শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বর্ষা মৌসুমে অদলবদল

বর্ষায় প্রকৃতি ঘন ঘন রূপ পাল্টায়। বৃষ্টি মৌসুমের এই অদলবদলের প্রভাব পড়ে আমাদের স্কিন ও হেয়ারে। তাই এ সময়ে প্রয়োজন কিছু পরিবর্তনও।

বর্ষা মৌসুমে অদলবদল

মডেল : নুসরাত ফারিয়া ছবি : ফ্রাইডে

বর্ষার মৌসুমও বদলে গেছে। হঠাৎ ঝরছে বৃষ্টি তো আচমকা তেতিয়ে উঠছে রোদ। প্রকৃতির এই রূপ বদলের প্রভাব পড়ছে আমাদের স্কিন এবং হেয়ারে। সাধারণত বর্ষার (মনসুন) মৌসুমে স্কিন একটু বেশি অয়েলি দেখায়। ফলে ব্রণ, অ্যাকনে ইত্যাদি সমস্যা দিতে পারে। তাছাড়া গুমোট আবহাওয়ার কারণে র‌্যাশ, ছুলি, ফাঙ্গাল ইনফেকশনের মতো চর্মরোগ ইত্যাদি দেখা দেয়। সেই সঙ্গে ফ্রিজি হেয়ার, ড্যানড্রাফ, হেয়ার ফল ইত্যাদি তো আছেই। এ ছাড়াও বর্ষার মৌসুমে পানিবাহিত নানা রোগ যেমন- সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি আমাদের স্কিন ও হেয়ারের ক্ষতি করে। তাই এ সময় প্রয়োজন কিছু পরিবর্তন। দরকার লাইফস্টাইলের অদলবদল। রেইন রেডি হয়ে ওঠার জন্য।

 

বর্ষা মৌসুমের ডায়েট প্ল্যান

এ সময় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। আর ভিটামিন সি, ভিটামিন এ,  বিটা ক্যারোটিন যুক্ত ফল এবং শাকসবজি খেতে হবে বেশি বেশি। যেহেতু বর্ষার মৌসুমে স্কিন এমনিতেই অয়েলি হয়ে থাকে! তাই অতিরিক্ত মসলাদার খাবার, তেল-চর্বি যুক্ত খাবারদাবার এড়িয়ে চলা ভালো। আর এ সময় বাইরের উন্মুক্ত খাবার একেবারেই খাওয়া ঠিক নয়। দেহে ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন।

 

রূপচর্চায় আয়ুর্বেদিক উপাদান

বর্ষাকালে নানা সমস্যাকে মেকআপ করার জন্য আয়ুর্বেদিক প্রসাধনী ভালো কাজ দেয়। গরমের ক্লিনজার বদলে এ সময় ব্যবহার করতে পারেন ক্রিমি ক্লিনজার। আর প্রতিদিনের ফেসওয়াশ হিসেবে নিম, তুলসী, হলুদের নির্যাস যুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।

 

আয়ুর্বেদিক টোনার

বৃষ্টিদিনে প্রাকৃতিক টোনার সবচেয়ে বেশি উপকারী। এক্ষেত্রে গোলাপ জল হতে পারে আদর্শ। এ ছাড়াও গাজর, আলু, আনারসের নির্যাস সমৃদ্ধ টোনার ব্যবহার করতে পারেন। স্কিনে র‌্যাশ বা অ্যাকনের সমস্যা থাকলে টোনারে থাকতে হবে নিম, তুলসী এবং হলুদের নির্যাস।

 

বডিওয়াশে আয়ুর্বেদিক নির্যাস

নিম এবং তুলসী যুক্ত বডিওয়াশ বর্ষা মৌসুমের সংক্রমণ যেমন- র‌্যাশ, ছুলি ও ফাঙ্গাল ইনফেকশন ইত্যাদি থেকে ভালো রাখবে। আর চন্দন ও হলুদ যুক্ত বডিওয়াশ ধরে রাখবে স্কিনের স্বাভাবিক ঔজ্বল্য।

 

প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার

এই মৌসুমে অ্যালোভেরা, হলুদ, স্যাফরণ, টি-ট্রি অয়েল যুক্ত জেল, ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করতে পারেন। আর এই আয়ুর্বেদিক উপাদানগুলো আপনার স্কিনকে হাইড্রেট করার সঙ্গে সঙ্গে রাখবে জীবাণুমুক্ত, ফ্রেশ এবং গ্লোয়িং।

 

শ্যাম্পুতেও চাই সতর্কতা

বর্ষার পানি চুলের আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। ফলাফল শুষ্ক, রুক্ষ আর বিবর্ণ চুল। তাই এ সময় সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো। বর্ষায় শ্যাম্পু কেনার সময় উপাদান তালিকা যাচাই করে নেওয়া উচিত। বেছে নিতে হবে সালফেটবিহীন শ্যাম্পু। যা কার্যকর উপায়ে পরিষ্কার করবে চুল। মাথার ত্বকেরও ক্ষতি করবে না।

 

প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার

যাদের বর্ষায় চুলচর্চায় বাজারের ক্যামিকেল যুক্ত প্রোডাক্টের প্রতি অনিহা তারা চাইলে টি-ট্রি অয়েল, নিমযুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। এ সময় হেয়ার পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ডিপক্লিনজিং ভীষণ দরকার। তাই এ সময় শ্যাম্পুতে সালফেট থাকলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, যদি এটা চুলকে রুক্ষ না করে। শ্যাম্পু, কন্ডিশনার করে অবশ্যই চুলে সেরাম লাগাতে হবে এবং হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল ভালোভাবে ড্রাই করে ফেলতে হবে।

 

প্রতিদিনের মেকআপ

একেকজনের ত্বক একেক ধরনের। তাই ত্বক বুঝে মেকআপ বাছাই করাই উত্তম। আমি এখানে সাধারণত সব ধরনের ত্বক উপযোগী কিছু মেকআপ টিপস বলব।

 

ম্যাট ফাউন্ডেশন

বর্ষায় স্কিনে প্রথমে ম্যাট প্রাইমার দিয়ে ম্যাট ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করতে হবে। এরপর ম্যাট কমপ্যাক্ট পাউডার। শেষে লং লাস্টিং ইফেক্টের জন্য ব্যবহার করতে পারেন মেকআপ ফিক্সার।

 

ওয়াটারপ্রুফ লাইনার, কাজল, মাশকারা

বর্ষার পানি এবং গরমে ঘেমে-নেয়ে যাতে চোখের সাজ নষ্ট হয়ে না যায় বা ঘেঁটে না যায়, তার জন্য ওয়াটারপ্রুফ আইলানার, কাজল, মাশকারা ব্যবহার করতে হবে।

 

হাইড্রেটিং নিপকালার বা বাম

বর্ষাকালে গ্লসি, অয়েলি নয়, এমন লিপবাম বা লিপকালার ব্যবহার করাই উত্তম। তবে তা অবশ্যই হাইড্রেটিং হতে হবে।

 

আয়ুর্বেদিক মেকআপ রিমুভার

বৃষ্টির দিনগুলোয় মেকআপ তোলার জন্য টি-ট্রি অয়েল বা ল্যাভেন্ডার অয়েল যুক্ত মেকআপ রিমুভার দিয়ে মেকআপ তুলে ফেলতে হবে। এটি মেকআপ তোলার সঙ্গে সঙ্গে স্কিনকে রাখবে জীবাণুমুক্ত। এ ছাড়াও প্রতিবার মেকআপ শেষে মেকআপ ব্রাশ বা টুলসগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।

 

বর্ষায় মেকআপ ব্যাগ

মেকআপের উপকরণগুলো রাখার ব্যাগও হওয়া চাই ওয়াটারপ্রুফ। বৃষ্টি আর আর্দ্রতা থেকে বাঁচাতে। কারণ, এ দুটোই মেকআপের বড় দুশমন। ওয়াটারপ্রুফ জিপড পাউচ এক্ষেত্রে ভালো। ব্যবহার আর বহনে দুটোই সুবিধাজনক।

 

মনে রাখুন

► বর্ষার মৌসুমে চটজলদি টাচ আপের জন্য সঙ্গে রাখুন অয়েল ব্লটিং শিট।

► ওয়াটারপ্রুফ মেকআপে সব সময় চাই ব্রাশের ব্যবহার। এতে করে নিখুঁত, সুন্দর ফিনিশিং পাওয়া যায়।

 

লিখেছেন : শোভন সাহা (কসমোলজিস্ট)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর