জনমত জরিপে কমলা হ্যারিসের ভোটের পাল্লা ক্রমশ ভারী হতে দেখে ভোটারদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে আনতে নগদ অর্থ বিতরণের অনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে মার্কিন নির্বাচনে। ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উত্তাপ এখনো আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিক বলেও মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ জরিপে কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ ভোটাররাও ট্রাম্প-শিবির ত্যাগের কথা বলেছেন। বিজয় নির্ধারণী আরিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভেনিয়া এবং উইসকনসিন স্টেটে অক্টোবরের ২ থেকে ৮ তারিখের মধ্যে ‘হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি’ পরিচালিত জরিপের ফলাফল ১৯ অক্টোবর প্রকাশের পর ডেমোক্র্যাট শিবির থেকেও হতাশার ভাব দূর হয়েছে। এই জরিপে অংশগ্রহণকারী কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারের ৮৩% কমলাকে ভোটদানের কথা জানিয়েছে। ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন মাত্র ৮%। এর ঠিক এক মাস আগে পরিচালিত একই জরিপে ট্রাম্পকে ১২% কৃষ্ণাঙ্গ ভোট দেবেন বলে উল্লেখ করেছিলেন। অর্থাৎ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে কমলার পাল্লা তত ভারী হচ্ছে- যা যুক্তরাষ্ট্রে নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইতিহাস রচনার প্রত্যাশাকে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিচ্ছে। উল্লেখ্য, ট্রাম্পকে ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সব জনপ্রিয় নেতাদের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং বারাক ওবামা মাঠে নামার পরিপ্রেক্ষিতে কমলার প্রতি কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারের মনোভাব দৃঢ়তর হচ্ছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প-সমর্থক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাও মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনি ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো তৎপরতাও চালাচ্ছেন প্রকাশ্যে। ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জঘন্য অপকর্মকে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত এবং গরিব আমেরিকানদের প্রলুব্ধ করতে নগদ অর্থ ছড়াতে দ্বিধা করছেন না বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মন্তব্য করেছেন। বড় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অনেককে ট্রাম্পের প্রতি ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক উল্লেখযোগ্য। তিনি স্যুইং স্টেট হিসেবে চিহ্নিত ৭ স্টেটে ভোটারদের জানিয়েছেন যে, ট্রাম্পকে ভোটদানের ফরম পূরণ করলেই দেওয়া হচ্ছে নগদ ১০০ ডলার করে। একই ধারায় ট্রাম্পের প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীরাও। যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রিপ্টোকারেন্সির রাজধানী করার পরিকল্পনা ঘোষণার পরই মূলত ট্রাম্পের প্রতি ঝুঁকছেন তারা। ট্রাম্প নিজেও ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করেছেন। এরই মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে তহবিল সংগ্রহও শুরু হয়েছে।
বিলিয়নিয়ার স্ট্যান ড্রাকেন মিলার বলেছেন, বৈশ্বিক পুঁজিবাজার ও স্বর্ণের দাম বাড়ার পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সির বাড়তি দামও ট্রাম্পের আসন্ন বিজয়ের সূচক। এর প্রভাবই দেখা যাচ্ছে ক্রিপ্টোভিত্তিক ফিউচার ট্রেডের অনলাইন বাজার পলিমার্কেটে। চারটি অ্যাকাউন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর বড় বাজি ধরেছে। অথচ অ্যাকাউন্টগুলো আমেরিকান নয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি সূত্রের মতে, ট্রাম্পের পক্ষে অভূতপূর্ব বাজি ধরেছে চারটি অ্যাকাউন্ট। এরা ৩ কোটি ডলারেরও বেশি টাকার বাজি ধরেছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ধারণা করছেন, হাই-প্রোফাইল আমেরিকানরা এই বাজির পেছনে থাকতে পারেন। কিন্তু পলিমার্কেট কখনো আমেরিকানদের মার্কিন নির্বাচন নিয়ে বাজি ধরার অনুমতি দেয় না। ওয়াল ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এই অস্বাভাবিক বাজির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পলিমার্কেট। ট্রাম্পের পক্ষে যে ৩ কোটি ডলারের বাজি ধরা হয়েছে, সেটি অনলাইন প্ল্যাটফরমটির মোট ট্রেডিং ভলিউমের প্রায় ১ শতাংশ!
আমেরিকানরা অনলাইনে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে বাজি ধরার ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে। কমোডটি ফিউচার ট্রেডিং কমিশন এ ধরনের বাজির ক্ষেত্রে পূর্বে চুক্তি বা ডেরিভেটিভ অফার করার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। এর আগে গত বছর নভেম্বরে আরেকটি জুয়ার প্ল্যাটফরম কালশি মার্কিন নির্বাচন নিয়ে বাজি ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে সিএফটিসির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। একটি ফেডারেল আপিল আদালত গত ২ অক্টোবর কালশির পক্ষে রায় দেন। ফলে ভোটের এক মাস আগে নির্বাচন নিয়ে আমেরিকানদের বাজি ধরার পথ প্রশস্ত হয়েছে। কালশিতে ট্রাম্পের পক্ষে ৫৭ শতাংশ এবং হ্যারিসের পক্ষে ৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। এদিকে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর নির্বাচনি প্রচারণা তুঙ্গে উঠেছে। সড়ক-মহাসড়কে ইলেকট্রনিক বিল বোর্ড ছাড়াও কলেজ-ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা টেক্সট মেসেজে কমলা অথবা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যম এবং ই-মেলেও চলছে ভোট প্রার্থনার হিড়িক। গত নির্বাচনেও ভোট প্রার্থনার অন্যতম প্রধান অবলম্বন ছিল শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন। এবার তা অব্যাহত থাকলেও অতিরিক্ত হিসেবে ফোন-বিল বোর্ডকে বেছে নিয়েছেন কমলা ও ট্রাম্প। আর এভাবেই আসন্ন নির্বাচনটি যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা দৃশ্যমান হচ্ছে। ‘ওপেন-সিক্রেট’ নামক একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে বিজ্ঞাপন খাতে ব্যয় সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। আর এর পরিমাণ হবে ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের নির্বাচনে ছিল ১৫.১ বিলিয়ন ডলার।