শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

মানবদেহ থেকে বর্জ্য নিষ্কাশনে মূলত দুটি প্রক্রিয়াকে সাধারণভাবে সবাই জানে, মূত্রত্যাগ এবং মলত্যাগ। প্রস্রাবের থলিতে প্রতি মুহূর্তে প্রস্রাব জমা হতে থাকে। থলে ভর্তি হলে প্রস্রাবের বেগ হয় এবং মানুষ থলে খালি করে থাকে প্রস্রাব করার মাধ্যমে। অনুরূপভাবে মলেরও একটি থলে আছে, তবে থলেটি মলত্যাগের সুবিধার্র্র্থে নলাকার (টিউব) থাকে ডাক্তারি ভাষায় (বৃহদন্ত্র) মলাধার বলা হয়। মলাধার ভর্তি হলে মলত্যাগের মাধ্যমে সময়ে সময়ে তা খালি করা হয়।

 

আমরা যেসব বস্তুকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি তার একটা অংশ হজমের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে আর বাদবাকি অংশ মলে পরিণত হয়। খাদ্য তন্তু বা ফাইবার পেটে হজম হয় না এবং মল তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচ্য। সুস্থ মানুষের প্রতিদিন এমন পরিমাণ মল তৈরি হওয়া উচিত যাতে (মলাধার) মলের থলে অন্তত একবার ভর্তি হয় তাতে দিনে একবার মলত্যাগ করার প্রয়োজন হবে। নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মল অধিক সময় ধরে মলাধারে জমা থাকলে অর্থাৎ নিয়মিত মলত্যাগ না করতে পারলে, মল থেকে পানি শোষিত হওয়ার ফলে মল থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ায়, মল দিনে দিনে শক্ত আকার ধারণ করে, ফলে ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এর সব কিছুর একমাত্র প্রাকৃতিক সমাধান অধিক মলবর্ধক খাদ্য মূলত শাকসবজি, ফলমূল ও দুধ-দধি ও আস্ত শস্যদানা এ ধরনের খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা। এই খাদ্যবস্তুগুলো কিন্তু স্বাস্থ্য সম্মত খাবারের প্রধান উপাদানও বটে।

তিসি :  তিসিতে প্রচুর দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী। তিসি খুব বেশি তীব্র গন্ধ বা স্বাদ নেই বলে তা সবার কাছেই বেশ গ্রহণযোগ্য হয়। তিসিকে হালকা ভেজে ব্যবহার করতে হয়, তিসি ব্যবহার করে আচার কাসুন্দি তৈরি করা যেতে পারে, ভর্তা করেও খাওয়া যেতে পারে।

ফলমূল :  বেশ কিছু ফলে অধিক পরিমাণে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।  Appricot -কাঠ বাদাম, Figs -আনজির, পেঁপে, আনারস, পেয়ারা, Peaches, Prunes  ইত্যাদি।

শাকসবজি : শাকসবজি ফাইবার বা খাদ্যতন্ত্রুর প্রাকৃতিক উৎস।

♦ শস্যদানা যেমন- লাল চাল, লাল আটা, ডাল খেলে প্রচুর খাদ্যতন্ত্রু/ডায়েটারি ফাইবার পাওয়া যেতে পারে।

♦ দেশীয় ঔষধি যেমন- ইসবগুলের ভুসি, তুকমা দানা, তিসির খৈল, তিসি বাটা, সরিষা বাটা, তিল ভাজা (ছালসহ) এবং কাসুন্দি।

♦ ফাইবার সমৃদ্ধ এসব খাবার প্রথমে শুরু করার সময় অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে। বিশেষ করে যারা আগে ফাইবার জাতীয় খাদ্য খুব বেশি গ্রহণ করে অভ্যস্ত নন। তা না হলে পেটে গ্যাস উৎপন্ন হয়ে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ১-২ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে পেটে গ্যাস উৎপন্ন হওয়া কমে যায়।

♦ নিয়মিতভাবে প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট স্বাভাবিক গতিতে হাঁটা, সাঁতার কাটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো এবং বাগানে কাজ করা ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

♦ দুধ এবং দই মলবর্ধক হওয়ায় অবশ্যই খেতে হবে।

♦ মিষ্টি আলু একটু বেশি পরিমাণে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

♦ কচু, কচুর মুখি, লতা, ডাঁটা ও পাতা পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

♦ প্রতিদিন ৫ মিনিট করে পেটের জন্য যোগব্যায়াম (Breathing Exercise) করুন। শ্বাস নিতে নিতে পেট ফুলান এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পেট ভিতরে ঢুকান। আপনি টয়লেটে বসেও তা করতে পারেন।

♦ ঘৃতকুমারীর শাঁস পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এক থেকে দুই গ্লাস পরিমাণ খাওয়া যেতে পারে।

♦ প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করুন।

♦ প্রতিদিন এক গ্লাস বেলের জুস খাওয়া বেশ উপকারী।

♦ যে সব খাবার বর্জন অথবা খুব অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে, যেমন : পনির, মিষ্টি, চিনি, গুড়, লবণজাতীয় খাবার, গরু-খাসির মাংস, বিচি কলা, কফি ইত্যাদি।

♦ কমোড টয়লেট নয়, প্যান টয়লেট ব্যবহার করা বিজ্ঞানসম্মত ও প্রাকৃতিক। এতে অর্শ রোগের প্রবণতাও কমে। টয়লেটে আপনি খুব রিলাক্স থাকবেন। কোনোরূপ শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করবেন না। টয়লেটে যাওয়ার পর টয়লেট হওয়ার জন্য ৫ মিনিটের বেশি সময় অপেক্ষা করবেন না ।

♦ বেগ হলে কখনো টয়লেটে যেতে দেরি করবেন না।

♦ কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের জন্য মেডিসিন/ডুস ব্যবহার না করাই উত্তম।

ফাইবার যুক্ত খাদ্য বস্তুকে মিলে পিষলে, জোরে জোরে ঘোটলে, ব্ল্যান্ড করলে ফাইবার ভেঙে গিয়ে এক ধরনের আঠালো বস্তু সৃষ্টি করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত। যদিও আস্ত শস্যদানায় প্রচুর ফাইবার থাকে।

লেখক-

ডা. এম শমশের আলী

(কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালট্যান্ট (প্রা.)

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

 

সর্বশেষ খবর