মাইনুল হাসান। পুলিশের ১৭তম বিসিএস-এর মেধাবী কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে। সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে। স্বল্পভাষী এই কর্মকর্তা পেশাদারির ক্ষেত্রে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছেন বহুবার। তবে দলীয় লেজুরবৃত্তি এবং ক্ষমতার দৌড়ে পিছিয়ে থাকার কারণে আড়ালে থেকেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশে ভেঙে পড়া চেইন অব কমান্ড এবং মনোবল ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ৭ আগস্ট তাকে বেছে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রধান হিসেবে। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ভয়ংকর ট্রমায় নিমজ্জিত থাকা পুলিশ সদস্যদের দিয়ে থানা এবং ট্রাফিক বিভাগকে সক্রিয় করার উদ্যোগে অনেকটাই সফল হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক সাখাওয়াত কাওসার-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অংশ নেন মাইনুল হাসান। সেখানে উঠে এসেছে ডিএমপি নিয়ে তার পরিকল্পনা এবং প্রত্যাশার কথা।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : কঠিন সময়ে আপনি ডিএমপির দায়িত্ব নিয়েছেন। কী কী সমস্যা মোকাবিলা করছেন? পরিকল্পনা কী?
ডিএমপি কমিশনার : ধন্যবাদ আপনাকে। এরকম কঠিন সময় বাংলাদেশ পুলিশ জীবনে কখনো দেখেনি। কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে পড়েছে। তবে আমরা তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। শুরুর দিকে যে অবস্থা ছিল, তা সত্যিই খুব কঠিন এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন পুলিশ অনেকটাই তা কাটিয়ে উঠেছে। থানাগুলো সচল হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ দৃশ্যমান হয়েছে। দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বর্তমান পরিস্থিতিতে কী চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?
ডিএমপি কমিশনার : নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকেই। তবে এখনকার চ্যালেঞ্জ হলো, পুলিশ সদস্যদের ভেঙে পড়া মনোবল পুনরুদ্ধার করা। মানসিকভাবে ভয়ের আশঙ্কা দূর করে দায়িত্ব পালনের জন্য উপযোগী করে তোলা। একই সঙ্গে ভেঙে পড়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো দ্রুত কাজের উপযোগী করা। কারণ ইতোমধ্যে এই বাহিনীর কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট এবং ধ্বংস হয়েছে। বস্তুগত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নগরবাসীর আস্থা ফিরিয়ে আনতে কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
ডিএমপি কমিশনার : আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্বটা পালন করতে চাই। আমাদের ওপর যে অর্পিত দায়িত্ব এবং কর্তব্য আছে তা যদি ঠিকমতো সততার সঙ্গে, ন্যায্যতার সঙ্গে, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে পারি অর্থাৎ রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব আছে তা ভালোভাবে ডিসচার্জ করতে পারলেই আস্থা অটোমেটিক্যালি ফিরে আসবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিশেষ কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন ফোর্সকে?
ডিএমপি কমিশনার : আইন মান্য করতে হবে। বিধি মেনে চলতে হবে। সমাজের বৃহৎ অংশ আইন মেনে চললেই আমরা দ্রুতই আগের অবস্থায় অর্থাৎ সুন্দর একটা অবস্থায় ফিরতে পারব। তবে এক্ষেত্রে নগরবাসীকেও এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : শোনা যাচ্ছে যারা বঞ্চিত ছিলেন, তাদের সঙ্গে মাদক ব্যবসা, সেবনের অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা ঢুকে পড়ছেন। অনেকে পাইপ লাইনে আছেন। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে আপনার বক্তব্য কী?
ডিএমপি কমিশনার : দেখুন এসব বিষয় পুুলিশ সদর দপ্তর দেখছে। তবে আমি বলতে পারি, নির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যারা শাস্তি পেয়েছিলেন তাদের বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : কলঙ্কিত অধ্যায় কিংবা অতীতের গ্লানি মুছে ফেলতে এবং ফোর্সের মনোবল ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ কী নিয়েছেন?
ডিএমপি কমিশনার : কলঙ্কিত অধ্যায় আমি বলব না। তবে শুরু থেকেই আমরা কন্টিনিউয়াসলি চেষ্টা করছি পুলিশের হারানো গৌরবময় ইমেজ ফিরিয়ে আনতে। এখন তাদেরকে আমরা মোটিভেশনাল জায়গাটা ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করছি। নিয়মিত পিটি-প্যারেড, ড্রিল, ঘন ঘন অ্যাড্রেসিংয়ের মাধ্যমে ইস্যুগুলো সমাধান করার বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। মনোবল বৃদ্ধির জন্য কালোকটিভ যেসব ইস্যুগুলো আছে সেগুলোও সামাধান করার চেষ্টা করছি। কারণ একটা সুশৃঙ্খল বাহিনীর মনোবল দৃঢ় না থাকলে কাজ করবে কীভাবে? পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের যে মনোভাব তা একদিনে হয়নি। আবার একদিনেও তা কারেকশন হবে না। তবে রুলস এবং রেগুলেশন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারলেই আমরা দ্রুত সাধারণ মানুষের আস্থার একটি অবস্থানে ফিরতে পারব।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নগরবাসীর প্রতি কোন বার্তা?
ডিএমপি কমিশনার : আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো সব বাসিন্দা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেন। যারা ব্যবসায়ী তারা যাতে নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। আমাদের দায়িত্ব হলো অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। যাতে অপরাধ না থাকে। এজন্য আমরা প্রিভেনটিম এবং রিঅ্যাকটিভ মেজারস নিয়ে থাকি। প্রিভেনটিভের জন্য আমরা প্যাট্রোল ডিউটি, রায়ট স্পেসিফাই করি। বিভিন্ন ধরনের পুলিশ ডিউটি দেই যাতে সমাজে অপরাধ না হয়। রিঅ্যাকটিভ পদ্ধতিতে অপরাধ হয়ে গেলে তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে বিচ্যুত লোকদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেওয়া হয়।