শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

এই সময়ে কুর্তি কামিজ

এই সময়ে কুর্তি কামিজ

♦ মডেল : নীহারিকা আহমেদ ♦ পোশাক : মারজিন বাই অঞ্জন’স ♦ মেকআপ : তাহ্মিদা হক ♦ ছবি তুলেছেন : রাফিয়া আহমেদ

পোশাক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে রোজই। কত কিছু যোগ হয়, আবার হারিয়ে যায়। লক্ষ্য একটাই, আধুনিকতা, নান্দনিক ডিজাইন আর আরাম ধরে রেখে পোশাক তৈরি। সেই ধারাবাহিকতায় দক্ষ কারিগররা বাজারে আনছেন মোলায়েম কাপড়ের কুর্তি কামিজ।  বিশেষ করে রোদ-গরম আর বর্ষাবাদলের এই দিনে কুর্তি কামিজের আবেদনই ভিন্ন। বিস্তারিত লিখেছেন- তানিয়া তুষ্টি।

 

একটা সময় ছিল যখন ফ্যাশন সচেতনরা পোশাকের অস্বস্তিকে মেনে নিয়েছেন। পরিধান করতে কষ্ট হলেও আধুনিক ডিজাইনের সেসব পোশাক জড়িয়েছে অঙ্গে। সবার মাঝে নিজেকে একটু আলাদাভাবে তুলে ধরার এই প্রচেষ্টায় তাদের কমতি থাকত না মোটেই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রচলিত সেই ধারণায়  যোগ হয়েছে আরামের বিষয়টি। ফ্যাশন হবে তবে পোশাকের আরামদায়ক অনুভূতি বজায় রাখা চাই। তাই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন লক্ষণীয় পোশাকের ফেব্রিক্সে। মোলায়েম কাপড়ে হরেক রকম ডিজাইনে তৈরি হচ্ছে মেয়েদের জন্য আধুনিক সব কুর্তি কামিজ। বিশেষ করে মোলায়েম এসব কাপড় যোগ হয়েছে কুর্তি কামিজের বিশাল ভান্ডারে। ডিজাইনাররাও প্রতিনিয়ত নিজেদের বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। উপযুক্ত ফেব্রিক্সে আরামদায়ক একেকটি পোশাক উপস্থাপন করা হচ্ছে নতুন নতুন ঢঙে।

 

প্রচলিত ধারার থ্রি-পিস থেকে মেয়েদের পছন্দ অনেক আগেই ধরনা দিয়েছে কুর্তি কামিজের ওপর। ছিমছাম ফ্যাশনের এসব পোশাকের প্রতি তাদের ঝোঁকটা একটু বেশি। পাশ্চাত্যঘেঁষা ডিজাইন, আরামদায়ক মাপজোখে গড়া বৈচিত্র্যময় এসব পোশাক তাদের পছন্দের শীর্ষে। সব ধরনের আবহাওয়াতে এসব পোশাক উপযোগী।

 

নতুন ঢঙের কুর্তি কামিজগুলো দেখতে অনেক বেশি নান্দনিক। সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ বৈচিত্র্যময় ডিজাইন প্যাটার্নে। কুর্তি বা লম্বা কামিজের বটমে ইউ, ভি, উল্টা ভি, বোট কাটিং, চওড়া বা স্ট্রেইট প্যাটার্ন, বাটারফ্লাই ইত্যাদি থাকতে পারে। কোনোটি আবার গোল ঘেরওয়ালা। হাতার ডিজাইনে ঢিলেঢালা, কার্ভ স্লি­ভ, বেল স্লিভ উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে গলার ডিজাইনে থাকে সেমি বোট নেক, পোর্ট্রেট, জুয়েল, স্কয়ার, গেদার্ড নেক, সেট ইন স্লি­ভ নেকের মতো প্যাটার্ন। তাছাড়া পাশ্চাত্য ডিজাইনের দেখা মেলে দেশীয় ডিজাইনারদের হাতে তৈরি এসব কামিজে। কুর্তিতে অ্যামব্রয়ডারি ও প্রিন্টের কাজ খুব বেশি জমকালো হলে তা বেমানান। তবে বডিতে হালকা কাজ ট্রেন্ডের মধ্যেই পড়ে। এই কুর্তি কামিজগুলো ফতুয়ারই একটি আধুনিক রূপ। এসব পোশাক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুতি ভয়েল বা লিলেন ভয়েল, চায়না ভয়েল কাপড় দিয়ে তৈরি হয়। আর তাই গরমে পরতে বেশ আরামদায়ক। তবে ইদানীং স্ট্রিট ফ্যাশনে গরমের সময়টায় সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি একটি কামিজ বা সিঙ্গেল কুর্তির অনেক কদর। সিঙ্গেল কামিজের ডিজাইন, কাটিং, রংসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়া।

 

বর্তমান ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুযায়ী কামিজগুলোকে লম্বা করা হচ্ছে। এগুলো লম্বা হাতারও হয় আবার স্লি­ভলেসও পাওয়া যায়। আর কাপড়ের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ভয়েল, লিলেন, ধুপিয়ান, ডবি ফেব্রিক্স। হালকা রঙের সুতি, লিলেন, খাদি আর তাঁত কাপড়ে  তৈরি হচ্ছে নকশাদার স্লি­ভলেস বা কম দৈর্ঘ্যরে হাতার কামিজ আর কুর্তা স্টাইলের লম্বা কামিজ।

 

উৎসবের জন্য বেছে নিতে পারেন সিল্ক, মসলিন, অ্যান্ডি সিল্ক, তসর, নেট, জর্জেটসহ নানা গর্জিয়াস কাপড়। কামিজ বা কুর্তার ক্যানভাসে নকশা করা হচ্ছে কারচুপি, স্প্রে, সিকুইনসহ নানা মাধ্যমে। মূলত স্লি­ভলেস পোশাক টিনএজার ও তরুণীদের ভালো মানায়। কুর্তা স্টাইলের লম্বা কামিজ বা সিঙ্গেল কামিজ আটপৌরে বা বাইরের ফ্যাশনের নতুন ধারা। রং নির্বাচনে সবকিছুর সঙ্গে ম্যাচিং করে পরা যাবে। তবে অ্যামব্রয়ডারির কাজ করা প্যাটার্ন বেজডের সঙ্গে কন্ট্রাস্ট সহজ।

 

যাদের প্রতিনিয়তই নানা কাজের জন্য বাইরে যেতে হয় তাদের কাছে সিঙ্গেল কামিজের চাহিদা একটু বেশি। কেননা ব্যস্ততাময় জীবনে সময় বের করে নিয়ে কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে ওড়না, সালোয়ার কেনা খুবই কষ্টকর। তাই তো তরুণীরাও সিঙ্গেল কামিজ বা কুর্তিতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এই পোশাকটিকে একেবারে বিদেশি বলা চলে না।

 

আবার দেশীয় ধাঁচের ফিউশন তৈরি করে। কুর্তি বা সিঙ্গেল কামিজের সঙ্গে কেউ চাইলে স্কার্ফ বা ফেন্সি ওড়না ব্যবহার করতে পারেন। ফেব্রিক্স ও ডিজাইনের কারণে এই ধরনের পোশাকের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, প্রতিবার পরার সময় ইস্ত্রি করার দরকার হয় না। খুব সহজে কাপড়ে ভাঁজ পড়ে নষ্ট হওয়ারও ভয় থাকে না। আবার যে কোনো ওড়না বা প্যান্টের সঙ্গে এগুলো সহজে পরা যায়। বন্ধুদের আড্ডায়, শপিংয়ে, ঘোরাঘুরিতে অথবা ফ্যামিলি টাইমেও এসব পোশাক মানানসই।

 

আরও একটি বড় দিক হলো, পোশাকের সঙ্গে সাজগোজের ব্যাপারে খুব বেশি মনোযোগী না হলেও চলে। সাদামাটা সাজসজ্জা উপযুক্ত। কেউ চাইলে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে এন্টিক ম্যাটেরিয়ালের মালা, ব্রেসলেট বা চুড়ি, ঘড়ি, পুঁতির মালা, বিডসের মালা পরতে পারেন। তবে স্টাইলিশ এক্সেসরিজের ব্যবহার এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়।

 

কুর্তি কামিজের সঙ্গে পছন্দসই যে কোনো জিন্স, লেগিংস, জেগিংস অথবা ফ্যাশনেবল সালোয়ার পরা যাবে। জিন্স কিংবা লেগিংস ছাড়াও কুর্তি ও সিঙ্গেল কামিজ পরতে পারেন ধুতি, চুড়িদার ও স্লিপটেড ভ্যারিয়েশনের সালোয়ারের সঙ্গে। এখন তো চোস্ত পায়জামারও একাধিক স্টাইল, চুড়িদারেরও ২-৩টি ভ্যারিয়েশন দেখা যায়। কামিজে কাজ করা থাকলে সালোয়ারটা সিম্পল পরাই ভালো। আবার কামিজে হালকা কাজ হলে সালোয়ারে কাজ হয় গর্জিয়াস। কামিজের সঙ্গে রং ম্যাচিং করে ওড়না পরতে পারেন অথবা একেবারে বিপরীত রংও বেছে নিতে পারেন। ফেন্সি ওড়নাগুলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা একাধিক কুর্তির সঙ্গে পরা যায়। জুতার ক্ষেত্রে স্লি­পার, সু, কনভার্স, কেডস সবই মানিয়ে যায়। তবে হাই-হিল বা কারুকাজের জুতা একদমই মানাবে না।

 

রং বাংলাদেশ, নাগরদোলা, কে-ক্রাফট, আড়ং, বসুন্ধরা সিটিসহ দেশের প্রায় সব ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাবে এই কুর্তি ও কামিজ। দাম পড়বে ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া মনের মতো কুর্তিটি বেছে নিতে নিউমার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনীচক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে যেতে পারেন। সুলভ মূল্যে হাজারও ডিজাইনের কুর্তি কামিজ মিলবে এখানে। কাপড় কিনেও বানিয়ে নিতে পারেন পছন্দের একটি কুর্তি। তবে রেডিমেড সিঙ্গেল কামিজের দাম পড়বে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ননব্র্যান্ডের কুর্তিগুলো ৩৫০ থেকে শুরু হয়ে ১০০০ টাকা পর্যন্ত দাম পড়বে।

 

সঠিক বুঝেসুঝে এক্সেসরিজ ব্যবহার না করতে পারলে সাজটাই মাটি! সঠিক অনুষঙ্গে সাধারণ পোশাকেও দেখাবে পার্টি লুক! গয়না পরলে কখনই একসঙ্গে দুল, হার, আংটি, ব্রেসলেট চলবে না। পার্টি ড্রেসের সঙ্গে পরুন দুল বা হার। গয়না, ঘড়ি, স্কার্ফ, টুপি, সানগ্লাস একসঙ্গে কখনই না। মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত সবকিছুই বেমানান। সাদা, কালো, অ্যাশ, নেভি ব্লু পোশাক অনেক আছে! এসব পোশাকে উজ্জ্বল রঙের এক্সেসরিজ বেছে নিন। কালো বা নেভি ব্লু ড্রেসের সঙ্গে সরু লাল অথবা হট পিঙ্ক বেল্ট। খাকি অথবা অলিভ রঙের পোশাকের সঙ্গে বেঁধে নিন উজ্জ্বল হলুদ অথবা কমলা স্কার্ফ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর