স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ১৪৭ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন।
গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সহিংসতায় মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কখনো বলা হচ্ছে ৫০০, কখনো বলা হচ্ছে ১০০০। সে জন্য আমাদের কাছে যে হিসাব সেটি আমরা দিলাম। এখানে ছাত্র কতজন নিহত সেটি এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। আরও যাচাই করে সে তথ্য জানানো হবে। সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা নির্ণয়ে আরও অনুসন্ধান চলছে। আরও যাচাইবাছাই করছি। আরও যদি খবর পাই তবে তা আমরা অন্তর্ভুক্ত করব। নিহতদের মধ্যে কতজন নারী, কতজন পুরুষ কিংবা কোন পেশার মানুষ কতজন সেটিও নির্ধারণের কার্যক্রম চলছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এ ধরনের হত্যাকান্ড, বর্বরোচিত আক্রমণ পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশ দেখেছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা এও দেখেছি তারা একটা হসপিটাল পর্যন্ত রেডি রেখেছে, কেউ ইট কিংবা লাঠির আঘাতে আহত হলে, তাদের সেখানে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আবার তাদের ভালো করে আরেক দল এসেছে। আগে থেকে একটা প্ল্যান ওয়েতে আক্রমণগুলো করেছে। তিনি বলেন, পুলিশ যখন পারছিল না, তখন সেনাবাহিনীকে ডাকা হয় এবং কারফিউ জারি করা হয়। ক্রমে দেশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ক্রমেই আমরা সান্ধ্য আইন শিথিল করছি। যখন আরও স্বাভাবিক হয়ে যাবে তখন আমরা কারফিউ উঠাতে সক্ষম হব।
এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে কখনোই গুলি করেনি। অনেক ধৈর্য ধরে পরে পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের পুলিশ ট্রেনিং দেওয়া পুলিশ। তাদের অযথা গুলি করার দরকার হয় না। প্রতিটি গুলির হিসাব তাকে দিতে হয়। প্রতিটি মৃত্যুর জবাবদিহি তাকে করতে হয়। পুলিশ অযথা গুলি করেছে, শিশুকে মেরে ফেলেছে। এগুলো সম্পূর্ণই গুজব, অপপ্রচার। ওই আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলার ঘটনায় কয়েক হাজার গ্রেপ্তারের খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। ভিডিও দেখে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জড়তিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান দোষী ব্যক্তিদের আমরা অবশ্যই শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। আমরা কাউকে এখানে ছাড় দেব না।
ডিবির হেফাজতে নেওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়কের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা নিজেরাই বলছিলেন, তারা ঝুঁকিতে আছেন। তাই তাদের নিরাপত্তার জন্যই নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, কোন কোন রাজনৈতিক দল বা কারা এ ধরনের প্ররোচনা দিয়েছে; কারণ, পরবর্তীতে তা সহিংস রূপ নিল। তাদের এখনো অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) করা হয়নি। পুলিশ যদি মনে করে তারা ঝুঁকিমুক্ত, তখনই ছেড়ে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকালে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসারত অবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। পরে শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহকেও গোয়েন্দা পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে। গতকাল আরেক সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।