ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব হত্যাকান্ড ঘটেছে, সেগুলোর জন্য নির্দেশদাতা হিসেবে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সম্ভব বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ওই সময়ে আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থানে সারা দেশে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে তা আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। গতকাল সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের সময় মিথ্যা ও হয়রানিমূলক যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু তা করা সম্ভব হয়নি। কারণ এসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য পুলিশের সহযোগিতা প্রয়োজন। গত কয়েকদিন পুলিশের অনেকের কাজে ফিরে আসার মতো পরিবেশ ছিল না, আস্থা ছিল না। এজন্য একটু সময় লাগছে। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দিনরাত কাজ করছেন। মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি শুধু আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও কাজ করতে হচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলন দমন করার জন্য যেসব ‘গণহত্যা ও গুলিবর্ষণ’ হয়েছে তার বিচারের জন্য তদন্ত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার প্রক্রিয়া চলছে। গণ আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু মামলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজপথে থাকা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, জনগণের বিভিন্ন গোষ্ঠী দাবি করেছেন-এটাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিচার করতে। আমরা সেটা খতিয়ে দেখছি। তিনি বলেন, আমাদের ১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট আছে (যেটা ২০০৯ ও ২০২৩ সালে সংশোধন হয়েছে)। ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসের প্রথম পাঁচ দিনে যেসব গণহত্যা হয়েছে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওই আইনের আওতায় গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের বিষয়ে ইতোমধ্যে ছোটখাটো গবেষণার মতো কাজ করা হয়েছে। গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি ওই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের এ আইনের আওতায় বিচার করা সম্ভব। আসিফ নজরুল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি ইনভেস্টিগেশন টিম ও একটি প্রসিকিউশন টিম আছে। এগুলোকে পুনর্গঠন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ গণহত্যার ইনভেস্টিগেশন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ থেকে আমাদের বারবার এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিচারে সত্যিকারের স্বচ্ছতা-নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের ইনভেস্টিগেশন টিম জাতিসংঘের সর্বাত্মক তত্ত্বাবধানে কাজ করবে। তিনি বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা তার কাছে সহযোগিতা চাইব। এ ছাড়া জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কনসার্ন এজেন্সির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই এটা শুরু করতে পারব। বিগত সময়ে যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেছে, তাদের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা জনগণের টাকা পাচার করেছে, দুর্নীতি করেছে, তাদের বিচার করা হবে। বিদ্যুৎ খাতের ইনডেমনিটি আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি আমার আওতাধীন নয়। তবুও আপনারা বলেছেন, আমি এ বিষয়ে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করব। আইন উপদেষ্টা জানান, সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ যেসব নিবর্তনমূলক আইন আছে, সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। এসব আইন বাতিল অথবা সংশোধন করা হবে। আসিফ নজরুল বলেন, আমরা বিচার বিভাগের সংস্কারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। অল্প সময়ের মধ্যে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়কে যে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম করতে হয়, সেটা সম্পন্ন করেছি। অতি দ্রুত সময়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। এ বিষয়ে সারা দেশ থেকে প্রশংসা পাচ্ছি। আমরা এমন একজন প্রধান বিচারপতি পেয়েছি যিনি অক্সফোর্ড থেকে পড়াশোনা করেছেন। পিএইচডি করেছেন। এই নিয়োগ থেকেই বোঝা যায় কোয়ালিটি ও ইন্টিগ্রিটির ওপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে সব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশে-বিদেশে অবস্থিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব বিবরণী আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা অধস্তন আদালতের পরিবেশ উন্নয়নের জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। নির্বাচন কমিশনও সংস্কার করা হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি জানান, নির্বাচন আইন সংশোধন করা হবে। ভোটাধিকার নিয়ে উপহাস করা হয়েছে। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।