শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা

শিশু, বয়স্ক- সবারই হচ্ছে ডেঙ্গুজ্বর। ডেঙ্গু হলে খাবার-দাবার ও পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বাড়িতে চিকিৎসা নিলে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন।

ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রকট আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। রোগী ও রোগীর পরিবারসহ সবাই ভয়েই বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছেন। সব রোগীকেই যে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন আছে তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়িতে রেখেও ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্ভব। ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা আগে সুনিশ্চিত হতে হবে। জ্বর আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে NS1  টেস্ট করতে হবে। যদি রিপোর্ট পজেটিভ আসে তবে CBC টেস্ট করে প্ল­াটিলেট কাউন্ট দেখতে হবে। ৭২ ঘণ্টা পরে NS1  কখনো পজিটিভ আসে না। তাই অনেকে ভাবছেন যে, রিপোর্ট ভুল এলো। বিষয় হলো ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে NS1  নেগেটিভ হয়ে যায়। তাই তখন IgG, IgM টেস্টসহ CBC করাতে হবে।

ডেঙ্গুজ্বর হলে এবার প্ল­াটিলেট কমে যাওয়া ছাড়াও রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যাচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে হেমোরেজও হচ্ছে। আবার কারও ক্ষেত্রে প্লাটিলেট কাউন্ট কমলেও তা সহনীয় পর্যায়ে থাকছে। ডেঙ্গুজ্বরের কোনো ভ্যাক্সিন বা অ্যান্টিবায়োটিক নেই। তাই প্রচলিত চিকিৎসা হলো জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল আর ফ্লুইড ব্যালেন্স করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা।

 

ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য ও পুষ্টির প্রতিও রাখতে হবে বিশেষ নজর।

♦  যারা হাসপাতালে থাকবেন তাদের IV fluid এর পাশাপাশি মুখে তরল খাবার দিয়ে total fluid  ব্যালেন্স করতে হবে।

♦   অপর পক্ষে যারা বাসায় আছেন তাদের পানিসহ অন্যান্য তরল মিলে ৩ লিটার সারাদিনে total fluid অর্থাৎ মুখে খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

♦  তাড়াছা জ্বরে ক্যালোরি চাহিদা বেড়ে যায়। তাই ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেশি করে দিতে হবে। এ সময় মুখে রুচিও থাকে না। তাই এমন খাবার দিতে হবে যা অল্প খেলেও চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। যেমন- ভাতের পরিবর্তে খিচুড়ি, পায়েস, ফিরনি বা পুডিং দেওয়া যেতে পারে। ফলে একটা খাবার থেকেই সব উপাদান পাওয়া যাবে।

♦  মুখে ফলের রস, ডাবের পানি, সুপ ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হবে।

♦  যদি জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া ও বমি হয়ে থাকে তবে শাক- সবজি, ডাল, দুধ ও দুধে তৈরি খাবার বাদ দিতে হবে। এ অবস্থায় ডাবের পানি, মুরগির সুপ, চালের সুপ বা ভাতের মাড়, আপেলের জুস খুব ভালো কাজ করে।

♦  মূল খাবার হিসেবে ভাত বা জাউয়ের সঙ্গে কাঁচকলার ঝোল দিলে রোগী উপকৃত হবে।

♦  মাছ বা মাংস বন্ধ না করে সহজপাচ্য মাছ যেমন- শিং, শোল, পাবদা ইত্যাদি লোফাইবার মাছ বা মুরগির তরকারি দেওয়া ভালো।

♦  গায়ে কোনো Rash থাকলে সাধারণ এলার্জিক খাবার যেমন- গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ ও বেগুন ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো।

♦  পেঁপে পাতার রস খাওয়া যেতে পারে। এতে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান পাওয়া যায় যা শরীর ব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

তবে অবশ্যই বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা না করিয়ে লতাপাতা দিয়ে চিকিৎসা ঝুঁঁকিপূর্ণ বা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই জ্বরসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হোন। ডেঙ্গু প্রতিকারে এই দুটি মোক্ষম হাতিয়ার।

 

লেখক-

মাহফুজা আফরোজ সাথী

চিফ ডায়েটিশিয়ান, ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম।

সর্বশেষ খবর