শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বৈশাখী সাজ

বৈশাখী সাজ

♦ মডেল : দোয়েল ও তারিন ♦ পোশাক : রঙ বাংলাদেশ ♦ মেকওভার : সেগুফ্তা ও নিসা ♦ ছবি : জয় কে রয়

বাঙালির প্রাণের উৎসব দোরগোড়ায়। সাজ সাজ রবে সেজে উঠছে তারুণ্য। উৎসব কেন্দ্রিক অগ্রসর হচ্ছে নগর, বন্দর ও গ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশ। রঙিন বৈশাখ, রঙিন দিন। চারদিকে রঙের খেলা। প্রতি বছর বৈশাখ আসে নতুন আবহ নিয়ে। সেই আবহে সাজে গোটা নগরী। রঙিন হয়ে ওঠে পাড়া-মহল্লা সবকিছু। আর এই উৎসবে চলনে-বলনে চাই বাঙালিয়ানা। নানা রঙে আর বিচিত্র পোশাকে সেজে ওঠে সবাই। রোদের দাবদাহ আর গরম আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে সেজে লাল-সাদার আবহকে সঙ্গী করে কীভাবে সেজে উঠবেন তার বিস্তারিত জানাচ্ছেন— ফেরদৌস আরা

 

বৈশাখ মানেই বাঙালিয়ানা। বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি মানেই পয়লা বৈশাখ। বৈশাখ মানেই একরাশ হতাশা আর ব্যর্থতার পাহাড় ডিঙিয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া। গ্রাম থেকে শহর— প্রতিটি আনাচে-কানাচে বৈশাখের আগমনে প্রাণের জোয়ার জাগে বাঙালির জীবনে। মানুষ একটি বছর অপেক্ষা করে থাকে পয়লা বৈশাখের জন্য। গাছে গাছে আম, রুদ্র আকাশ, বর্জ্যের হুংকার, কৃষ্ণবর্ণ মেঘ, ঝড়ো হাওয়া ও হঠাৎ বৃষ্টি মনে করিয়ে দেয় এসেছে বৈশাখ।

 

চৈত্রের বিদায় বেলায় নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বাঙালির প্রস্তুতির কমতি নেই। বছরের এই প্রথম দিনকে সাদরে গ্রহণে ধর্ম-বর্ণ-সমাজ-নির্বিশেষে থাকে না কোনো আবেগিক বাধা। বাঙালির মেলবন্ধনের অন্যতম প্রধান উৎসব এই পয়লা বৈশাখ। দিনটিকে উদযাপন করতে সবার তোড়জোড় অনেক। আটপৌঢ়ে বা কুচি যেমনই হোক লাল সাদা শাড়িতে এ দিন নারীরা সাজবে অপ্রতিম রূপে। কপালে লাল টিপ, খোঁপায় ফুলের মালা, হাতভর্তি কাচের চুড়ি—সাধারণ এ অনুষঙ্গগুলোই বৈশাখের সাজে বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে অনন্য।

বাংলা বছরের প্রথম দিন মানেই গরম। প্রচণ্ড রোদ ও গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পথে-ঘাটে থাকে উৎসবমুখী মানুষের ভিড়। কিন্তু তারপরও সাজে কমতি করা চলে না এতটুকু। হালকা ভারী সব সাজই গ্রহণযোগ্য। পছন্দ ভেদে উপস্থিতি ঘটে একেক জনের একেকভাবে। এবারের পয়লা বৈশাখে আপনার সাজ কেমন হচ্ছে?

 

 

বছরের প্রথম দিনে নবসূর্যে স্নাত সকালে  সাজ-পোশাকে বাঙালিয়ানা না থাকলে কী চলে! তাছাড়া প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যও পাওয়া যায় যে কোনো উৎসবে। বন্ধু, পরিচিত জনদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে দিনটি বেশ উপযুক্ত। তাই সাজপোশাক থাকবে একটু স্পেশাল। এই দিনে ভারী সাজ যেমন বেমানান তেমনি হালকা স্নিগ্ধ সাজ উপযুক্ত। তবে গরমে বেশিক্ষণ সাজ ধরে রাখতে ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ বেস্ট। দিনের বেলায় বেশ হবে হালকা। মেকআপ অবশ্যই ম্যাট হতে হবে। চোখে রংচঙে শেড না দিয়ে বেছে নিতে পারেন নিউট্রাল রং। তাহলে কি পয়লা বৈশাখের সাজে লালের ছোঁয়া থাকবে না? ঠোঁট রাঙাতে পারেন লাল রঙে। শাড়ির সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী সাজ দিতে চাইলে কপালে লাল টিপ থাকলেই পূর্ণতা পাবে। এমনটাই জানান ওমেন্স ওয়ার্ল্ডের পরিচালক ও বিশিষ্ট রূপ বিশেষজ্ঞ ফারনাজ আলম।

 

 

তবে মেকআপ শুরুর আগে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তপ্ত রোদে বের হবেন! তাই শুরুতেই বরফ টুকরো নিয়ে মুখে ও গলায় হালকাভাবে কিছুক্ষণ ঘষে নিন। এতে মেকআপ নষ্ট হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। মেকআপ ফ্রেশ দেখাবে। তুলোয় অ্যাস্ট্রিনজেন্ট লোশন বা টোনার দিয়ে মুখ মুছে নিন। তারপর আপনি যে ক্রিমে অভ্যস্ত সেটি মেখে নিন। আর সানস্ক্রিন নিতে ভুল করা চলবে না। মুখে বেশি দাগ থাকলে কনসিলার ব্যবহার করতে হবে। মুখ ফ্রেশ থাকলে শুধু ফাউন্ডেশনই যথেষ্ট। চাইলে ম্যাট ফাউন্ডেশন লাগাতে পারেন। চোখের নিচের কালি ও মুখে দাগ ঢাকতে অল্প পরিমাণে কনসিলার লাগিয়ে স্পঞ্জ বা ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। সব শেষে কমপ্যাক্ট পাউডার লাগিয়ে নিন। মুখের মেকআপ হয়ে গেলে হালকা ব্লাশঅন না দিলে সব প্রচেষ্টাই যেন ব্যর্থ। গায়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে হালকা গোলাপি বা বাদামি ব্লাশন ব্যবহার করতে পারেন। যাদের মুখের আকৃতি ভারী তারা মুখ লম্বাটে দেখাতে লো যোয়া লাইন এবং মিডলে ডিপ ম্যাজেন্টা বা হালকা কফি ব্লাশঅন ব্যবহার করতে পারেন। পয়লা বৈশাখে বেছে নেওয়া আপনার পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কাজল দিয়ে চোখ এঁকে নিন। এবার মানানসই আইশ্যাডো দিলে ভালো লাগবে। আলগা পাপড়ি ভালো দেখায় তবে পাপড়ি লাগাতে না চাইলে ভালো করে মাশকারা লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না। লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙাতে লিপলাইনার দিয়ে ঠোঁট এঁকে নিন। ম্যাট লিপস্টিকই গরমে ভালো। চোখে গাঢ় সাজ হলে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিন। এই দিনে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গাঢ় লিপস্টিকও খারাপ না। ব্যাস পূর্ণ হয়ে গেল পয়লা বৈশাখে রমণীর সাজগোজের সাতকাহন।

 

এদিন সব বয়সীর পোশাকেই থাকবে উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়া। পার্থক্যটা থাকে মূলত মেকআপ ও অনুষঙ্গে। নিজেকে ভিন্ন লুকে দেখাতে চাইলে নানা ঢঙে শাড়ি পরতে পারেন। মাঝবয়সী কেউ কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরতে পারেন, সঙ্গে হাতখোঁপা আর কপালে গোল টিপে ছিমছাম সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। চাইলে এক প্যাঁচের শাড়িও পরতে পারেন এই দিনে। সঙ্গে টিকলি বা নথ, পুরোপুরি দেশি ঢঙে সেজে উঠতে পারেন। সাদামাটা শাড়ির সঙ্গে রঙিন গয়নায় সাজে সামঞ্জস্য আনা যেতে পারে। শাড়িটি যদি হয় রংচঙে, তাহলে মেকআপ ও গয়নার রং হালকা হলেই ভালো মানাবে। সবাই তো আর শাড়িতে অভ্যস্ত নন। শাড়ির প্যাঁচে নিজেকে না দেখাতে বেছে নিতে পারেন কামিজ, কুর্তা, ফতুয়া, স্কার্ট বা ধুতি-পায়জামা। এসব পোশাকের ক্ষেত্রে চুল সামনে একটু পাফ করে নিয়ে পনিটেল বা স্টাইলিশ কোনো বেণি করে নিতে পারেন। দিনে যারা বের হবেন না বা হলেও ছিলেন ছিমছাম সাজে, তারা রাতের নিমন্ত্রণে চুলটা সুন্দর করে সেট করে ছেড়ে রাখতে পারেন। অথবা চুলটা উঁচু করে বেঁধে ব্যবহার করতে পারেন কোনো হেয়ার অ্যাকসেসরিজ।

 

তবে হ্যাঁ, বেড়ানোর সময় এক রকম সাজ। কিন্তু ঘরে অতিথি আপ্যায়নের সময় নিশ্চয়ই সাজটা তেমন হবে না। ঘরের ভিতর-বাইরের মতো রোদের তাপ সহ্য করতে হয় না। তাই ঘরে চুলের নানা সাজ এবং চড়া মেকআপ নেওয়ার স্বাধীনতা আছে ঠিকই। কিন্তু খোলা চুলে কি শান্তিতে কাজ করা যায়! হাতে এক গাছি চুড়ি থাকলেও মুশকিল। তাই বৈচিত্র্য আনতে পারেন বেশভূষায়। এ সময় স্কার্ট পরতে পারেন, সঙ্গে চুলটা না হয় বেঁধে নিলেন এলোমেলো ঢঙে, কানে পরতে পারেন লম্বা কোনো দুল। এক প্যাঁচে বা আঁচল কুঁচি করে শাড়ি পরতে পারেন। সাজপোশাকে পুরোপুরি বাঙালিয়ানা আনতে এ সময় অবশ্যই হিলের জুতা পরা চলবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর