জীবনে নাটকীয় পরিবর্তন এনে দীর্ঘদিন টিকে থাকা খুব কম মানুষের পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু কিছু নিয়ম সবসময় মেনে আনতে হবে পরিবর্তন। আর একে বলে মধ্যপন্থা। ওজন কমাতে এমন মধ্যপন্থা দারুণ কার্যকরী। জীবন-যাপনে পরিবর্তন আনতে হবে ছোট ছোট। আর ধীরে ধীরে সেই পরিবর্তনগুলোর মাপ বাড়াতে হবে। এই পরিবর্তন ব্যক্তি বিশেষে অনেক সময় বদলে যেতে পারে। একটা বিশেষ ডায়েট প্ল্যানে গোড়া থেকেই না গিয়ে ছোট ছোট খাওয়া-দাওয়ার বিধিনিষেধ মেনে চলা দিয়ে শুরু করা উচিত।
কেমন হবে ডায়েট প্ল্যান
► প্রতিদিন সকালের নাস্তায় অন্তত ২৫-৩৫ গ্রাম হাই-কোয়ালিটি প্রোটিন খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রোটিন এমন একটা বস্তু, যা খেলে ‘প্রচুর খেয়েছি’ ভাব তৈরি হয়। ফলে বাইরে বেরিয়ে হাবি-জাবি খাবার খাওয়ার ইচ্ছা আর থাকবে না। আর হ্যাঁ; ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন সকালে দুটো ডিম অমলেট, লো-ফ্যাটি চিজ এবং মাত্র এক টুকরো মাংস খাওয়া উচিত। এতে স্বাস্থ্য আর স্বাদ দুই বজায় থাকবে। ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
► নিজেকে মনে মনে বার বার বলুন, ফল আর সবজি আমার প্রধান খাবার। নিউট্রিশিয়ানরা বলেন, ৮০০ ক্যালরি স্বাস্থ্যকর খাবার ৬০ ক্যালরি জাঙ্কফুডের চেয়ে ভালো। তাই বেশি বেশি ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। ফল, সবজি কাঁচা বাদাম, দই-এ ধরনের খাবারগুলো স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। শরীরের মেদঝরানোয় এসব খাবার সহায়ক। তাই এ ধরনের খাবার একটু বেশি খেলেও ক্ষতি নেই।
► নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন- ‘আমি কি ক্ষুধার্ত?’ যদি ভিতর থেকে উত্তর আসে ‘না’, তাহলে খাবেন না। আমরা কেউ খাবার জিনিস দেখলে খেতে চাই, পাশের কাউকে খেতে দেখলে খেতে চাই। এই বাজে অভ্যাস পরিহার করতে হবে। কেবলমাত্র এভাবে আমরা অপ্রয়োজনীয় ক্যালরি বর্জন করতে পারি। তাই যখন ক্ষুধা লাগবে তখনই খাবেন।
► প্রতিদিন যতটুকু খান, তার থেকে কিছুটা অংশ খাবার সরিয়ে রাখুন। যেমন- দেড় প্লেট ভাত বা একটা স্যান্ডউইচ বা একটা রুটি খাওয়ার আধাঘণ্টা বাদে যদি মনে হয় ক্ষুধার্ত লাগছে তাহলে একটা-দুটো বিস্কুট খান। আর যদি না মনে হয়, তাহলে ঠিক এই মাপেই কয়েকদিন থাকুন। তারপর আবার কমাবেন পরিমাণ। তবে অতিরিক্ত কম খাওয়া ঠিক নয়।
► আপনি যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, চলতে ফিরতে খাওয়া-দাওয়া করবেন না। এক গবেষণায় জানা যায়, এ ধরনের খাওয়া হলো ‘মাইন্ডলেস ইটিং’। এর ফলে ক্যালরি বেড়ে যায়। তাই চুপচাপ বসে খান। একই খাবার বসে খেলে ক্যালরি অনেক কম হয়।
► খাবার খেতে বসলেই প্রচুর খাওয়া হয়ে যায়। আসলে কম খাওয়ার দুটো রাস্তা আছে। খাওয়ার শুরুতেই যতটা সম্ভব শুধু-শুধু তরকারি খেয়ে ফেলুন। এতে ভাত বা অন্যান্য জিনিসের ওপর চাপ কমবে। আর দ্বিতীয় রাস্তাটা হলো খেতে বসার মিনিট পাঁচেক আগে কমপক্ষে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নিন। এই পানি আপনার স্টমাককে অনেকটাই ভর্তি রাখবে। টানা ১২ সপ্তাহ এই পন্থা অবলম্বন করতে পারলে ওজন কমবে অন্তত ২ কিলো। তাই এই পদ্ধতির মধ্যে যে কোনো একটি ট্রাই করুন। আর স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ওজন কমিয়ে ফেলুন।
হেলদি ডায়েট চার্ট
► সকালে দুধ ছাড়া চা বা কফি, দুটো আটার রুটি, এক বাটি সেদ্ধ সবজি, এক বাটি কাঁচা শসা ইত্যাদি খেতে পারেন। শসা ওজন কমাতে জাদুর মতো কাজ করে।
► মধ্যদুপুরে ভারী খাবার একদমই নয়। এক্ষেত্রে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং টক জাতীয় ফলমূল বেশি বেশি খেতে পারেন।
► দুপুরের খাবারের তালিকায় রাখুন ৫০-৭০ গ্রাম চালের ভাত। মাছ বা মুরগির মাংস এক বাটি। এক বাটি শাকসবজি, এক বাটি শসার সালাদ, এক বাটি ডাল এবং ২৫০ গ্রাম টকদই ইত্যাদি।
► বিকালের নাস্তায় রাখুন দুধ ছাড়া চা বা কফি, মুড়ি বা বিস্কুট।
► রাতের খাবার হালকা হওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে দুটো আটার রুটি, এক বাটি সবুজ তরকারি, এক বাটি ডাল, টকদই দিয়ে এক বাটি সালাদ ইত্যাদি।
লেখা : ফ্রাইডে ডেস্ক