শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ট্রেন্ডি চুলের হালচাল

ট্রেন্ডি চুলের হালচাল

♦ মডেল : জাকিয়া সুলতানা কর্ণিয়া ♦ ছবি : মঞ্জুরুল আলম

লুকটি চাই সব সময়ই ট্রেন্ডি। আর সেই লুক সবচেয়ে বেশি হাইলাইট করতে পারে উপযুক্ত হেয়ার স্টাইল। তবে বর্তমানে কোনো একটি বিশেষ স্টাইলে তরুণীরা বুঁদ হয়ে নেই। মানা হচ্ছে না কোনো বিশেষ ব্যাকরণ। আজকাল স্টাইলিশ চুল বলতে সুন্দর, মসৃণ, কালো, লম্বা, সিল্কিসহ আরও কিছু বিশেষণ জুড়ে দেওয়া হয় না। এসবের বিপরীতে হাঁটাও হাল আমলের স্টাইলে পরিণত হয়েছে। চেহারায় নতুনত্ব আনতে এসব স্টাইলের জুড়ি নেই। আজ ট্রেন্ডি চুলের হালচাল জানাচ্ছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

সময়ের সঙ্গে বদল হয় রুচির। তার সঙ্গে বদলায় মানুষের চুল শোভিত করার পদ্ধতি। বেশ কয়েক বছর ধরে মেয়েদের চুলের কাটে নানা পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। কখনো বিশেষ কোনো কাটে ঝুঁকেছেন তরুণীরা। আবার কখনো সিল্কি চুলে মজেছেন। কখনো বেড়েছে লম্বা চুলের কদর আবার কখনো ছেঁটেকেটে কাঁধের ওপর তোলায় হয়েছে চলতি ফ্যাশন। তবে সর্বশেষ দেখা গেছে অন্যান্য সব পদ্ধতির সঙ্গে রঙিন চুল খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। এখন স্কুলপড়ুয়া থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং নানা বয়সী ভিন্ন পেশার রমণীর কাছে চুল রঙিন করাটা প্রিয় ফ্যাশন। তাই বলাবাহুল্য, চুলের ওপর কৃত্রিম রঙের আধিপত্য বেড়েছে। চুলের কাটও যেমন পছন্দসই হওয়া চাই তেমনি চাই চুলের পছন্দসই কোনো রং।

প্রথমদিকে অল্প সংখ্যক মেয়েকে চুল রঙিন করতে দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ মেয়ের চুলেই শোভা পাচ্ছে হরেক রকম রং। তখন কেউ কেউ দু-এক গোছা চুলে রং করত। কখনো তা কপালের ওপরের চুলে থেকেছে, কখনো মাথার পেছনের চুলে। কখনো চুলের শেষ মাথায় কিছুটা রং ছড়িয়েছে আবার কখনো চুলের গোড়ার দিকে গাঢ় রঙের দাপট। তবে সে যাই হোক, বর্তমানে যেন কোনো ধরাবাঁধা নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না কেউ। পুরো মাথাজুড়ে থাকছে রঙের অদলবদল খেলা। অর্থাৎ ‘ফ্লুইড হেয়ার পেইন্টিং’-ই আজকাল মেয়েদের বেশি পছন্দ হচ্ছে। এই স্টাইলে কালো চুলের ফাঁকে ফাঁকে রঙিন চুল অথবা রঙিন চুলের ফাঁকে ফাঁকে কালো চুল দেখা যায়। তবে বেলেইয়াশ, অমব্রে, বেবিলাইট, হেয়ার গ্লস, স্প্ল্যাশলাইটও তরুণীদের খুব পছন্দের স্টাইল হিসেবে উঠে এসেছে। এর প্রতিটি স্টাইলে চুলে রঙের আধিক্য থাকে।

এ তো গেল চুলের রং-কাহন। এখন আসা যাক চুল সাজিয়ে রাখার বৃত্তান্তে। আড্ডা, ক্লাস বা শপিংয়ে যাচ্ছেন। আপনার চুল যথারীতি একটি স্টাইলিশ কাটের এবং রঙিন। আপনাকে চুলের পরিপাটির কথা ভাবতেই হবে না। কারণ যুগ এখন এমনই। এখন অনেকেই ব্যাক ব্রাশ করে মাথার চুলকে ফুলিয়ে সেট করে নিচ্ছেন। অথবা জটহীন এলোমেলো চুলকে আঁকাবাঁকা করেই পাঞ্চ ক্লিপে আটকে নিচ্ছেন। আজকাল আর রমণীরা ভাবছেন না, সুন্দর লুক পেতে চুল মসৃণ বা সিল্কি হতে হবে। আগের দিনে যেটাকে রুক্ষ্ম চুল বলা হতো, সেটাও আজ স্টাইলিশ লুক আনছে। আর সে কারণেই হয়তো মসৃণ চুলকে মেশিনে পাফ করে এমন লুক আনা হচ্ছে। কারও কারও দেখা যাচ্ছে এলোমেলো চুলগুলো মাথার ওপর পনিটেইল করে ছেড়ে রাখছেন, আর তাতেই বা কী যায় আসে। লুকটা যে জবরদস্ত থাকছে তা ফ্যাশন সচেতনদের মানতেই হবে।

লম্বা চুলে বেণি করার স্টাইল আগেও ছিল এখনো আছে। কিন্তু এখন কিছুটা ভিন্নতা দেখা দিয়েছে। লুজ বেণি করে দু-একটি স্টিক টেনে তা ফুলিয়ে রাখা হচ্ছে। আর রঙিন চুলে স্টাইলটি মানিয়েও যায় ভালো। সিঁথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তিনি পছন্দ করেন চুল লম্বা থাকুক। তার ধারণা, ‘সবাই চাইলেও লম্বা চুলের অধিকারী হতে পারেন না। তাই আমার চুল যেহেতু লম্বা হয় কেন অযথা কেটে তাকে খাটো করব।’ সিঁথি চুলের স্টাইলে একচুলও ছাড় দিতে চান না। লম্বা চুলে তার রয়েছে লেয়ার কাট। আর চুল রঙিন করেছেন ফ্লুইড হেয়ার পেইন্টিং স্টাইলে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে চুলের পেছনে তাকে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হয় না। কোনো মতে পাঞ্চ ক্লিপে পেঁচিয়ে নেন, বেণি করেন অথবা ছেড়ে রাখেন। চুলকে রাফ লুকে রাখেন তবে নিষ্প্রাণ নয়। আর সেজন্য নিয়মিত চুলের যত্নও নেন।

সময় যত আধুনিক হচ্ছে মানুষ তত সংক্ষিপ্ত উপায় বের করে নেন। কোনো কাজের জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে চান না। রমণীদের চুলের এখনকার স্টাইলও হয়েছে এমনিভাবে সময় উপযোগী। লুক আনবে ট্রেন্ডি কিন্তু আপনাকে সময় খোয়াতে হচ্ছে খুবই সামান্য। ব্যস্ত জীবনে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সব বিষয়কে মাথায় রেখেই হয়তো তরুণীরা বেছে নিয়েছেন হাল আমলের চুলের স্টাইল।

নিজেকে আধুনিক সাজে উপস্থাপন করতে কে না চায়? কিন্তু সেখানেও দরকার কিছু সচেতনতা। প্রথমবার যারা চুল রং করার কথা ভাবছেন তাদের বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নইলে অদক্ষভাবে রং করলে আপনার চুলের যথেষ্ট ক্ষতি হতে পারে। চুল রং করার জন্য কোনো নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রথমে হালকা রং করুন, পরে প্রয়োজনে গাঢ় রং করুন। এতে, কালার ব্যালান্স ঠিক থাকে। চুল রং করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জানা উচিত যে, এটি সাময়িক সময়ের জন্য নয়। তাই প্রথমে আলগা বা ফলস কালার দিয়ে নিজেকে আয়নায় ভালো করে দেখুন। যে স্টাইল আপনার সঙ্গে মানাবে সেটিই করা উচিত। চুল রঙিন করার পর চুলে কিছুটা জট লাগার প্রবণতা দেখা যায়। তবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের এ প্রবণতা অনেকখানি কমে যায়। চুলের রং পরিবর্তন করলে আপনার মুখের উজ্জ্বলতায়ও পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে যদি গাঢ় কোনো রং ব্যবহার করেন তাহলে আপনার মুখের উজ্জ্বল বলে মনে হবে। অন্যদিকে হালকা রং ব্যবহার করলে আপনার মুখের উজ্জ্বলতা কম বলে মনে হবে। এ ছাড়া চুলের রং পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রুর রংকেও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় তা বেমানান মনে হতে পারে। অনেকে আছেন যারা মাঝে মাঝে চুলের রং পরিবর্তন করেন। নিজেকে নতুনভাবে সাজাতে চান। এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রথমেই চুল গাঢ় রং না করে হালকা রং করে দেখা যেতে পারে। এরপর প্রয়োজনে তা গাঢ় করতে পারবেন। কিন্তু প্রথমেই যদি গাঢ় রং করে ফেলেন তাহলে হালকা রং করার আগে ব্লিচ করে আগের রং ওঠাতে হবে। এতে চুলের ওপর বাড়তি ধকল পড়বে। তাই প্রথমে হালকা রং করুন, পরে প্রয়োজনে গাঢ় রং করুন। আপনার চুল প্রথমবার রং করার পর রুক্ষ আর জট লাগার প্রবণতা দেখা দেবে। তাই কিছুদিন পরপর পরিচর্যা করতে হবে। চুলে রং করার পরিকল্পনা থাকলে আগেও পরিচর্যা করতে হবে। তাহলে আপনার চুল যেভাবেই রঙিন হোক না কেন তার আর ভঙ্গুর আর নিষ্প্রাণ হবে না। মনে রাখতে হবে, এলোমেলো চুলের স্টাইল চললেও নিষ্প্রাণ ও ভঙ্গুর চুল কখনই কারও কাম্য নয়। তাই দরকার চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। আপনার শখের চুলের যত্নে নিম্নোক্ত কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

— চুল শক্ত করতে এবং ভলিউম বাড়াতে কালার করানোর আগে নিয়মিত ডিপ কন্ডিশন করুন। ডিম, কলা এবং টকদই সমান পরিমাণে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে এই হেয়ার প্যাকটি চুলের গোড়ায় এবং সারা চুলে ভালো মতো লাগিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন। তবে চুলের রুক্ষতা এবং ড্যামেজ অনুযায়ী আরও বেশি সময় রাখতে পারেন। এরপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুল ডিপ কন্ডিশন করে একে নরম ও ময়েশ্চারাইজড রাখে।

— চুলে সপ্তাহে অন্তত একবার হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করুন। সেজন্য পরিমাণ মতো অলিভ অয়েল, আমনড অয়েল এবং নারিকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে হালকা গরম করে চুলের গোড়ায় ভালো মতো ম্যাসাজ করুন।

— যতটা সম্ভব হেয়ার ড্রায়ার, কালার বা চুল আয়রন করা থেকে বিরত থাকুন। এসব জিনিস আপনার চুল রুক্ষ, ভঙ্গুর ও ঝরে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর