দেশের সব সরকারি কর্মচারীদের চলতি বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। আর প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা দাখিল করতে হবে। বিবরণীতে কোনো ভুল তথ্য দিলে বা তথ্য গোপন করলে বা সম্পদের কোনোরূপ অসংগতি দেখা গেলে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। উল্লেখ্য, সারা দেশে বর্তমানে ১৫ লাখের মতো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ (পরে ২০০২ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, সব সরকারি কর্মচারীর জন্য সম্পদ বিবরণী দাখিল করা আবশ্যক। বিদ্যমান নিয়মে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিতে হয়। এরপর পাঁচ বছর অন্তর সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। দুর্নীতি রোধ এবং চাকরিজীবীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আচরণ বিধিমালায় এমন নিয়ম থাকলেও কাগজের এই নিয়ম মানা হতো না বললেই চলে। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। আচরণ বিধিমালার প্রসঙ্গে সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, প্রয়োজনের নিরিখে নিয়মাবলি সরকার সময়ে সময়ে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের এখতিয়ার সংরক্ষণ করে। তারই আলোকে এখন তা বছরভিত্তিক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী, এটি দুর্নীতিতে একটি লাগাম টানা হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এ সচিব বলেন, সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিষয়ে একটি ফরম বা ছক তৈরি করা হয়েছে। ক্যাডার বা নন-ক্যাডার (নবম বা তদূর্ধ্ব গ্রেড) কর্মকর্তা তাঁর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। আর গেজেটেড বা নন-গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (দশম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড) নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। সম্পদের বিবরণী সিলগালা খামে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করলে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না এ প্রসঙ্গে মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হলে অথবা কোনো ভুল তথ্য বা তথ্য গোপন করলে বা সম্পদের কোনোরূপ অসংগতি দেখা গেলে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মূলত অসদাচরণ হিসেবে লঘুদন্ড বা গুরুদন্ড দেওয়া হয়। লঘুদন্ড কয়েক ধরনের। এগুলো হলো তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশ বিশেষ বা আনুতোষিক থেকে তা আদায় করা অথবা বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে নামিয়ে দেওয়া (অবনমিতকরণ)। গুরুদন্ডগুলোর মধ্যে আছে নিম্নতর বা নিম্নতর গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা। সচিব বলেন, প্রথমে লঘুদন্ড দেওয়া হয়। তারপরও লঘুদন্ডের চেয়ে অতিমাত্রায় অপরাধ হলে গুরুদন্ড দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আদালতের আদেশ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সম্পদ বিবরণীর তথ্য সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ হস্তান্তরযোগ্য নয়। এ ছাড়া সম্পদ বিবরণী অতি গোপনীয় দলিল বিধায় এ ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ প্রযোজ্য হবে না। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কারও বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ হলে তখন আর এই তথ্য গোপনীয়তার মধ্যে থাকবে না।
আয়করযোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতি বছরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আয়কর বিবরণী জমা দেন, যেখানে সম্পদের বিবরণীও উল্লেখ করার বিধান রয়েছে। তবে এটির সঙ্গে সব সরকারি কর্মচারীর সম্পদ বিবরণীর সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি। জনপ্রশাসনের এ সচিব বলেন, সব কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হবে। একপর্যায়ে তা অনলাইন হবে। অনলাইন হলে দেখা যাবে কার কত সম্পদ বা অবিশ্বাস্য হলে যন্ত্রই সংকেত দেবে। অনলাইনে হলে যাচাইটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে বলেও যোগ করেন এ কর্মকর্তা।