শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

মহানবী (সা.)-এর স্নেহ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পাওয়া সৌভাগ্যবতী নারী

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

মহানবী (সা.)-এর স্নেহ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পাওয়া সৌভাগ্যবতী নারী

মা আমিনা

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম হয়েছিল ইংরেজি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। মহানবী (সা.)-এর মা হিসেবে বিবি আমিনা বিনতে ওহাব অত্যন্ত সম্মানিত। ইসলামের ইতিহাসে বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে বিবি আমিনা অধিক পরিচিত ‘মা আমিনা’ নামে। মা আমিনার বাবার নাম ওহাব ইবনে আবদ মানাফ এবং মায়ের নাম বারাহ বিনতে আবদ আল উজ্জা।

বাবা ওহাব ইবনে আবদ মানাফ তৎকালে কুরাইশ বংশীয় বানু জোহর গোত্রের প্রধান ছিলেন। অন্যদিকে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব ছিলেন কাবা ঘরের জিম্মাদার। আবদুল মুত্তালিব তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র আবদুল্লাহর সঙ্গে মা আমিনার বিয়ের প্রস্তাব করেন। অপর বর্ণনা মতে, মা আমিনার চাচা উহাইব এই বিয়ের উদ্যোগ নেন। বিয়ের পর মা আমিনা শ্বশুরালয়ে আগমন করেন এবং যথারীতি গৃহকর্মে মনোনিবেশ করেন। বিভিন্ন বর্ণনা মতে, ব্যবসা এবং খেজুর সংগ্রহের জন্য স্বামী আবদুল্লাহকে প্রায়ই বাইরে ভ্রমণ করতে হতো। এমনিভাবে একবার বাইরে থাকাকালে অধিকাংশের মতে, সিরিয়া থেকে ফেরার পথে মাত্র ২৫ বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন আবদুল্লাহ। একদল গবেষকের মতে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মের দুই মাস আগে (মতান্তরে আরও আগে) মৃত্যুবরণ করেন তাঁর পিতা আবদুল্লাহ। ফলে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের আগে থেকেই এক কঠিন জীবন-সংগ্রামে অবতীর্ণ হন মা আমিনা। আরব দেশের তৎকালীন প্রথা মোতাবেক শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে বেদুইন নারী তথা দুধ-মা হালিমা বিনতে আবি বুয়ারের (কারও মতে হালিমা সাদিয়া)-এর সঙ্গে মরুভূমিতে পাঠানো হয় মাত্র ৮ দিন বয়সে। আনুমানিক পাঁচ বছর বয়সে মা আমিনা তাঁর প্রিয় সন্তান হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ফিরে পান এবং পরম স্নেহে বড় করতে থাকেন।

সন্তান হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কাছে পাওয়ার এক বছর পর মা আমিনা নিজ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের জন্য মদিনা গমন করেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছাড়াও তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিব ও দাসী উম্মে আয়মান এ সময় মা আমিনার সঙ্গী ছিলেন। ভাইদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ শেষে মা আমিনা মক্কার দিকে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে তাঁর স্বামীর (মহানবী (সা.)-এর পিতা আবদুল্লাহ) কবর জেয়ারতের কথাও উল্লিখিত আছে বিভিন্ন গ্রন্থে। এই ফিরতি পথে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন মা আমিনা। মক্কা-মদিনার মধ্যবর্তী আবওয়া নামক স্থানে মা আমিনাকে সমাহিত করার তথ্য রয়েছে কোনো কোনো বইয়ে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) অত্যন্ত ভালোবাসতেন মা আমিনাকে। মক্কা থেকে মদিনায় ফেরার পথে আবওয়ায় বা মধ্যবর্তী স্থানে হজরত মুহাম্মদ (সা.) থামতেন এবং মা আমিনার জন্য দোয়া করতেন বলে ইরাকের তৎকালীন ইসলামিক চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক আবু আবদুল্লাহ ইবনে সাদ তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

মা আমিনা এবং বাবা আবদুল্লাহ নতুনভাবে ইসলামের বাণী প্রচারের আগেই মৃত্যুবরণ করেন।

 

মহানবী (সা.)-এর কাছে নারীর মর্যাদা

মহানবী (সা.) যেসব কারণে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে বিবেচিত, তার অন্যতম হলো সব বয়সের নারীর প্রতি বয়সভেদে তাঁর স্নেহ, ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা। আত্মীয়-অনাত্মীয় শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সব নারীকে তিনি মর্যাদার চোখে দেখতেন। যে নারী শত্রুতাবশত তাঁর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন, অসুস্থতার খবর পেয়ে তাকেই তিনি দেখতে যান। পবিত্র কোরআনে নারীর মর্যাদা বিষয়ে বেশকিছু বাণী এসেছে, যা গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে তিনি সে যুগে নারীদের অসহায় ও অপমানিত জীবন থেকে মুক্তি দেন। অসংখ্য হাদিসে নারীর প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে। পর্দা প্রথার কারণে খুব অল্পসংখ্যক নারী তাঁর কাছে পৌঁছতে পেরেছেন। তবে যারাই পৌঁছতে পেরেছেন, বয়সভেদে স্নেহ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়ে তাঁদের সবার জীবনই ধন্য হয়েছে।

 

মা হালিমা

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মের সময় তৎকালীন আরব সমাজে জন্মের পরপরই একটি শিশুকে জনবসতি এলাকা থেকে দূরে মরুভূমিতে বেদুইন নারীদের হাতে তুলে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। বেদুইন নারীরা এসব শিশুকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিত এবং জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ে পারদর্শী করে তুলত। এ প্রথা অনুসারে এক দিন বেদুইন নারীরা দল বেঁধে মক্কায় আসে শিশু সংগ্রহের জন্য। এ সময় শিশু মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স মাত্র ৮ দিন। অন্য নারীরা যার যার মতো শিশু পেলেও বানু সাদ গোত্রের হালিমা আস সাদিয়া কাউকে খুঁজে পাননি। অন্যদিকে শিশু মুহাম্মদ (সা.) এতিম ছিলেন বিধায় তাকে লালন-পালনের বিনিময়ে প্রথা অনুসারে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় কেউ তাঁকে নিতে আগ্রহী ছিলেন না। এ সময় স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে হালিমা আস সাদিয়া নিতান্ত খালি হাতে না ফিরে এতিম শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে তাঁর নিজ এলাকা তায়েফের দিকে যাত্রা করেন। মুসলমানদের কাছে হালিমা আস সাদিয়া বেশি পরিচিত ‘মা হালিমা’ নামে। তাঁর স্বামীর নাম ছিল হারিস মতান্তরে হারিথ ইবনে আবদিন উজ্জা। বিভিন্ন বর্ণনা মতে, মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ফেরার সময় থেকে মা হালিমার ওপর মহান আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত ও বরকত নেমে আসে। রুগ্ন উট ও অসুস্থ গাধা নিয়ে সবার শেষে মক্কায় পৌঁছে ছিলেন মা হালিমা। অথচ মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ফেরার সময় সেই উট ও গাধা এতটাই সবল ও সুস্থ হয়ে ওঠে যে, সবাইকে পেছনে ফেলে তা গন্তব্যে পৌঁছে যায়। সঙ্গে থাকা উটের স্তনে প্রচুর দুধ জমা হতে থাকে। আর মা হালিমার প্রায় শুকিয়ে যাওয়া স্তনও আবার দুধে ভরে যায়। যা শিশু মুহাম্মদ (সা.) এবং তার দুধভাই আবদুল্লাহ তৃপ্তি সহকারে পান করতেন। মা হালিমা মরুর বুকে খেজুরসহ যা কিছু আবাদ করেছিলেন, সেখানেও ছিল ফসলের প্রাচুর্য। অন্যদিকে মা হালিমা এবং তাঁর পাঁচ বছরের কন্যা আশ-শায়মা (মতান্তরে খুজাইমা বা হুজাফা) শায়মা আশ আদরের সঙ্গে তাঁর দুধভাই মুহাম্মদ (সা.)-কে আগলে রাখতেন। এভাবেই দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর মা হালিমা শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে মক্কায় আসেন এবং তৎকালীন প্রথা অনুসারে মা আমিনার কাছে শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে ফেরত প্রদানের চেষ্টা করেন। কিন্তু শিশু মুহাম্মদ (সা.) কিছুতেই মা হালিমার কোল থেকে না নামায় পারিবারিক সম্মতিতে তাঁকে নিয়ে পুনরায় তায়েফে ফিরে যান। ইতিহাস ও বিভিন্ন গ্রন্থ মতে, এ সময় দুটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে। এক দিন মা হালিমা শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে হাবশা নামক স্থানে গেলে একজন খ্রিস্টান ধর্মগুরু শিশু মুহাম্মদ (সা.)-এর মাঝে অলৌকিক কিছু দেখতে পান এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এই শিশু ভবিষ্যতে অনেক বড় কিছু হবে। অপর এক দিন মা হালিমা ও তাঁর স্বামীর কাছে তাদের পুত্র তথা মুহাম্মদ (সা.)-এর দুধভাই দৌড়ে আসেন। তাঁর বর্ণনা মতে, বাইরে খেলার সময় আসমান থেকেই দুই ব্যক্তি নেমে আসেন এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর বুক চিরে ফেলেন। এ কথা জানার পর তারা মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে দৌড়ে যান এবং জানতে পারেন অলৌকিক দুজন ফেরেশতা তার বুক চিরে হৃৎপি- বের করেন এবং স্বর্গীয় পানি দিয়ে তা ধুয়ে পবিত্র করে আবার লাগিয়ে দেন। পবিত্র কোরআনের সূরা আস-সাহারের শুরুতে এ ঘটনার ইঙ্গিত ইমাম আনাস ইবনে মালিক এবং ইমাম মুসলিম বর্ণিত হাদিসেও এ তথ্য রয়েছে। এ কথা জানার পর তাঁরা ভয় পান ও দ্রুততার সঙ্গে মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর মা আমিনার কাছে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মা হালিমার কাছে থাকাকালে জীবনঘনিষ্ঠ অনেক বাস্তব শিক্ষা এবং শুদ্ধ উচ্চারণে আরবি ভাষায় কথা বলা রপ্ত করেন (মহানবী সা.)।

পাঁচ কিংবা ছয় বছর বয়সে মা আমিনার বুকে ফিরে আসেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এ সময় মা আমিনা তাঁর পিতৃবংশের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং মরহুম স্বামী (আবদুল্লাহর কবর জেয়ারতের উদ্দেশে মদিনা গমন করেন এবং ফেরত আসার পথে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মানসপটে জন্মদাত্রী মা আমিনা ও দুধমা হালিমা উভয়ের স্মৃতিই আমৃত্যু জাগ্রত ছিল। পরবর্তীতে সাক্ষাৎকালে হজরত মুহাম্মদ (সা.) মা হালিমাকে অত্যন্ত সম্মান করতেন এবং নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে তাঁকে বসতে দিতেন। এক সাক্ষাৎকালে মুহাম্মদ (সা.)-এর স্ত্রী খাদিজা (রা.) মা হালিমাকে ৪০টি মেষ বা দুম্বাসহ অন্যান্য উপহার প্রদান করেন।

৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী হুনাইন নামক স্থানে মক্কার মুসলমানদের সঙ্গে স্থানীয় ও তায়েকের বেদুইনের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুসলমানগণ একচেটিয়া জয়লাভ করে। প্রচুর ধনসম্পদ পশুপাখি ও ফসল দখল করে। একটি সূত্রমতে, এ সময় ৬,০০০ বেদুইন বন্দী হয় এবং ৪০,০০০ ছাগল, ২৪,০০০ উট মুসলমানদের দখলে আসে। এই যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে পবিত্র কোরআনের ৯ নম্বর সূরা তওবার ২৫ নম্বর আয়াতে। সহি বুখারি শরিফের ৪ নম্বর বইয়ের ৫৩:৩৭০ নম্বর হাদিস এবং আল মুয়াত্তা শরিফের ২১১০.১৯ নম্বর হাদিসে এই যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে।

এলাকাবাসীর হিসাবে যুদ্ধে ৬০০০ বন্দীর মধ্যে একজন ছিলেন মহানবী (সা.)-এর দুধবোন এবং মা হালিমার কন্যা আশ শায়মা। পরিচয় পাওয়ার পর মুসলমানগণ আশ শায়মাকে মহানবী (সা.) কাছে নিয়ে যান। মহানবী (সা.) আবারও তাঁর চাদর বিছিয়ে আশ শায়মাকে বসতে দেন এবং সম্মানের সঙ্গে আপ্যায়ন করেন। পরবর্তীতে বন্দী এলাকাবাসী নিজেদের মা হালিমার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী এবং সুহৃদ দাবি করলে মহানবী (সা.) ৬০০০ বন্দীকে মা হালিমার সম্মানে মুক্তি দেন এবং তাদের মাঝে উপহারসামগ্রী বিতরণ করেন।

অধিকাংশ বর্ণনা মতে, মা হালিমা সপরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে বা অষ্টম হিজরিতে মৃত্যুবরণ করার পর মদিনার জান্নাতুল বাকিতে মা হালিমা চিরনিদ্রা গ্রহণ করেন বলে দাবি ইতিহাসবিদের বড় অংশের।

প্রথম মুসলমান খাদিজা (রাযি.)

পৃথিবীর বুকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক ইসলাম প্রচার শুরুর পর সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর প্রতি ইমান এনে এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহর রসুল মেনে মুসলমান হন হজরত খাদিজা বিনতে খোয়ালি (খালিদা); যিনি সম্পর্কে ছিলেন মহানবী (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী এবং ‘মা খাদিজা’ নামে অধিক পরিচিত। তাঁর বাবার নাম ছিল খোয়ালিদ (খালিদ) ইবনে আসাদ। তবে পিতৃপরিচয় নয়, নিজ যোগ্যতা বলেই মা খাদিজা (রা.) সেই আমলে মক্কার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন।

সে সময়ে আমদানি-রপ্তানির জন্য মক্কার কুরাইশরা গ্রীষ্মকালে সিরিয়া এবং শীতকালে ইয়েমেনে যেত। কথিত আছে অন্যান্য কুরাইশদের কাফেলা বা ব্যবসায়ীদের বহর সম্মিলিতভাবে যত বড় ছিল মা খাদিজার একার বহরও তার সমান ছিল। তবে মা খাদিজা নিজে এই বহরের সঙ্গে কোথাও যেতেন না, কর্মচারীদের দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতেন। ৫৯৫ সালে মা খাদিজা সিরিয়ায় ব্যবসায়ী সহযোগীদের সঙ্গে সঠিক হিসাব-নিকাশ করার জন্য মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রস্তাব করেন। ২৫ বছরের যুবক মুহাম্মদ (সা.) তখন একজন ‘সাদিক’ অর্থাৎ সত্যবাদী এবং ‘আল আমিন’ অর্থাৎ বিশ্বাসী নামে সুপরিচিত ছিলেন। অভিভাবক এবং চাচা আবু তালিবের সম্মতিক্রমে মুহাম্মদ (সা.) এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং কাফেলার সঙ্গে সিরিয়া যাত্রা করেন। সিরিয়ায় যথাযথভাবে ব্যবসা পরিচালনা ও সৎভাবে হিসাব রাখার ফলে প্রত্যাশার চেয়েও দিগুণ লাভ হয়। এতে মা খাদিজা (রা.) তাঁর প্রতি আগ্রহী হন এবং তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব করেন। এ সময় মা খাদিজা (রা.)-এর বয়স ছিল ৪০ বছর। উভয়ের পিতৃস্থানীয়দের মধ্যস্থতায় ৫৯৫ সালে তাদের বিবাহ হয় এবং তাঁরা অত্যন্ত সুখের ঘর বাঁধেন। ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাঁরা পাঁচ অথবা সাত অথবা আট সন্তানের পিতা-মাতা হয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে। যাদের অন্যতম মা ফাতেমা (রা.)।

বিবাহের প্রায় ১৪-১৫ বছর পর মক্কার হেরা পর্বতে মহান আল্লাহ ইংরেজি ৬১০ সালে তাঁর দূত ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)Ñএর কাছে পবিত্র কোরআনের বাণী প্রেরণ করেন এবং তা পড়তে বলেন, প্রতি-উত্তরে তিনি (নবী) পড়তে জানেন না বলায় জিব্রাইল (আ.) তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং তাঁকে সৃষ্টিকর্তার নামে পড়তে বলেন, মহানবী (সা.) শুনে শুনে তা উচ্চারণ করেন এবং এভাবেই নবুয়াত প্রাপ্ত হন। এ ঘটনার পর মহানবী (সা.) অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন এবং তাঁর শরীরে কাঁপনসহ জ্বর আসে। মা খাদিজা এ সময় মহানবী (সা.)-এর মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য সর্বান্তকরণে চেষ্টা করেন। মহানবী (সা.) যে একজন সৎ, সত্যবাদী, বিশ্বস্ত ও পরোপকারী মানুষ, তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাহস জোগান এবং মহান সৃষ্টিকর্তা এমন ভালো মানুষকে কোনো বিপদে ফেলবেন না বলে উৎসাহ জোগান। শুধু তাই নয়, মহানবী (সা.)-এর কথায় পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে মা খাদিজা সর্বপ্রথম এক আল্লাহর প্রতি ইমান আনার গৌরব ও সৌভাগ্য অর্জন করেন। পরবর্তীতে ইসলাম প্রচারসহ মহানবী (সা.)-এর যাবতীয় কাজে অকাতরে সময়, শ্রম ও অর্থদান করেন মা খাদিজা। ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের মাঝে বিশেষত মুসলমান ক্রীতদাসদের তিনি প্রচুর খাবার ও অর্থদান করতেন এবং দাসত্ব অবসানের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করতেন। একদা মক্কার কুরাইশরা বনি হাশিম গোত্রের মুসলমানদের বিরুদ্ধে উগ্র হয়ে ওঠে এবং মুসলমানদের প্রায় তিন বছর একঘরে করে রাখে। এ সময় মা খাদিজা অর্থ ও খাবার নিয়ে মুসলমানদের পাশে ছিলেন। মহানবী (সা.) মা খাদিজা (রা.)-কে অত্যন্ত ভালো বাসতেন। মহানবী (সা.)-এর হৃদয়ে ভালোবাসা, তা স্বয়ং মহান আল্লাহই তাঁর (মহানবীর) হৃদয়ে জাগ্রত রেখেছেন (সহি মুসলিম)। অন্যদিকে বলেন, হজরত ইমরান (আ.)-এর কন্যা হজরত মারিয়াম (আ.) যেমন তাঁর আমলের শ্রেষ্ঠ নারী ছিলেন, ঠিক তেমনি খোয়ালিদ (খালিদ) কন্যা হজরত খাদিজাও তাঁর আমলের নারী (সহি বুখারি)। মা খাদিজা (রা.)-এর জীবদ্দশায় মহানবী (সা.) কখনো দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। বরং মা খাদিজা (রা.)-এর নিকটাত্মীয় বা বান্ধবীদের কাছে গোস্তের অংশ প্রেরণ করতেন (সহি মুসলিম)। প্রিন্সেস অব কুরাইশ (কুরাইশদের রাজকন্যা), দ্য পায়াস ওয়ান (ধার্মিক একজন) এবং খাদিজা আল কুবরা (খাদিজা দ্য গ্রেট) প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত হন মা খাদিজা (রা.)। মহানবী (সা.) এবং তৎকালীন মুসলমান সমাজকে শোকসাগরে ভাসিয়ে ৬১৯ সালের ২২ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন মা ‘খাদিজা (রা.)।

এ সময়টি ছিল আরবি রমজান মাস। মক্কার জান্নাতুল মুয়াল্লায় তাঁকে দাফন করা হয়। পবিত্র  কোরআনের ৩৩ নম্বর সূরা আজহাবের ৬ নম্বর আয়াতে মহানবী (সা.)-এর স্ত্রীগণকে ‘বিশ্বাসীদের মা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। তফসিরকারীদের একটি অংশ মনে করেন, মা খাদিজার প্রতি ইঙ্গিত করেই এই পবিত্র বাণী রচিত হয়েছে।

 

স্ত্রী আয়েশা বিনতে আবু বকর (রাযি.)

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর তৃতীয় এবং সর্বকনিষ্ঠ স্ত্রী ছিলেন আয়েশা বিনতে আবু বকর, যিনি সংক্ষেপে ‘মা আয়েশা’ নামে অধিক পরিচিত, তাঁর বাবা হজরত আবু বকর (রা.) ছিলেন মহানবী (সা.)-এর একজন বিশ্বস্ত সাহাবি, সাহসী যোদ্ধা এবং সার্বক্ষণিক সঙ্গীদের একজন। প্রথম জীবনে হজরত আবু বকর (রা.) ছিলেন মক্কার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী নেতা। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের প্রথম দিককার একজন এবং মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর ইসলামের প্রথম খলিফায় পরিণত হন। মা আয়েশাকে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে বিবাহ দানের মধ্য দিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে এক দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যা পরবর্তীতে ইসলামের প্রচার, প্রসার ও মহানবী (সা.)-এর নিরাপত্তা ও যুদ্ধকৌশলে বিশেষ অবদান রাখে।

ঠিক কত বছর বয়সে মা আয়েশা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়ে মহানবী (সা.)-এর ঘরে আসেন, তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। তবে তিনি যে নিতান্ত বালিকা অবস্থায় কিংবা কম বেশি ১০ বছর বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এ বিষয়ে একমত অধিকাংশ গবেষক ও মহানবী (সা.)-এর জীবনী রচনাকারীগণ। ৬২২ সালে হজরত আবু বকর (রা.) গোপন পথে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন। এ ঘটনার সময় মা আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল ৯ বছর। মা আয়েশা (রা.)-এর মা উম্মে রুমানও ছিলেন প্রথম দিককার মুসলমান এবং মহানবী (সা.)-এর বিশিষ্ট ভক্ত। ফলে মহানবী (সা.) ও হজরত আবু বকর (রা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরতের পর তিনিও (উম্মে রুমান) মদিনায় পাড়ি জমান এবং হিজরতে যাওয়া মুসলমানদের সঙ্গে শরিক হন। অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ও লেখকের মতে, হিজরতের পর মদিনায় প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং মা আয়েশা (রা.)-এর বিবাহ সম্পন্ন হয়।

মহানবী (সা.) মা আয়েশা (রা.)-কে অত্যন্ত স্নেহ করতেন ও প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতেন। উভয়ের মধুর দাম্পত্য সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার অনেক তথ্য ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়েছে। মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি আয়েশা (রা.)-কে সর্বাপেক্ষা বেশি ভালোবাসেন বলে বলতে শুনেছেন সাহাবিদের অনেকেই। রাতের অন্ধকারে নির্জন মরুভূমিতে তারা দুজন দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। এতে প্রথমদিকে মা আয়েশা বিজয়ী হলেও পরের দিকে তাঁর ওজন বৃদ্ধি পাওয়ায় মহানবী (সা.) বিজয়ী হতেন বলে মা আয়েশার বর্ণনায় উঠে আসে ইতিহাসের পাতায়। ঐতিহাসিকদের আরও দাবি, মহানবী (সা.) গৃহকাজে মা আয়েশাকে সাহায্য করতেন। বিভিন্ন বিষয়ে মা আয়েশার সঙ্গে পরামর্শও করতেন মহানবী (সা.)। অল্প বয়সেই তিনি জ্ঞানী ও বিদূষী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর কাব্য প্রতিভা এবং ইতিহাস ও চিকিৎসাবিষয়ক জ্ঞান সমাদৃত ছিল। মহানবী (সা.) তাঁর মূল কর্মক্ষেত্র ‘মসজিদ আল নববী’র অতি সন্নিকটে মা আয়েশা (রা.)-এর জন্য ঘর নির্মাণ করেন এবং এমনভাবে দরজা তৈরি করেন, যেন সহজেই তিনি মা আয়েশা (রা.)-কে দেখতে পান। তীক্ষè স্মৃতিশক্তির কারণে মহানবী (সা.) ধর্মীয় বহু বিধান ‘মা’ আয়েশা’ (রা.)-কে সরেজমিন শিক্ষা দিতেন এবং অন্যদের তা মা আয়েশা (রা.)-এর কাছ থেকে শিখে নিতে পরামর্শ দিতেন।

৬৩২ সালে মহানবী (সা.) মা আয়েশা (রা.)-এর ঘরে ইন্তেকাল করেন এবং এ ঘরেই তাকে সমাহিত করা হয়, যা বর্তমানে মদিনাস্থ মসজিদ আল নববীর রওজা মোবারক নামে অধিক পরিচিত। মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর ৪৬ বছর পর ৬৭৮ সালের ১৬ জুলাই (১৭ রমজান ৫৮ হিজরি) মদিনাতেই মৃত্যুবরণ করেন মা আয়েশা (রা.)। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি পারিবারিক জীবন ও দাম্পত্য বিষয়ে মহানবী (সা.)-এর দর্শন ও জীবনাচার এবং হজ ও উত্তরাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা বর্ণনা করেন। তাঁর জবানিতে দুই হাজারেরও বেশি সহি হাদিস বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। তিনি নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করেন এবং তাঁর ঘরে ইতিহাসের প্রথম মহিলা মাদ্রাসা গড়ে তোলেন। অনেক পুুরুষ শিক্ষার্থী পর্দার অন্তরালে থেকে মা আয়েশা (রা.)-এর কাছ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা নিতেন। একজন ইতিহাসবিদ মনে করেন, মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর যে ‘ফিতনা’ বা গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তার জেরে মা আয়েশা (রা.)-কে তাঁর ঘরেই হত্যা করা হয়। ইমাম আবু হুরাইরার ইমামতিতে জানাজা পড়ানোর পর মদিনাস্থ জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে মা আয়েশা (রা.)-কে সমাহিত করা হয়।

আদরের কন্যা ফাতেমা (রাযি.)

কন্যাসন্তানের প্রতি একজন আদর্শ পিতার স্নেহ-ভালোবাসা কত নিগূঢ় গভীর হতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আর এই স্নেহ-ভালোবাসা লাভের বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন তাঁর প্রিয় কন্যা ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ (রা.); যিনি মুসলমানদের মাঝে মা ফাতেমা (রা.) নামে অধিক পরিচিত। আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে তিনি হলেন, ‘খাতুনে জান্নাত ফাতেমা জননী, বিশ্বদুলালী, নবী নন্দিনী।’ মা ফাতেমা ছিলেন মহানবী (সা.) এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী বিবি খাদিজা (রা.)-এর কনিষ্ঠ কন্যা। অনেকের মতে, তিনি ৬০৯ সালে পবিত্র  কোরআন নাজিল তথা মহানবী (সা.)-এর নবুয়াত প্রাপ্তির পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। আবার অনেকের বিশেষত শিয়াদের ধারণা, মহানবী (সা.) নবুয়াত প্রাপ্তির পর জন্মগ্রহণ করেন মা ফাতেমা (রা.)। তাই তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত। আরবের তৎকালীন প্রথা অনুসারে মা ফাতেমা (রা.)-কে কখনো কোনো বেদুইন গ্রাম বা দুধ-মার কাছে পাঠানো হয়নি। বরং তিনি পরম আদরের বাবা মুহাম্মদ (সা.) এবং মা খাদিজা (রা.)-এর ঘরে লালিত- পালিত হন। ৬১৯ সালে মা খাদিজা (রা.)-কে হারিয়ে অত্যন্ত ভেঙে পড়েন ফাতেমা (রা.)। এরপর হজরত মুহাম্মদ (সা.) একই সঙ্গে বাবা ও মার স্নেহ দিয়ে মা ফাতেমা (রা.)-কে গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে হজরত মুহাম্মদ (সা.) মা ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ের কথা চিন্তা করেন। তাঁকে স্ত্রী হিসেবে পেতে অনেকেই আগ্রহী থাকলেও মহানবী (সা.) তাঁদের বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন না। এক পর্যায়ে হজরত আলী (রা.) আগ্রহী হলেও মহানবী (সা.)-এর সামনে তা প্রকাশ করতে পারছিলেন না। তা ছাড়া তৎকালে প্রথা অনুসারে বিয়ের সময় কন্যার বাবাকে উপহার বা মোহরানা দেওয়ার মতো সম্পদও ছিল না হজরত আলী (রা.)-এর কাছে। বিষয়টি অনুধাবন করে মহানবী (সা.) নিজেই উদ্যোগ নেন এবং হজরত আলী (রা.)-এর কাছে থাকা যুদ্ধের ঢাল বিক্রি করে মোহরানার টাকা জোগাড় করার পরামর্শ দেন। কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি নীরব থাকেন, যা মহানবী (সা.) সম্মতি বলেই ধরে নেন। এমনই এক প্রেক্ষাপটে মহানবী (সা.) এর পরিচালনায় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে মা ফাতেমা (রা.) এবং হজরত আলী (রা.)-এর শুভবিবাহ সম্পন্ন হয়। অধিকাংশের মতে, মহানবী (সা.) তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদের নিয়ে মক্কা ছেড়ে মদিনা গমন করার ২-৩ বছর পর এই বিয়ে হয়। বিয়ে উপলক্ষে মহানবী (সা.)-এর দুজন স্ত্রী মা আয়েশা (রা.) এবং মা উম্মে সালমা হরেকরকম খাবার তৈরি করেন। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হজরত ওসমান বিন আফ্ফান (রা.)। যিনি হজরত আলী (রা.)-এর ঢাল ক্রয় করে মোহরানার টাকা প্রদান করেন আবার একই ঢাল বিয়ের উপহার হিসেবে হজরত আলী (রা.)-কে ফেরত দেন। মা ফাতেমা (রা.) প্রথম জীবনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী প্রথম দিককার মুসলমানদের ওপর অবিশ্বাসীদের অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেন। বিয়ের পর তিনি প্রত্যক্ষ করেন দারিদ্র্যের কশাঘাত। মহানবী (সা.)-এর কন্যা হয়েও তিনি নিজ হাতে ঘরের সব কাজ করতেন এবং ক্রমাগত ভারী কাজ করার ফলে তার হাতে ও শরীরের অন্যান্য অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়। হজরত আলী (রা.) জীবিকার টানে ঘরের বাইরে অনেক পরিশ্রম করতেন। এরই মাঝে তাদের কোলজুড়ে আসে তিন পুত্র ও দুই কন্যা, যাদের অন্যতম ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হোসেন (রা.)। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে ওহুদের যুদ্ধে আহত বাবা হজরত মুহাম্মদ (সা.), স্বামী হজরত আলী (রা.)-সহ অন্যদের সেবা প্রদান এবং শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়ে মা ফাতেমা (রা.) অনন্য নজির স্থাপন করেন। মা ফাতেমা (রা.) ঠিক কবে কখন মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর জানাজা ও কবর কখন কীভাবে হয়েছিল, এ নিয়ে শিয়া ও সুন্নি ও ইতিহাসবিদগণ বহুভাগে বিভক্ত। তবে সবাই একমত যে, মা ফাতেমা (রা.) পৃথিবীতেই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর