শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
সুস্বাস্হ্য

ডেঙ্গু নিয়ে কিছু প্রশ্ন

অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ

ডেঙ্গু নিয়ে কিছু প্রশ্ন

মে থেকে অক্টোবর মাস বিশেষ করে বর্ষাকালে থাকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, শীতের আগমনের আগ পর্যন্ত চলতেই থাকবে।  কিন্তু এ বছরের শুরু থেকেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। কারণ মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি। এই পানি  ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার প্রধান প্রজননক্ষেত্র। ফলে মশার বংশবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।  যেহেতু মৌসুমটা ডেঙ্গুর, মশাকে পুরোপুরি নিধন করতে পারিনি, সেহেতু এই সময়ে জ্বরে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণ জ্বর মনে করে অবহেলা না করে, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদিও গত কয়েক বছরে ডেঙ্গু নিয়ে অযথা আতঙ্ক ও ভুলভ্রান্তি অনেকটাই কমে এসেছে, তারপরও থেকে যায় প্রশ্ন।

 

ডেঙ্গু থেকে জীবনাশঙ্কা আছে কি?

সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর তেমন মারাত্মক কোনো রোগ নয়। তবে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও শক সিনড্রোম প্রাণঘাতী হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময়মতো চিকিৎসা নিলে জীবনহানির আশঙ্কা ১% এরও কম। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

 

জ্বর কমে গেলে কি বিপদ কেটে গেল?

ডেঙ্গুতে জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ৬ দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। জ্বর কমে গেলে অনেক রোগী এমনকি অনেক ডাক্তারও মনে করেন রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। আসলে ডেঙ্গু জ্বরের মারাত্মক সমস্যা হবার সময় এটাই। এ সময় প্লাটিলেট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাবার পরবর্তী কিছুদিনকে তাই বলা হয় ‘ক্রিটিকাল পিরিয়ড’। এ সময়টাতেই সবারই সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।

 

ডেঙ্গু জ্বরে কী কী পরীক্ষা কখন করা উচিত?

সাধারণত বেশি টেস্ট করার প্রয়োজন হয় না। সিবিসি এবং প্লাটিলেট কাউন্ট করলেই যথেষ্ট। তবে জ্বরের শুরুতে রক্ত পরীক্ষায় কোনো কিছু শনাক্ত নাও হতে পারে এবং তা রোগনির্ণয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। রোগী এমনকি ডাক্তারও মনে করতে পারেন যে রিপোর্ট ভালো আছে, তাই আর কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। প্লাটিলেট কাউন্ট ৪ বা ৫ দিন পর হতে কমতে শুরু করে, তাই জ্বর শুরুর ৫ বা ৬ দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। আবার অনেকেই দিনে দুই তিনবার করে, একই সঙ্গে একাধিক ল্যাবরেটরি থেকে প্লাটিলেট কাউন্ট করে থাকেন যা অপ্রয়োজনীয়। ১-২ দিনের জ্বরে ডেঙ্গু এনএস-১ এন্টিজেন এবং ৪ থেকে ৬ দিন পর অ্যান্টি ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি করা যেতে পারে। এই পরীক্ষাগুলো রোগ শনাক্তকরণে সাহায্য করলেও চিকিৎসায় কোনো ভূমিকা নেই।

 

রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি?

ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হলেই রোগী ও চিকিৎসক উভয়েই রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। অথচ যদি রক্তক্ষরণ না হয় এবং রোগীর রক্তের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক থাকে, তবে রক্ত পরিসঞ্চালন করার কোনো প্রয়োজন নেই। 

 

প্লাটিলেট কি দিতেই হবে?

ডেঙ্গু জ্বরের ৫ বা ৬ দিনে রোগের স্বাভাবিকতাতেই প্লাটিলেট কমতে থাকে, ২ বা ৩ দিন পর তা বাড়তে শুরু করে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না।

 

একবার ডেঙ্গু হলে আর হয় না?

কথাটা ঠিক নয়। কেননা, ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি ভিন্ন প্রজাতি আছে তাই ৪ বার ডেঙ্গু হবার সুযোগ থাকে। 

 

মা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে কি?

ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাসবাহিত, মশার কামড়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। মায়ের বুকের দুধে এই ভাইরাস থাকে না। ফলে, আক্রান্ত অবস্থায় মা বাচ্চাকে তার বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।

 

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে একত্রে থাকা যাবে কি?

ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াছে রোগ নয়। কাজেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে বিছানায় শোয়া, একসঙ্গে থাকা খাওয়া বা রোগীর ব্যবহার্য জিনিস ব্যবহারে বাধা নেই।

 

অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে কি?

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ, এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। তবে ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ থাকতে পারে, তাই অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। অনেকে মনে করেন ডেঙ্গুতে অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষতি করতে পারে এবং তা পরিহার করতে হবে, যা ভুল ধারণা। 

 

চিকিৎসা কী হবে?

ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসজনিত, সেহেতু উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ও এর সঙ্গে প্রচুর পানি এবং শরবত জাতীয় তরল খাওয়ানোই যথেষ্ট। খেতে না পারলে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন বা গ্লুকোজ ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।

 

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর