বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭-তে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে পানিবন্দি রয়েছে ৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬৭টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫১ লাখ ৮ হাজার ২০২ জন।
গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানায়, বন্যা আক্রান্ত ১১টি জেলা, বন্যাপ্লাবিত উপজেলা ৬৮টি, ক্ষতিগ্রস্ত ৫০৪টি ইউনিয়ন। চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মৌলভীবাজার জেলার পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য ৩ হাজার ৬১৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৪১ জন মানুষ, ৩২ হাজার ৮৩০টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় মন্ত্রণালয়।
বন্যায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৪২ জন, নারী সাতজন ও শিশুর সংখ্যা ১৮। কুমিল্লায় মারা গেছেন ১৭ জন, ফেনীতে ২৬ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে ১১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন, কক্সবাজারে তিনজন এবং মৌলভীবাজারে একজন। মৌলভীবাজারে নিখোঁজ আছেন একজন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পানিবন্দি লোকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য ৩ হাজার ৬১৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় মোট ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৪১ জন লোক এবং ৩২ হাজার ৮৩০টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে মোট ৪৭২টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। এ ছাড়া, দেশে সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে।
ফেনীতে সর্বস্ব হারিয়েছেন আড়াই হাজার পোলট্র্রি উদ্যোক্তা : ফেনী প্রতিনিধি জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন ফেনীর আড়াই হাজারেরও বেশি পোলট্রি ও ডেইরি শিল্পের উদ্যোক্তা। তরুণ উদ্যোক্তা মো. আবদুল জলিল মামুন জানান, নিজ বাড়ি সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে তিনি পোলট্রি খামার ও মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। খামারে থাকা ১০ হাজার সোনালি ও লেয়ার মুরগি ও ৮টি মাছের ঘেরের ১০-১২ লাখ টাকার মাছ ছিল। বণিকের হাটস্থ জালাল মাস্টার বাড়ি সংলগ্ন আজমাঈন আদর্শ খামার এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেল, হাজার হাজার মরা মুরগি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার করুণ দৃশ্য। ছড়িয়ে পড়ছে উৎকট গন্ধ। আবদুল জলিল মামুন নামে এক পোলট্র্রি ব্যবসায়ী বলেন, ৫০ লাখ টাকা পোলট্রি খামার ও মাছ চাষে বিনিয়োগ করেছিলাম। ডিলারের কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাছ-মুরগির খাবারও বাকিতে এনেছি। কীভাবে এই টাকা পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না।
ফেনী জেলা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, পোলট্রি ব্যবসায়ী কামরুল আলম জানান, সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের পূর্ব সিলোনিয়া গ্রামে তারা তিন তলা বিশিষ্ট পোলট্রি ফার্ম ছিল। বন্যায় তার প্রায় ৫০ লাখ টাকার মুরগি মুহূর্তেই মারা যায়। সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের বাঘাইয়া গ্রামের বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম মাসুক ৪০ লাখ টাকা দিয়ে শুরু করেন পোলট্রি ব্যবসা। বন্যা তার ১০ হাজার ব্রয়লার মুরগি ও ৪০ হাজার লেয়ার মুরগির খামার কেড়ে নেয়। এ ছাড়া দুই গুদামে থাকা ১৫ লাখ টাকার মুরগির খাদ্যসহ অন্যান্য জিনিস নষ্ট হয়ে যায়। পোলট্রি ব্যবসায়ী মিরাজুল ইসলাম বলেন, আপ্রাণ চেষ্টা করেও দুটি খামারে ৩০ হাজার লেয়ার মুরগির একটিও বাঁচাতে পারিনি। আমরা এখন দিশাহারা। এবার বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলার আনুমানিক ১০ লাখ মানুষ দুর্যোগের শিকার হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯১৪ কোটি টাকা।