শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাতজ্বর ও বাতরোগ এক নয়

বাতজ্বর ও বাতরোগ এক নয়

ছবি : ইন্টারনেট

বাতজ্বর এবং বাতরোগ কিন্তু এক নয়, তবে যারা ছোটবেলায় বাতজ্বরে ভুগেছেন তাদের বাতরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেশি থাকে। আসুন আমরা জেনে নিই বাতজ্বর ও বাতরোগের মধ্যে পার্থক্য কী?

 

বাতজ্বর

এই রোগটিকে মেডিকেল পরিভাষায় রিউমেটিক ফিভার বলা হয়। এটি একটি প্রদাহজনিত রোগ, সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশু-কিশোরদের বেশি হয়ে থাকে। প্রথমে গলায় স্ট্রেপটোকক্কাস নামক অণুজীবের সংক্রমণের পর তার বিরুদ্ধে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা হৃৎপিণ্ড, ব্রেইন, অস্থিসন্ধি ও চামড়া ইত্যাদি স্থানের টিস্যুকে আক্রমণ করে প্রদাহের সৃষ্টি করে, যার ফলে রোগীর হাত ও পায়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হয় ও ফুলে যায় এবং ব্রেইনের প্রদাহজনিত কারণে জ্বর ও কাঁপুনি দেখা দেয়। হৃৎপিন্ডের প্রদাহের কারণে বুকে ব্যথা ও শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এমনকি চামড়ায় লাল দাগ দেখা যায়।

 

বাতরোগ 

বাতরোগ বা আর্থ্রাইটিস এক ধরনের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির প্রদাহজনিত রোগ। বাতরোগ কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- 

১. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস

২. গাউটি আর্থ্রাইটিস

৩. জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস

৪. সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস

৫. অস্টিও আর্থ্রাইটিস

৬. অ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস।

 

এর মধ্যে জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস ছাড়া বাকিগুলো পূর্ণবয়স্কদের হয়ে থাকে, তার মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও  অ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস সাধারণত ২৫-৩০ বছর বয়সে প্রথম দেখা দেয় এবং অস্টিও আর্থ্রাইটিস ৫০-এর অধিক বয়স্কদের হয়ে থাকে।

 

১. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস

এটি একটি অটোইম্যুউন ডিজিজ, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বাইরে। এটি সাধারণত ২৫-৩০ বছর বয়সে প্রথম দেখা দেয়, তবে যারা ছোটবেলায় বাতজ্বরে ভুগেছেন তাদের রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এই রোগে হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হয়, ফুলে যায়, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় খুব বেশি ব্যথা করে, একটু হাঁটাচলা করলে কিছুটা কমে আসে।

 

২. গাউটি আর্থ্রাইটিস

এটিকে বাংলায় গেঁটে বাত বলা হয়। এই রোগে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়, যার ফলে জয়েন্টে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং এক ধরনের ক্রিস্টাল তৈরি হয়। এই রোগটি প্রথমে পায়ের বড় আঙ্গুল এবং পরবর্তীতে হাত ও পায়ের অন্যান্য জয়েন্টকে আক্রান্ত করে।

৩. জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস

এটি শিশুদের বাতরোগ, এটিও এটি অটোইম্যুউন ডিজিজ। এটি সাধারণত ১৬ বছর বয়সের মধ্যে দেখা দেয়। এই রোগটি পাঁচ ধরনের হয়ে থাকে যেমন- সিস্টেমিক আর্থ্রাইটিস, অলিগো আর্থ্রাইটিস, পলি আর্থ্রাইটিস, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস ও এনথেসিস রিলেটেড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি। এক্ষেত্রেও রোগীর বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা ও স্টিফনেস, দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, চোখে কম দেখা ইত্যাদি নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

৪. সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস

সোরিয়াসিস এক ধরনের চর্ম রোগ, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি পরবর্তীতে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়। এখানেও আক্রান্ত রোগীরা জয়েন্টে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া সমস্যায় ভুগে থাকেন, বিশেষ করে হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলো বেশি আক্রান্ত হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস থেকে স্পনডালাইটিস ও সেকরালাইটিস হওয়ার  আশংকা থাকে।

৫. অস্টিও আর্থ্রাইটিস

এটি একটি ডিজেনারেটিভ ডিজিজ বা বয়সজনিত জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ গঠনের ক্ষয় রোগ। এই রোগে জয়েন্টের ভিতরে অবস্থানরত কার্টিলেজগুলো ও জয়েন্ট সারফেসের ক্ষয় হতে থাকে এবং জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ সাইনোভিয়াল ফুইডগুলোও কমে যায়, যার ফলে জয়েন্টের ভিতরের স্পেস কমে যায়। তখন আক্রান্ত রোগীর জয়েন্ট নাড়াতে কষ্ট হয়। এটি সাধারণত ৫০-এর অধিক বয়স্ক ব্যক্তিদের হয়ে থাকে বিশেষ করে হাঁটু, ঘাড়, কোমর, হিপ ইত্যাদি শরীরের বড় বড় জয়েন্টে এই অস্টিও আর্থ্রাইটিস হয়ে থাকে।

৬. অ্যানকাইলোজিং স্পনডালাইটিস

এটিও একটি মেরুদণ্ডের বাতরোগ, যা প্রথমে মেরুদন্ডের নিচের অংশে আক্রমণ করে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মেরুদন্ডের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগটির সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এটি মেরুদন্ডের স্বাভাবিক আকৃতি নষ্ট করে মেরুদন্ডকে শক্ত করে ফেলে, যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিটি মেরুদন্ডের ঘাড় ও কোমরের অংশ ঘুরাতে পারে না, সামনের দিকে ঝুঁকতে পারে না ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

 

চিকিৎসা ও করণীয়

বাতজ্বর ও বাতরোগ সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন রোগ। এ ছাড়াও বাতরোগের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ, তাই রোগ নির্ণয় করাটা খুবই জরুরি এবং চিকিৎসা নির্ভর করে আপনি কী রোগে আক্রান্ত তার ওপর। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত বিশেষঙ্গ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।

 

লেখক

ডা. এম ইয়াছিন আলী

কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর