আউটসোর্সিং ও চুক্তিভিত্তিক চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল সড়কে অবস্থান নেন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাজধানীর শাহবাগ মোড়। বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ব্যানারের এ কর্মসূচিতে প্রায় ছয় ঘণ্টা অবরোধে শাহবাগ ও এর আশপাশের রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। দিনভর ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা। এরপর বিকালে ১৫ দিনের মধ্যে দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেন আন্দোলনরত আউটসোর্সিং কর্মচারীরা। এর আগে তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও আউটসোর্সিং কর্মচারী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান আনিস কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
বিকাল ৩টায় আউটসোর্সিং ও চুক্তিভিত্তিক চাকরি জাতীয়করণের দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করতে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল যমুনায় যায়। সেখানে তাদের জানানো হয়, যত দ্রুত সম্ভব তাদের দাবির বিষয়ে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে কর্মচারী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান আনিস বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের দাবি আদায়ে কাজ করবেন। সংস্কার কমিটির মাধ্যমে এটি করা হবে। ভবিষ্যতে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের সঙ্গে বৈষম্য হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে আবারও রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সকাল ১০টায় শাহবাগের আশপাশের এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন আউটসোর্সিং কর্মচারীরা। এতে রাজধানীর ব্যস্ততম এই মোড়ের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার যানজট তীব্র হতে থাকে। এ সময় অনেক যাত্রীকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে যেতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকশ কর্মচারী শাহবাগে জড়ো হয়ে আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় অনেক যাত্রীকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে যেতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে সতর্ক অবস্থান নেন।
আউটসোর্সিং নীতিমালা বাতিল এবং আউটসোর্সিং, দৈনিক ভিত্তিক ও প্রকল্পে কর্মরতদের বহাল রেখে বয়স শিথিল করে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি তোলেন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর, অধিদপ্তরের সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা। শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলনকারীদের ছোট-বড় ব্যানারে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ‘ড. ইউনূসের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘ব্রিটিশদের দাসত্ব ভেঙে দাও’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। দুপুরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি শাহবাগ মোড়ে এসে অবরোধকারীদের প্রতি সংহতি জানান। তাদের দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অবরোধ চলাকালে শাহবাগ ও এর আশপাশের রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অ্যাম্বুলেন্সগুলো ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যায়। সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগে আসার রাস্তা ও বাংলামোটর থেকে শাহবাগে আসার রাস্তা যানজটে স্থবির হয়ে যায়। এ ছাড়া মিরপুর রোড, সায়েন্স ল্যাব, পান্থপথ, গ্রিনরোড, মগবাজার, বেইলি রোডে ও বাড্ডা, রামপুরায় ধীরগতিতে যান চলাচল করে। আন্দোলনরতদের অভিযোগ, টেন্ডার জটিলতায় কর্মরত অনেকের চাকরি চলে যায়, বছর শেষে জুন মাসে নবায়ন করার নামে বিপুল অঙ্কের ঘুষ দাবি করা হয়, ঘুষ না দিলে চাকরি চলে যায়। এ ছাড়া প্রতি মাসে বেতন না পাওয়া, কখনো কখনো পাঁচ/ছয় মাস আবার এক থেকে দুই বছরও বেতন বকেয়া থাকে।
বাংলামোটরে মহিউদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, উত্তরা থেকে বিজয় সরণি আসছি ৩০ মিনিটে। আর বাংলামোটর পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টারও বেশি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খন্দকার নজমুল হাসান বলেন, যানজট নিরসনে সকাল থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করেন। শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করায় কয়েকটি রাস্তা ডাইভারশন করে অন্য রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিকালে তারা অবরোধ তুলে নিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে। এরপর সব রাস্তা সচল হয়ে যায়।