শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্তন ক্যান্সার : সচেতনতা ও প্রতিরোধ

স্তন ক্যান্সার : সচেতনতা ও প্রতিরোধ

ছবি : ইন্টারনেট

ক্যান্সারের নাম শুনলেই মানুষ আজও মৃত্যুভয়ে আঁতকে ওঠেন।  আর এই ক্যান্সার যখন কোনো নারী দেহে বাসা বাঁধে, তখন সামাজিকভাবে তাদের যথেষ্ট হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় সভ্যতার এই চরম উৎকর্ষের যুগেও। অদ্ভুত কিছু সামাজিক কুসংস্কার ও গোঁড়ামির কারণে আমাদের সমাজে, শহরের বাইরে, বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জের নারীর স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা কিংবা প্রতিরোধের চিন্তাই নেই। কিন্তু জীবনের থেকেও কী এই সংকোচবোধ বা কুসংস্কার বেশি দামি? আপনি কি কখনই চাইবেন আপনার মা, বোন কিংবা স্ত্রী-কন্যা এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হোক? তাই ক্যান্সার নিয়ে চাই ব্যাপক আলোচনা আর প্রচারণা। নিজে সতর্ক হতে হবে, অপরও এই মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করতে নারীর স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন।

 

ক্যান্সার বিষয়ক বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ১৫ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৭ হাজারই মৃত্যুবরণ করেন। হতাশার কথা হলো আক্রান্তদের প্রায় ৭০ ভাগ চিকিৎসকের কাছে আসেন একেবারে শেষ পর্যায়ে। ফলশ্রুতিতে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় মৃত্যু হয় অধিকাংশ নারীর। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত হলে এবং চিকিৎসার সুযোগ পেলে, আক্রান্ত রোগীর ৯০ শতাংশেরই অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব।

 

কী কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে : জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন প্রথমত এর জন্য দায়ী। প্রচুর ফাস্টফুড গ্রহণ, অল্প বা একেবারেই সবুজ শাকসবজি না খাওয়া, অলস জীবনযাপন বা কম শারীরিক পরিশ্রম, অতিরিক্ত স্থূলতা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া বয়স্ক মহিলা, যাদের স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে, দেরিতে বাচ্চা নেওয়া, বাচ্চাকে বুকের দুধ দিতে অনীহা বা অপারগতা, অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে মাসিক বন্ধ হওয়া, মদ্যপানসহ শরীরে অন্য কোনো ক্যান্সার যেমন-কোলন, ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার থাকলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো স্তনে চাকা অনুভূত হওয়া, স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া এবং কোনো ক্ষত সৃষ্টি হওয়া, স্তনের বোঁটা দিয়ে রক্ত বা পুঁজ বের হওয়া, স্তনের বোঁটা ডেবে বা বসে যাওয়া ইত্যাদি স্তন ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ।

 

কীভাবে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করবেন : সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো, ‘নিজে নিজের হাতে স্তন পরীক্ষা’ করা সর্বোৎকৃষ্ট এবং সহজ উপায়। একজন মহিলা যে কোনো বয়সেই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই ২০ বছর বয়স থেকেই প্রতিমাসে একবার নিজেই স্তন পরীক্ষা করুন। প্রত্যেক মাসে নিজ স্তনের পরীক্ষা করাকে একটি অভ্যাস বানিয়ে ফেলতে হবে। গোসলের সময়, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, বিছানায় শুয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট নিয়মে এই স্তন নিজ হাতে পরীক্ষা করতে হবে। দুটি স্তনের মধ্যে

আকৃতির পরিবর্তন হলে, স্তনে কোনো চাকা অনুভব করলে, স্তনের কোনো অংশের ত্বক পুরু হয়ে গেলে কিংবা ভিতরের দিকে কুঁচকে গেলে, স্তনবৃন্তে কোনো অংশ ভিতরের দিকে ঢুকে গেলে কিংবা চেপে ধরার পর রক্ত, পুঁজ বা কোনো ধরনের তরল নির্গত হলে সতর্ক হতে হবে। অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন বা লক্ষণ প্রকাশ পেলে নিকটস্থ কেন্দ্রে চিকিৎসক বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে স্তন পরীক্ষা করাতে হবে।

 

কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন :

সন্দেহ হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী

প্রাথমিকভাবে আল্ট্রাসনোগ্রাম, ম্যামোগ্রাম করতে হবে। এই পরীক্ষাগুলোতে সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়লে পরবর্তীতে এফএনএসি বা প্রয়োজনে বায়োপসি লাগতে পারে।

 

চিকিৎসা পদ্ধতি :

স্তন ক্যান্সারের কয়েক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যেমন : সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ইত্যাদি। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। ‘ক্যান্সারে নেই কোনো আনসার’Ñএ কথা আর মোটেই সত্য নয়।  দেশেই সব উন্নত চিকিৎসা এখন হাতের নাগালে। প্রয়োজন শুধু সচেতনতারÑনিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন করুন।

 

লেখক-

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

সাবেক ডিন ও চেয়ারম্যান, মেডিসিন অনুষদ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর