শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়া

রাজনীতি, আইনপেশা আর টকশোতে স্টাইলিশ

শিকড়ের পুরোটা জুড়েই রাজনৈতিক আবহ। বাবা মরহুম এম এ সাত্তার ভূঁইয়া ছিলেন ঢাকার ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তাকে দেখেই রাজনীতির প্রতি আগ্রহ। কিন্তু সবার আগে দরকার প্রস্তুতি, দরকার যথাযথ শিক্ষা। এ লেভেল শেষ করেই পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। লন্ডনের বিখ্যাত লিংকনস ইন থেকে বার অ্যাট ল’ শেষ করে ফিরে আসেন দেশে। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে টিভি চ্যানেলের টকশোগুলোতে তার নিয়মিত পদচারণা। তিনি ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়া। তার আদ্যোপান্ত জানাচ্ছেন- রণক ইকরাম

রাজনীতি, আইনপেশা আর টকশোতে স্টাইলিশ

আমি নিজেকে একজন ইয়ুথ আইকনে পরিণত করতে চাই। আমি চাই আমার মতো তরুণরা রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন। তারা যেন বুঝতে পারেন রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে থেকে কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। পরিবর্তনের স্বপ্নটাকে মহান সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে

লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি কিংবা বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া তরুণের সংখ্যা খুব বেশি নয়। সেক্ষেত্রে ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়াকে মোটামুটি ব্যতিক্রম বলা চলে। এই ব্যতিক্রম হওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে? প্রশ্ন করতেই একটু হাসলেন তিনি। বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির প্রতি একটা আগ্রহ ছিল। বাবার সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে বুঝেছি মানুষের ভালোবাসা কত বড় জিনিস। রাজনীতি ছাড়া এত মানুষের কাছাকাছি থাকার আর কোনো উপায় আছে বলে আমার মনে হয় না। তা ছাড়া আমাদের দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন দরকার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই পরিবর্তনটা তরুণদের হাত ধরেই হবে।’

মেধাবী আর শিক্ষিত প্রজন্ম রাজনীতিতে সক্রিয় হলে আসলেই একটা পরিবর্তন সূচিত হবে। প্রাসঙ্গিকভাবে আহসান হাবীব মনে করিয়ে দিলেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের উত্তরণ এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ক্ষেত্রে তরুণদের অদম্য ভূমিকার কথা। সেই চিন্তা থেকেই রাজনীতিতে এগিয়ে আসা। বুকে বিশ্বাস তার দেখাদেখি আরও অনেক শিক্ষিত মেধাবী তরুণ হয়তো এগিয়ে আসবে রাজনীতিতে। আর এভাবেই পাল্টে যাবে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ।

পেশাগত জীবনের গল্প আমাদের মুখ্য আলোচনা নয়। কিন্তু কারও পেশাই তার জীবনযাত্রার বাইরে নয়। ছোটবেলা থেকেই বেশ ফিটফাট প্রকৃতির ছিলেন আহসান হাবীব। চেহারায় আভিজাত্যের ছোঁয়া থাকলেও জানালেন সাধারণ থাকতেই বেশি পছন্দ। কোর্ট আর এ ধরনের কোনো অফিসিয়াল কাজ ছাড়া ক্যাজুয়াল থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। তার কাছে ফ্যাশনের সংজ্ঞাটাও সাদামাটা। ‘ফ্যাশন মানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা।’ তাই যখন যে পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং মানানসই মনে করেন, সেটাকেই ফ্যাশন বলে মনে করেন তিনি। সব ধরনের পোশাক পরারই অভ্যাস আছে তার। তবে বিষয়টা যখন একেবারে অন্দরমহলের, তখন একটু পরিবর্তন আছে বৈকি। বাসার ভিতর ট্রাউজার আর টি-শার্ট পরতে বেশি পছন্দ করেন।

 

তাকে প্রথম দেখায় কেউ বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। মনে হতে পারে সিনেমার নায়ক-টায়ক কেউ নন তো? এ ধরনের কমপ্লিমেন্টে একটু বিভ্রান্ত হলেও বিষয়টা উপভোগ করেন। বললেন- ‘যে কোনো কমপ্লিমেন্টই আসলে উপভোগ করার মতো।’ দেখে বোঝা না গেলেও তিনি নিয়মিত ক্রিকেট এবং ফুটবল খেলতেন। লন্ডনে বিশ্ববিদ্যালয় দল এবং নির্মাণ স্কুল টুর্নামেন্টে খেলেছেন। এখন অবশ্য সেসব কেবলই স্মৃতি। তবে সময় পেলে টেলিভিশনে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল দেখতে ভুল করেন না।

 

আপাদমস্তক বিনয়ী এই মানুষটির প্রিয় খাবার গরুর মাংস, ডাল আর চিংড়ি মাছ। পড়ালেখার সূত্রে দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। তাই রান্না-বান্না শেখা হয়েছিল। সেই বিদ্যাটা এখনো মাঝে মাঝে কাজে লাগান। সময়-সুযোগ পেলে পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের রেঁধে খাওয়াতে পছন্দ করেন। বিদেশে থাকলেও তার রান্নার মেন্যুতে সবসময় দেশি খাবারই থাকে। ঘুরে বেড়াতে খুব ভালো লাগে। ব্যস্ততা খুব বেশি অবসর না দিলেও মনের ভিতর ইচ্ছা আছে সারা বিশ্ব ঘুড়ে বেড়ানোর। স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। তার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন সেই স্বপ্ন সাকারের চেষ্টা করতে। নিজের সবচেয়ে বড় গুণ মনে হয় নিজের আÍবিশ্বাসকে। সেটাকে কাজে লাগিয়েই এগিয়ে যেতে চান সাফল্যের শেষ প্রান্তে। এতসব পজিটিভ ব্যাপার যার মধ্যে তার সবচেয়ে নেগেটিভ দিক কী? সাত-পাঁচ না ভেবেই কনফিডেন্টলি উত্তর দিলেন- ‘আমি খুব আবেগি একটা মানুষ। সবসময় আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তবে সময়ের পরিক্রমায় নিজেকে অনেক সামলে নিয়েছি। আগামীতে হয়তো আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’

আইনবিদ হিসেবে যেমন নিজেকে সাফল্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান, তেমনি সাফল্য পেতে চান রাজনীতিতেও। এক্ষেত্রে তার গোপন স্বপ্নটা হচ্ছে রাজনীতিতে শিক্ষিত তারুণ্যের প্রবেশ ঘটানো। বললেন- ‘আমি নিজেকে একজন ইয়ূথ আইকনে পরিণত করতে চাই। আমি চাই আমার মতো তরুণরা রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন। তারা যেন বুঝতে পারে রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে থেকে কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। পরিবর্তনের স্বপ্নটাকে মহান সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। এরপর সিস্টেমের মধ্যে থেকেই গণতান্ত্রিক চর্চা এবং সত্যিকার জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের অংশীদার হতে হবে।’

চোয়াল শক্ত করেই নিজের আÍবিশ্বাসী ভাবনার কথা জানালেন আহসান হাবীব। বছর তিনেক আগে জারিন তাসনিম চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। মজার ব্যাপার হলো স্ত্রীও ব্যারিস্টারি পড়ছেন। জীবনসঙ্গীকেও আইনপেশার সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন তিনি। পরিবর্তনের স্বপ্নটা পূরণের জন্য স্ত্রীর সমর্থনটাও কিন্তু দারুণ জরুরি। আর ব্যারিস্টারি পাস করার পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার একটা সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হবে তার সামনে। ব্যক্তিগত জীবনে কতটা সুখী তিনি? হেসে বললেন- ‘অবশ্যই অনেক সুখী। যদিও সুখের ব্যাপারটা আপেক্ষিক, এরপরও আমি অল্পতে তুষ্ট থাকার মন্ত্র শিখেছি। এ কারণে অপূর্ণতা বা অপ্রাপ্তির বিষয়গুলো আমার মধ্যে খুব বেশি কাজ করে না। সবসময় সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করি।’

আসলেই তো! অপ্রাপ্তি নিয়ে বসে থাকলে তো কখনো সুখী হওয়া যাবে না। সুখ অনুভবের মন্ত্রটা তাহলে এই। ব্যারিস্টার আহসান হাবীব দেশ নিয়ে যে স্বপ্নটা দেখছেন, যে পরিবর্তনের কথা বলেছেন, সেটা কিন্তু সাধারণ মানুষেরও স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নটা পূরণ হলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে সাধারণ মানুষই।

সর্বশেষ খবর