২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছয় নেতার গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছে তাদের পরিবার। গতকাল চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে অভিযোগটি দাখিল করা হয়। বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও আইনজীবী আমানুল্লাহ আদিব।
ছয় নেতার বিষয়ে বলা হয়, ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত কাজ শেষে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৩৭৫০ নম্বর গাড়িতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে মধ্যরাতে গাড়ি থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রশিবিরের সাবেক অর্থ সম্পাদক মো. ওয়ালীউল্লাহ এবং ফিকাহ বিভাগের ছাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রশিবিরের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল মুকাদ্দাসকে আশুলিয়ার নবীনগর থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার করেন। ওয়ালীউল্লাহর বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায়। মোকাদ্দেসের বাড়ি পিরোজপুরের সদর উপজেলায়। ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল দিবাগত রাত ৪টায় র্যাব পরিচয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাকা ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজির ছাত্র শ্যামলী রিং রোডের ১৯/৬ টিক্কাপাড়া বাসা থেকে হাফেজ জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তিনি শিবিরের থানা সভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায়। ২০১৭ সালের ১৮ জুন বান্দরবান সদরের লেমুঝিনি গর্জনিয়া মসজিদের কক্ষ থেকে বান্দরবান ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ও শিবিরের থানা সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদীনকে র্যাব পরিচয়ে উঠিয়ে নেওয়া হয়। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টায় বেনাপোল পোর্টসংলগ্ন দুর্গাপুর বাজার থেকে বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই নূর আলমের উপস্থিতিতে দোকান মালিক, কর্মচারীসহ অসংখ্য মানুষের সামনে থেকে র্যাব পরিচয়ে গ্রেপ্তার করা হয় বাগাছড়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ও ছাত্রশিবিরের থানা সেক্রেটারি রেজোয়ান হোসাইনকে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। ২০১৭ সালের ৭ মে ঝিনাইদহের সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা ছাত্র ছাত্রশিবিরের কর্মী কামরুজ্জামানকে ঝিনাইদহ সদরের লেবু তলা থেকে ডিবি পরিচয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বাড়ি ঝিনাইদহ সদরে। এদের আর সন্ধান মেলেনি।
শেখ হাসিনাসহ ৪২ জনের নামে গুমের আরেক অভিযোগ : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ এনে হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যবসায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বরাবরে ওই ব্যবসায়ীর পক্ষে অ্যাডভোকেট আমানুল্লাহ আদিব এ আবেদন দায়ের করেন।
এ ছাড়া আসামির তালিকায় রয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে হুমায়ূন কবির জানান, ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর তাকে তুলে নিয়ে ১১ দিন ‘আয়না ঘরে’ বন্দি করে রাখা হয়। এ সময় তাকে ইলেকট্রিক শক, হাত-পা, চোখ বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়।