শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

গরমে স্বাচ্ছন্দ্য

গরমে স্বাচ্ছন্দ্য

♦ মডেল : জাকিয়া বারী মম ♦ ছবি : মোহসীন আহমেদ কাওছার

বাইরের কাঠফাটা রোদে গরম বেশ চরমে। গরম থেকে বাঁচতে সবাই বেছে নেন আরামদায়ক পোশাক। এই সময়ের উপযোগী করে মোলায়েম কাপড়ে হাজারো রঙের সংযোজন ঘটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এখনকার পোশাকগুলো। বিস্তারিত জানাচ্ছেন-  ফেরদৌস আরা

 

যেখানেই যান বা যার সঙ্গেই কথা বলুন, সবার মুখে এক কথা, কী গরম! কিন্তু তার জন্য তো কাজকর্ম থেমে নেই। তাই পোশাক বা সাজ কেমন হলে আরাম পাবেন, প্রশ্নগুলো ফ্যাশনিয়েস্তাদের ভাবাবেই। আধুনিক ফ্যাশনবোদ্ধারা মনে করেন, গরমের আরাম এবং ফ্যাশনের ষোলআনা পরিপূর্ণ বজায় রাখতে আরামদায়ক পোশাকই বেছে নেওয়া উচিত। তাই ফ্যাশনবোদ্ধারা বাজারে আনছেন আন্তর্জাতিক মানসম্মত ফ্যাশনেবল পোশাক। কিন্তু ফ্যাশন নিয়ে নগরবাসীর মতামত জানতে চাইলে দেখা যাবে সবার চাই আরাম প্রিয় পোশাক।

 

এই সময়ের উপযোগী করে মোলায়েম কাপড়ে হাজারো রঙের সংযোজন ঘটিয়ে দেশি-বিদেশি ফ্যাশন হাউসগুলো তৈরি করেছে আরামদায়ক পোশাক। এ পোশাকে যে কেউ নিজেকে স্টাইলিশ লুকে উপস্থাপন করা সহজ। আজকাল আরামের জন্য গরমের এ সময় সুতি, জর্জেট এবং লিলেন কাপড়ের তৈরি পোশাকই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খুব বেশি ডিজাইন আর রংচঙ্গা পোশাক গরমে বেমানান। তাই এ ধরনের পোশাক না পরে হালকা মেজাজের পোশাক পরাটা স্বস্তিদায়ক। এ ছাড়া এ সময়ে টাইট-ফিট পোশাক পরার চেয়ে একটু ঢিলেঢালা পোশাক পরাটাই হবে স্বস্তিদায়ক। ফ্যাশন হাউসগুলোয় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের কুর্তি, কামিজ, শার্টস,  টপস, সিঙ্গেল কামিজ, সালোয়ার-কামিজ, টিউনিক, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট এবং স্কার্ট। আর গরমের কথা মাথায় একটু পাতলা ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব হালের পোশাক। তাই এসব পোশাক একদিকে যেমন আরামের, অন্যদিকে  ফ্যাশনেবলও। আবহাওয়ার ওপর বিবেচনা করে ফ্যাশনবোদ্ধারা পোশাক ব্যবহার করেছেন সুতি, সিল্ক, জর্জেট, লিলেন, মসলিন, শিফনসহ নানা ধরনের আরামদায়ক কাপড়। পোশাকের জমিন রাঙানো হয়েছে কারচুপি, অ্যাম্ব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক, স্টিচিং নকশায়।

 

অনেকের ধারণা সুতি কাপড়ের পোশাকে ফ্যাশনেবল নয়। আসলে ধারণাটি ভুল। এই কাপড়ের পোশাকের কাটে একটু বৈচিত্র্য আনলেই তা বড় পার্থক্য সৃষ্টি করে। কিশোরী ও তরুণীরা সুতির ঢিলেঢালা প্যাটার্নই বেশ বেছে নিচ্ছে। কামিজ জনপ্রিয়, ঝালর দেওয়া স্কার্টও মন্দ লাগে না। তাতে হালকা সুতির কাজ থাকছে, ব্ল­ক থাকছে, স্কিন প্রিন্ট থাকছে। ভারী কাজ না থাকাই ভালো। আজকালের তরুণীরা পছন্দ করছে ছোট হাতার লম্বা ফতুয়া, হাতাকাটা কামিজ বা ছোট হাতার শার্ট। সালোয়ারের ক্ষেত্রে ধুতি ও প্যান্টধাঁচের সালোয়ারটা বেশ পছন্দ করছে সবাই। ফতুয়া, কামিজ, ব্লাউজÑ সবকিছুর ক্ষেত্রেই উঁচু গলা এই সময়ে তেমন দেখা যাচ্ছে না। বরং চার কোনা, পানপাতা ও ভি-আকৃতির গলা চলছে। পোশাকে হাতাকাটা, ছোট হাতার ম্যাগির সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে ঘটি হাতা।

 

আরামের কাপড় হিসেবে সুতির চেয়ে কম যায় না লিলেনও। সুতির চেয়েও এটি অনেক বেশি আরামের। সুতির মতো লিলেনের বুনন অতটা ঠাসা হয় না বলে বেশি বাতাস চলাচল করতে পারে। অনেক বেশি জলীয় বাষ্প টেনে শরীরকে আরাম দেয় খাঁটি লিলেন। আসলে দেশীয় বা পাশ্চাত্য পোশাকটার কাটছাঁট যে দেশেরই হোক না কেন, কাপড় হতে হবে পাতলা। ফ্যাশনের সঙ্গে সঙ্গে যেন আরামটাও পুরোপুরি পাওয়া যায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। দিনে হালকা লিলেন কাপড় বেশ আরামদায়ক হবে। তবে পোশাকে উজ্জ্বলতার ছোঁয়া রাখতে চাইলে  পোশাকের রং হালকা রেখে, নকশায়  উজ্জ্বল রং বেছে নিতে পারেন। নকশা হতে পারে ফ্লোরাল বা জিওমেট্রিক। আর রাতে একটু জমকালো রঙের পোশাক কিন্তু দারুণ লাগবে। আজকাল চেকড বা স্ট্রাইপড ডিজাইনের লিলেনও কিন্তু নজর কাড়ছে।

 

গরমে শিফনও বেশ আরামদায়ক পোশাকের কাপড়। গরমে ঘেমে গেলেও শুকিয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। তবে দৈনন্দিন দৌড়ঝাঁপের জন্য শিফন পারফেক্ট নয়। এটি খুব নাজুক ধরনের কাপড়। গরমে মৌসুমে শিফনের পরিবর্তে জর্জেটের কাপড় পরতে পারেন। তবে পাতলা বলে জর্জেট অনেকেই পরতে আরামবোধ করেন না। এ ক্ষেত্রে শিফন বা জর্জেটের কামিজ বানালে ভিতরের শেমিজটা যেন পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। শিফন শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের দৈর্ঘ্য একটু বাড়িয়ে নিতে পারেন। সব রকম নকশা আসলে চাইলেও শিফন কাপড়ের ওপর করা যায় না। মেশিন অ্যাম্ব্রয়ডারি করে হালকা চুমকির কাজ দেওয়া যায়। শিফনে যদি জমকালো ভাব আনতে চান, তাহলে ব্লাউজটাতে ভারী কাজ করিয়ে নিতে পারেন। দাওয়াতে পরতে চান এমন শিফনের শাড়িগুলোতে আধা ইঞ্চি বা এক ইঞ্চি চিকন পাড় ও হালকা পাথর বসিয়ে নিতে পারেন।

 

কাপড়ের পরেই আসে রঙের বিষয়। হালকা রং এ সময়ের গরমের জন্য উপযুক্ত। হালকা সাদা, ধূসর, নীল, কমলা, সবুজ, বেগুনি হতে পারে আপনার ফতুয়া, কুর্তি কিংবা শার্টের জন্য সঠিক নির্বাচিত রং। তবে বর্তমানে অনেকেই তাঁতের কিংবা বাটিকের কাপড়ের তৈরি শার্ট, ফতুয়া আর কুর্তি পরে থাকেন। এসব কুর্তি, শার্ট আর ফতুয়াতেও আছে নানা ধরন। তবে গরমের এ সময়ে শর্ট কুর্তি আর শার্টের দিকে আকর্ষণ বেশি থাকে অফিস, কলেজ আর ভার্সিটিগামী তরুণীদের। এসব কুর্তি, শার্টের সঙ্গে সহজেই পরা যায় শর্ট কিংবা লম্বা ঢোলা প্যান্ট। এসব প্যান্টে থাকে নানা ধরনের ছোট পকেট যাতে আপনি অনেক কিছু অনায়াসে রাখতে পারবেন। এসব প্যান্ট খুব সহজে এই গরমে হতে পারে আপনার পছন্দের পোশাক।

 

পোশাকের সঙ্গে অনুষঙ্গ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গরমে  পোশাকের সঙ্গে মানানসই হালকা চটি বেশ আরামদায়ক। হাতে কাঠের বালা বা সুতোর চুড়ি পরতে পারেন। কানে পরতে পারেন  পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে ছোট দুল। গরমে ধাতুর তৈরি গয়না না পরাই ভালো। এর বিকল্প হিসেবে পরতে পারেন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি দুল, চুড়ি বা বড় মালা। ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ঝোলা ধরনের ব্যাগ। তার ভিতরে রাখতে পারেন একটি রোদ-চশমা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর