়ের পরিমাণ উল্লেখ থাকলেও সরকারি ছয় ব্যাংকের এই শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ নেই। প্রতিবেদনের নোটে বলা হয়েছে, ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রহীতার তালিকা সংযুক্ত করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদে যে শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রহীতার তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাদের বেশির ভাগই সরকারি ব্যাংকের শীর্ষ খেলাপির তালিকায় রয়েছেন। সংসদে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রহীতা হলো : সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়াড, রিমেক্স ফুটওয়্যার, রাইজিং স্টিল কোম্পানি, মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদাস, রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার, ক্রিসেন্ট লেদার্স প্রডাক্ট,  কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস, সাদ মুসা ফেব্রিক্স, বি আর স্পিনিং মিলস, এসএ অয়েল রিফাইনারি, মাইশা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট, রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল, সামান্নাজ সুপার অয়েল, মানহা প্রিকাস্ট টেকনোলজি, আশিয়ান এডুকেশন, এসএম স্টিল রি-রোলিং মিলস অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, এহসান স্টিল রি-রোলিং এবং সিদ্দিকী ট্রেডার্স।

সর্বশেষ খবর