নিজস্ব মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গত ১৫ বছরে ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা পাচারসহ দৃশ্যমান ও অদৃশ্যভাবে আরও হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, তারা বেক্সিমকো গ্রুপের অর্থ পাচারের ঘটনা অনুসন্ধান করছেন। দ্রুতই সিআইডি এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করার অভিযোগে সালমান এফ রহমান ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগে শুরু হওয়া অপর একটি মানি লন্ডারিং অনুসন্ধানের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। বিস্তারিত অনুসন্ধান শেষে শিগগিরই মানি লন্ডারিং আইন ও বিধি মোতাবেক একটি নিয়মিত মামলা হবে। সিআইডির অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টরা জানান, সালমান এফ রহমান তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ও বেনামে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে দৃশ্যমানভাবে বাজার থেকে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং অদৃশ্যভাবে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। আর বেক্সিমকো গ্রুপের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুবাই ও সৌদি আরবে নিজের ছেলের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান জজ গ্লোবাল ট্রেডিংয়ে পণ্য রপ্তানি করে। কিন্তু রপ্তানি মূল্য বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন না করে প্রায় ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা (অর্থাৎ ১৩৫ মিলিয়ন ডলার) পাচার করে ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সৌদি আরবে যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যিালসের বেশির ভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুপ গত ১৫ বছরে সাতটি ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে পাচার করেছে।
এর মধ্যে একটি সরকারি ব্যাংক থেকে ২৯টি প্রতিষ্ঠানের নামে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকেই নামে-বেনামে মোট ৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। অপর এক বেসরকারি ব্যাংক থেকে নিয়েছে মোট ২৯৫ কোটি টাকা ঋণ। এ ছাড়া তিনটি সরকারি ব্যাংক থেকে মোট ৫ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আরেকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে চার প্রতিষ্ঠানের নামে নিয়েছে মোট ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ। আনুসন্ধানে জানা যায়, বেক্সিমকো তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে যে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে, তার মধ্যে অ্যাডভেঞ্জার গার্মেন্টস লিমিটেডের ২ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেডের ২৩ দশমিক ০৪ মিলিয়ন, অটাম লোপ অ্যাপারেলস লিমিটেড ২ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেডের ২৪ মিলিয়ন, কসমোপলিটন অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৩ মিলিয়ন, কজি অ্যাপারেলস লিমিটেডের ১ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন, ইসেজ ফ্যাশনস লিমিটেডের ২৪ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন, ইন্টা. নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের (ইউনিট-২) ২৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন, ইন্টা. নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের ২ দশমিক ১৫ মিলিয়ন, কাচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের ২ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস লিমিটেডের ২ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন, পারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের ২ মিলিয়ন, পিংক মেকার গার্মেন্টস লিমিটেডের ২ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের ১ দশমিক ৮১ মিলিয়ন, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ২ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন, স্পরিংফুল অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৪ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন, আরবান ফ্যাশনস লিমিটেডের ৪ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন এবং উইনটার স্পরিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেডের ২ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলার।