টানা প্রবল বর্ষণে কক্সবাজারে আবারও পাহাড় ধসে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে একই পরিবারের তিনজন এবং উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ১৪ নম্বর ক্যাম্পে এক পরিবারের তিনজন। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ডিককুল গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী আঁখি আকতার (২৫) এবং দুই শিশু কন্যা মিহা জান্নাত নাঈমা (৭) ও লতিফা ইসলাম (২) এবং উখিয়ার হাকিমপাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আবদুর রহিম (৩০), আবদুল হাফেজ (১০) ও আবদুল ওয়াহেদ (৮)।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার দোলন আচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে সদরের ঝিলংজার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ডিককুল এলাকায় মিজানুর রহমানের বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। এতে তার স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যা মাটিচাপা পড়েন। তিনি জানান, টানা বর্ষণের কারণে গভীর রাতে মিজানের বাড়ির ওপর পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেশীরা মিজানকে জীবিত উদ্ধার করে। পরে দমকল বাহিনীর সহযোগিতায় ভোরে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মিজানের বাড়িটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে যায়। পরে মধ্যরাতে তার বাড়িতে পাহাড় ধসে চাপা পড়ে। এদিকে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ শামসুদ দৌজা নয়ন বলেন, ভারী বর্ষণে উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা বিধ্বস্ত ঘরবাড়িতে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ১৯ জুন থেকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক দিনে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২১ জুন কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে ঘুমন্ত স্বামী-স্ত্রী নিহত হন। ৩ জুলাই উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের দুটি ক্যাম্পে পাহাড় ধসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ১১ জুলাই কক্সবাজার শহরে এক শিশু ও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে ২৭ জনে মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনার বেশির ভাগই উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ও সদর উপজেলায়। অন্যদিকে গত বুধবার থেকে কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এতে কক্সবাজার শহর ও জেলার ৯ উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে অনেকের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। এতে এলাকায় জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে শুক্রবার ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলতি মৌসুমে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
কক্সবাজারে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড জলাবদ্ধতা : দুই দিনের টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলার বেশির ভাগ গ্রাম দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে পাহাড় ধস এবং বন্যার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনের কলাতলী, প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, টেকপাড়া, কালুরদোকান, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, নুনিয়ারছড়া, সমিতিপাড়া, বাসটার্মিনাল এলাকাসহ বেশির ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জেলার সদর, রামু, উখিয়া, চকরিয়া ও টেকনাফে বন্যার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদী এবং খাল ও ছড়াগুলোতে অস্বাভাবিক পানি বাড়ছে।
