প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যবসায়ীরা শিল্পকারখানার উৎপাদন চালু রাখার জন্য দ্রুত গ্যাস, বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানোর সুপারিশ জানিয়েছেন। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণেরও সুপারিশ জানান ব্যবসায়ীরা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের কাছে পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে তথ্য চেয়ে বলেন, ‘দেশ থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি বৈশ্বিক ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাবেন। তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন, যাতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে তাঁদের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। ব্যবসায়ীরা প্রফেসর ইউনূসের এ উদ্যোগ গ্রহণের প্রশংসা করেন। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসি-বি)-এর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইসিসি-বি সভাপতি মাহবুবুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, স্কয়ার গ্রুপের তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, এ কে আজাদ, এমসিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান, ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট আশরাফ আহমেদ, বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বিকেএমইএ-এর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রমুখ। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ হাতেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার সুপারিশ জানিয়েছি। আমরা বলেছি, বিগত সরকারের আমলে যারা মোটরবাইক নিয়ে মহড়া দিয়েছে, এখন তারাই মহড়া দিচ্ছে, শুধু ভাই চেঞ্জ হয়েছে। শিল্প-কারখানায় আগের মতোই চাঁদাবাজি এবং আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন এই ব্যবসায়ী।
বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি বলেন, আমাদের কারখানার গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট কাটেনি। এটি দ্রুত সমাধানের অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টাকে। একই সঙ্গে এনবিআর ও কাস্টমস হয়রানি থেকে ব্যবসায়ীদের সুরক্ষার সুপারিশ জানানো হয়েছে। ব্যাকিং খাতের অরাজকতা তুলে ধরে এই খাতের সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে। হাতেম বলেন, ব্যাংকগুলোতে এলসি হচ্ছে না। ব্যাক টু ব্যাক এলসির লিড টাইম ৬০ দিন, অথচ ব্যাংকেই সময় চলে যাচ্ছে ৩০ দিন।
ব্যবসায়ীরা ড. ইউনূস ব্র্যান্ডিং (ব্যক্তি সুনাম) ব্যবহার করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা চালু রাখার বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা বলেছি, ড. ইউনূস নিজে একটি ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ড ব্যবহার করে ইইউ অথবা যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দেশের ব্যবসায়ীরা তাঁকে তাঁর নতুন ভূমিকায় সম্পূর্ণ সমর্থন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস তাঁদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘তাঁর প্রশাসন উল্টরাধিকার সূত্রে অর্থনৈতিক বিপর্যয় পেয়েছে কিন্তু তিনি নিশ্চিত যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ যদি জাতি হিসেবে সম্মিলিতভাবে এ বিশৃঙ্খলা কাটিয়ে উঠতে পারে, তাহলে আমরা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। বিশ্ব আমাদের অনুপ্রেরণার জন্য দেখবে। বিশ্ব আমাদের সঙ্গে আরও ব্যবসা করতে চাইবে।
একটি বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটি কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছি। অবশ্য এটা আমাদের জন্য একটি সুযোগও। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দেশের দ্রুত উন্নয়ন সম্ভাবনা রয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলকে জাতি হিসেবে মহানুভবতা অর্জনের জন্য প্রচলিত প্রথার বাইরে চিন্তা করতে বলেন। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা তরুণদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারি, তাহলে আমরা জাতির স্বপ্নকে সত্যি করতে পারব।’ ব্যবসায়ী নেতারা ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি বিজয়ীকে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তাড়াহুড়ো না করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, ‘আগের সরকার দেশকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিয়েছে। গত ১৫ বছরে যা ঘটেছে আমরা তার সাক্ষী।’ ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব প্রশাসন, শিক্ষা ও শিল্পে গভীর সংস্কার ও পুনর্গঠন প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে, দেশের বেসরকারি খাতের সবাই বর্তমান সরকারের সঙ্গে রয়েছে বলে দাবি করেন আইসিসি-বি প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমান।
► কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট নয় বললেন গভর্নর