শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বদভ্যাসে পিঠে ব্যথা

বদভ্যাসে পিঠে ব্যথা

ছবি : ইন্টারনেট

পিঠের ব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে। তবে অনেক সময় তুচ্ছ দৈনন্দিন অভ্যাসের জন্যও এই ব্যথা হতে পারে। আর সেসব বিষয়ে সাবধান থাকলে এ ব্যথার হাত  থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।

 

দীর্ঘ সময় কুঁজো হয়ে বসে থাকলে

চেয়ারের ওপর বাঁকা হয়ে বসলে বুকের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে। ফলে কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। আর বাঁকা হয়ে বসলে শক্তির অপচয় হয়, যার ফলে পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে ৯০ ডিগ্রি কোণ করে ও চেয়ারের চাকার কাছাকাছি বসার চেষ্টা করুন। তাহলে আর বাঁকা হয়ে বসতে হবে না। তাছাড়া অনেক মানুষই জানেন না যে পা ছড়িয়ে বসার কারণে পিঠ সঠিক অবস্থানে থাকে না।

 

কাজের ফাঁকে বিরতি নেওয়া

কাজ করার সময় সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখার কথা অনেকেই ভাবেন না। ব্যস্ত সময়ে কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি নেওয়াটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকানোর সময় সামনে ঝুঁকে কাজ করা যাবে না। তবে কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি নেওয়ার অভ্যাস না করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে এবং পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে ১৩৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বসে কাজ করলে মেরুদন্ডের মধ্যবর্তী জায়গা কম সংকুচিত হবে। তাছাড়া আধাঘণ্টা পরপর কিছুক্ষণের জন্য উঠে দাঁড়ালে এবং হাঁটাহাঁটি করলে উপকার পাওয়া যাবে। পাশাপাশি অফিসের চেয়ার মেরুদন্ডের বাঁকা স্থানের ভার ঠিকভাবে নিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। কারণ বসার সময় মাথা সোজা এবং মেরুদন্ড চেয়ারের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। তাছাড়া কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকানোর সময় সামনে ঝোঁকা যাবে না।

 

মানসিক চাপ

দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মানসিক যন্ত্রণাও পিঠ ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। মানসিক চাপে ভুগলে পেশি, ঘাড় ও পিঠে চাপ পড়ে।

তাই প্রতিদিন শান্ত বা চাপমুক্ত থাকার অভ্যাস করতে হবে। এক্ষেত্রে ভালো বই পড়া যেতে পারে অথবা বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে আনন্দদায়ক মুহূর্ত কাটানো যেতে পারে। তাছাড়া গবেষণায় জানা যায়, ব্যথা কমাতে গান বেশ কাজ করে। সংগীত হরমোনের চাপ ও পেশির উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।

 

পুরনো তোশক

একটি ভালো তোশক সাধারণত ৯ থেকে ১০ বছর টেকে। তবে ঠিকভাবে ঘুমাতে না পারলে বা পিঠে অস্বস্তি হলে পাঁচ থেকে সাত বছর অন্তর তোশক পরিবর্তন করা উচিত। যারা পাঁচ বছর অন্তর তোশক পরিবর্তন করেন তাদের পিঠে তুলনামূলক কম ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে বেশি শক্তও না আবার বেশি নরমও না, এমন তোশক কিনতে বা ব্যবহার করতে হবে। শক্ত তোশকে ঘুমালে মেরুদন্ডে বেশি চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে।

 

বদলে নিন খাদ্যাভ্যাস

যেসব খাবার হৃদযন্ত্র ভালো রাখে এবং শরীরের ওজন ও রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে সেসব খাবার পিঠের জন্যও উপকারী। গবেষকরা দেখতে পান, যাদের পিঠ ব্যথা করে তাদের বেশির ভাগেরই ধমনি ও মেরুদ- ক্ষতিগ্রস্ত। তবে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল মেরুদন্ডে পুষ্টি জুগিয়ে ময়লা পরিষ্কারে সাহায্য করে, এমনটা না হলে, পিঠে প্রদাহ হতে পারে যা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত পাঠাবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সয়া, বাদাম, শাকসবজি, বিভিন্ন প্রোটিনজাতীয় খাদ্য যেমন- মুরগি, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস এবং ফল খেতে বলা হয়।

 

ভারী ব্যাগ বহন

কাঁধে প্রতিদিন ভারী ব্যাগ বহন করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে। কারণ ভারী ব্যাগ কাঁধের ভারসাম্যতা নষ্ট করে ফেলে। এক্ষেত্রে হালকা ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া ব্যবহৃত ব্যাগের ওজন শরীরের ওজনের তুলনায় কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না। পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভাগ করে দুই ব্যাগে নেওয়া যেতে পারে। এতে কাঁধের ওপর চাপ কম পড়বে।

 

বেশি উঁচু বা বেশি নিচু জুতা

হাই হিল পরলে পিঠ বাঁকা হয়ে থাকে। ফলে মেরুদন্ডে চাপ সৃষ্টি করে। জুতার হিলের উচ্চতা ঠিক না হলে পায়ের ক্ষতি করতে পারে। যা পরে পিঠ ব্যথার কারণ হতে পারে। হাই হিল পরলে পিঠ বাঁকা হয়ে থাকে। ফলে মেরুদন্ডে চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পায়ের পাতার প্রান্তে চাপ পড়ে। এতে শরীরের ওজনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ব্যথার সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে পায়ের জন্য আরামদায়ক ফ্ল্যাট জুতা বা স্নিকারস পরা যেতে পারে। আর ফ্যাশনেবল জুতাও বাদ দেওয়ার দরকার নেই। শুধু অনেকদূর হাঁটতে হবে এরকম কোনো জায়গায় যাওয়ার সময় হিল পরার অভ্যাস বদলে ফেলুন।

 

মোটরসাইকেল চালানো

যদি মোটরসাইকেল বা সাইকেল চালানো শুরু করার পর পিঠে ব্যথা হওয়া শুরু করে, তবে তা নতুন করে সমন্বয় করতে হতে পারে। ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ বাইকার পিঠে ব্যথা অনুভব করেন। সাধারণ সাইকেলে ক্ষেত্রে ঊরুসন্ধি থেকে হ্যান্ডেলবার এক থেকে দুই ইঞ্চি সামনে থাকবে। আর মাউন্টেইন বাইকের ক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় ইঞ্চি সামনে থাকবে। প্যাডেল নিচে থাকলে সিটে বসা অবস্থায় পায়ের অবস্থান হতে হবে ঘড়ির ছয়টা বাজার কাঁটার মতো। বাইকের হাতল ধরার ক্ষেত্রে কনুই অল্প বাঁকা হবে। তবে হাতে কোনো রকম চাপ পড়লে বুঝতে হবে সমস্যা আছে।

 

সঠিক নিয়ম মেনে চলুন পিঠ ব্যথা মুক্ত জীবনযাপন করুন, মনে রাখবেন প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম পন্থা।

 

লেখক-

ডা. এম ইয়াছিন আলী

চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট

ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল ধানমন্ডি, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর