বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণহত্যাকারী হাসিনা প্রতিবার কীভাবে জনগণের ভোট ডাকাতি করেছিল- গণমাধ্যমে প্রতিদিন সে সব চিত্র তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের আহ্বান জানাই। গণমাধ্যমে হাসিনার অপকর্ম ফ্রেমবন্দি থাকলে ভবিষ্যতে আর কেউ হাসিনার মতো ভোট ডাকাতি, গণহত্যায় লিপ্ত হতে সাহস করবে না। যা গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করবে এবং ক্ষমতাসীনদের স্বৈরাচারী আচরণ থেকে বিরত থাকতেও বাধ্য করবে। গতকাল যুক্তরাজ্য থেকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। তার নিজের ফেসবুক পেজে এই ভিডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়।
গণমাধ্যমের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারেক রহমান বলেন, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী হাসিনা এখন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা আপনারা আপনাদের যার যার সংবাদপত্রে নির্ভয়ে এই শব্দটি লিখবেন ‘হাসিনা পালিয়েছে’। ‘হাসিনা পালিয়েছে’ শব্দটির পরিবর্তে কোনো গণমাধ্যম যদি ভিন্ন শব্দ প্রয়োগের অপকৌশল নেন সেটি জনগণের কাছে আপনাদের বিবেকের স্বাধীনতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আপনাদের প্রতি আহ্বান গত ১৫ বছরে যারা গুম, খুন, অপহরণের শিকার হয়েছেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হাজারো মানুষ যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের এবং তাদের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করুন। সাগর-রুনির হত্যা মামলার তদন্ত এক যুগেও কেন শেষ হলো না সে প্রশ্ন তুলুন। জনগণ আপনাদের কাছ থেকে ‘আয়নাঘর’ নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট দেখতে চায়। হাসিনা দেশকে লুটেরা রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল, জনগণ দুর্নীতির সে সব চিত্র প্রতিদিন সংবাদপত্রে দেখতে চায়। বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, পরাজিত অপশক্তির পাতা ফাঁদে কেউ পা দিবেন না। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে চূড়ান্ত সফলতায় নিতে হলে কেউ দখলদারিত্বে লিপ্ত হবেন না, দখলদারিত্বে সহায়তা করবেন না। কেউ দুর্বলের ওপর আঘাত হানবেন না। কেউ আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না। প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, আসুন কার্যকর রাষ্ট্র সংস্কার নিশ্চিত করতে তারুণ্যের কাক্সিক্ষত একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে আমরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিই। গণঅভ্যুত্থানে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সহায়তার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ইতোমধ্যে নেওয়া নানা উদ্যোগকে ইতিবাচক পদক্ষেপ আখ্যা দেন তিনি। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় আয়োজনে সংবর্ধনা দেওয়া হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানালে কিছু সময়ের জন্য হলেও হতাহতদের পরিবারগুলো হয়তো একটু মানসিক সান্ত্বনা পাবেন। এ ধরনের উদ্যোগ গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে আরও শানিত করবে। ৫ আগস্টকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় জীবনের একটি বিশেষ দিবস হিসেবে সাড়ম্বরে পালন করার বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার। দেরিতে হলেও ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে হতাহতদের রাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
হাসিনা পতনের আন্দোলনে প্রবাসীদের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণহত্যাকারী হাসিনা পতনের আন্দোলনে দেশে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বিশেষ অবদান রেখেছেন। দেশে যখন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল প্রবাসীদের মধ্যে একদল সাহসী মুখ প্রবাস থেকেই জনগণের সামনে হাসিনার দুঃশাসনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে গণআন্দোলনে শামিল থেকেছেন। প্রবাসে থেকেই হাসিনা পতনের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে গিয়ে কোনো কোনো প্রবাসী বাংলাদেশিকে প্রবাসে জেলজুলুম সইতে হয়েছে, হচ্ছে। ছাত্র-জনতার কাক্সিক্ষত একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও সংশ্লিষ্ট দেশের আইন মেনে সাধ্যমতো প্রবাসীদের যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান বিএনপির হাইকমান্ড।
তারেক রহমান বলেন, ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ও উদ্দেশ্য নস্যাৎ করে দিতে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর ওপর পরিকল্পিত হামলার ছক তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। তবে শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনের পক্ষের শক্তি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে বিতাড়িত অপশক্তি পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো থেমে নেই। তারেক রহমান বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করাই হচ্ছে- জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রধান হাতিয়ার। গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য সুসংহত করতে হলে- বিতাড়িত গণবিরোধী শক্তিকে আইনের মুখোমুখি করার পাশাপাশি জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাটা জরুরি। তারেক রহমান বলেন, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন অবসানের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তাই দেশে জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এখনই সময়। লাঞ্ছিত-বঞ্চিত অধিকারহারা মানুষ একটি স্বাধীন, নিরাপদ ও মর্যাদাকর জীবনের প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে রয়েছেন। জনপ্রত্যাশা পূরণের জন্য একটি নিরাপদ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গত ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রকামী মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল। আন্দোলন করতে গিয়ে এ সময় অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন, অপহৃত হয়েছেন। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যাকারী হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধুই রাষ্ট্রক্ষমতার হাত বদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে রাষ্ট্র ও রাজনীতির কাক্সিক্ষত গুণগত পরিবর্তন সম্ভব নয়। কাক্সিক্ষত রাষ্ট্র সংস্কারে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে টেকসই করতে হলে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী সমর্থক শুভাকাক্সক্ষীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের পথ ধরে অন্তর্বর্তী সরকার যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। সেই নির্বাচনে জনগণের রায় পেতে জনগণের মন জয় করুন। জনগণের বিশ্বাস, আস্থা এবং ভালোবাসা অর্জন করুন। জনগণের সুখে-দুঃখে জনগণের সঙ্গে থাকুন। জনগণকে সঙ্গে রাখুন। ধর্ম, বর্ণ পরিচয়ের কারণে কেউ যাতে অনিরাপদ বোধ না করেন দায়িত্বশীল এবং জনপ্রিয় দল বিএনপির একজন নেতা-কর্মী, সমর্থক হিসেবে সেটি নিশ্চিত করুন।