শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

হৃদরোগীরাও কি কোরবানির মাংস খাবেন

হৃদরোগীরাও কি কোরবানির মাংস খাবেন

ছবি : ইন্টারনেট

হৃদরোগীদের গরু ও খাসির মাংস খাওয়া নিষেধ এটা কে না জানে। তবে কী জন্য নিষেধ তা হয়তো অনেকেই জানেন না। গরু ও খাসির মাংসে প্রচুর চর্বি থাকে। এ ধরনের চর্বি রক্তে কলেস্টেরল নামক চর্বির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকার ফলে রক্তনালিতে কলেস্টেরল জমা হতে হতে রক্তনালির ভিতরে রক্তপ্রবাহের জায়গাকে সংকোচিত করে ফেলে। ফলে রক্ত সরবরাহে বাধার সৃষ্টি হয়, মানুষ এটাকে ব্ল­ক বলে থাকে। এটা লক্ষণীয়, বেশি করে পোলাও-মাংস খাওয়ার পর অনেকেরই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এ ধরনের হার্ট অ্যাটাক হওয়া রোগীরা প্রায়ই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন, এটা আমরা লক্ষ্য করেছি। তবে কি বেশি করে চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণের ফলে হৃদরোগীরা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন? ব্যাপারটা খুব সোজা নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে এ রকম কিছু পাওয়া যায় না যে, আপনি বেশি করে চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে খাদ্যে চর্বির প্রভাবে তাৎক্ষণিক হার্ট অ্যাটাক ঘটবে। বরং আজকে চর্বি খেলে এটা কলেস্টেরলের মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে বৃদ্ধি করবে এবং এ ধরনের উচ্চ মাত্রার কলেস্টেরল অনেক দিন ধরে বিদ্যমান থাকলে ধীরে ধীরে রক্তনালিতে কলেস্টেরল জমে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এখন প্রশ্ন তাৎক্ষণিক খাওয়ার ফলশ্র“তিতে হার্ট অ্যাটাক কেন হচ্ছে? আমি এমন এক রোগীর কথা বলছি, ভদ্রলোকের বাড়ি রাজশাহীতে। বর্তমানে তিনি গাজীপুরে সেটেল্ড এবং বয়স পঞ্চাশের মতো হবে। জ্যৈষ্ঠ মাসে তিনি মুড়ি দিয়ে দুটি কাঁঠাল খেয়ে ফেলেছিলেন। তার ফলে তিনি হার্ট অ্যাটাক নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এবার দুটি ঘটনা মূল্যায়ন করা যাক। রাজশাহীতে কাঁঠাল কেমন পাওয়া যায় জানি না, আমার মনে হয় রাজশাহীতে সুস্বাদু কাঁঠাল তেমন একটা পাওয়া না যাওয়ায় তিনি গাজীপুরে এসে কাঁঠাল খেয়ে খুবই মজা পেয়েছেন এবং অন্যরাও যারা পোলাও-মাংস খেয়ে বেশ মজা পান তারাও পোলাও-মাংস খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন- এর একটা মিল পাওয়া গেল। উভয় ক্ষেত্রেই একটা ব্যাপার মিলে যায়, তারা খাবার খেয়ে বেশি মজা পাওয়ার জন্য বেশি করেই খেয়েছেন। বেশি পেটভরে খাওয়ায় ফলে হজমের জন্য অনেক বেশি রক্ত পাকস্থলীতে বা পেটে সরবরাহের ফলে শরীরের অন্য অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। বেশি পরিমাণে খেলে ফুসফুসের মাধ্যমে বাতাস গ্রহণ করার ক্ষমতা কমে। ফলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে। রক্তে অক্সিজেনের কম মাত্রা ও কম পরিমাণ রক্ত সরবরাহের ফলে হৃদরোগীদের হৃৎপিন্ডে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ মারাত্মক কমে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সুতরাং হৃদরোগীরা কোরবানির সময় অতিভোজন এড়িয়ে চলবেন।

লেখক-

ডা. এম শমশের আলী

(কার্ডিওলজিস্ট), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর