দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সামনে আরও ষড়যন্ত্র হতে পারে-এ বিষয়ে মন্ত্রী-সচিবদের আরও সতর্ক থাকতে নির্দেশ নিয়েছেন সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া কোটা আন্দোলন ঘিরে নিহতদের স্মরণে আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালন করা হবে। মন্ত্রিসভার একাধিক সূত্র জানান, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। বিশেষ করে এ আন্দোলনের ঘটনায় ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের যে ভূমিকা ছিল তা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার কথা বলছেন। সরকারের হাতে এ-সংক্রান্ত বেশ তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, ছবি-ভিডিও আছে। এসব যেন গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্র প্রচার হয় সেটি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, এদের ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। সে কারণে আরও সতর্ক থাকতে বলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা অপতথ্য, মিথ্যা তথ্য যাচ্ছে, সরকারিভাবে এসব কাউন্টার দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন। দেশবিদেশে ওই সত্য ঘটনাগুলো তুলে ধরতে বলেছেন। ধারাবাহিকভাবে সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবদের এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একাধিক সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ ক্ষতির তালিকা করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য জানান, নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যে সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আছে সেখানে ঘটনা তুলে ধরতে বলেছেন। উদাহরণ দিয়ে ওই সদস্য বলেন, যেমন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আইএলওর একটা কাজের সম্পর্ক আছে। এ রকম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডব্লিউটিওর আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। দলীয় কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অল্প একটু হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটা আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতি হয়েছিল, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। পরে এ নিয়ে আলোচনা হয়। সে আলোচনার ভিত্তিতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রবিবার এ ঘটনায় ১৪৭ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। তারপর আরও তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এখন ১৫০। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সাতটি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৬০টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৩৯টি। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৫ শতাংশ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈঠকে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ‘মহেশখালী-কুতুবদিয়া সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বিমান চলাচলের একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ছিল, সেটি ১৯৭৮ সালে করা। এখন দুই দেশ সম্মত হয়েছে যে, ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) তারা নতুন একটি ফরম্যাট তৈরি করেছে চুক্তির জন্য। সে ফরম্যাট অনুযায়ী দুই দেশ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সম্মত হয়েছে। শর্ত একই আছে, ফ্রিডমসহ যেটা আগেও ছিল। চুক্তিটা নতুন ফরম্যাটের জন্য শুধু অনুমোদন চাওয়া হয়েছে, মন্ত্রিসভায় সেটি অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া ভিসা ছাড়াই থাইল্যান্ড যেতে পারবেন বাংলাদেশের অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীরা। এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আগে এ সুবিধা ২৯ দেশের সঙ্গে ছিল, থাইল্যান্ড যুক্ত হওয়ায় এ নিয়ে আমাদের ৩০টি দেশ হলো।
কোটা সংস্কার নিয়ে নিহতদের স্মরণে শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্য নিহতদের স্মরণে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সময় নিহতদের স্মরণে কালো ব্যাজ ধারণ এবং মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া মন্দির-গির্জা-প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে কোটা আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতি হয়েছিল, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। পরে এ নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনার ভিত্তিতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ এবং মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রবিবার এ ঘটনায় ১৪৭ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। তারপর আরও তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এখন ১৫০।