শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বদলে গেল জীবনযাত্রা

বদলে গেল জীবনযাত্রা

♦ মডেল : জাকিয়া সুলতানা কর্ণিয়া ♦ ছবি : নূরে আলম নূর

শখে অথবা প্রয়োজনে- আজকের মেয়েদের সঙ্গী হয়েছে স্কুটি। দীর্ঘ যানজটের পথে নারীকে আজ জড়সড় বসে থাকতে হয় না। গণপরিবহন ব্যবহার করে দিনে একটি কাজেই হাঁপিয়ে ওঠা নয়। স্কুটি সঙ্গে থাকলে এক দিনে পৌঁছে যেতে সক্ষম একাধিক গন্তব্যে। এক স্কুটিতেই আজকের নারীর বদলে গেছে পুরো জীবনযাত্রা। বিস্তারিত লিখেছেন-  তানিয়া তুষ্টি

 

নারী আজ বাধাহীন। চলন, বলন, প্রতিভা বিকাশ-  কোথাও আজ বাধার মুখে আড়ষ্ঠ থাকতে রাজি নয়। সফলতাও এসেছে হাত ভরে। তাহলে চলার পথ কেন মনের মতো হবে না? এ যুগের যুদ্ধজয়ী নারীর পথ চলাতেই হবে আনন্দ। সেই আনন্দের সঙ্গী হয়েছে অনেক কিছু। তবে গতিশীল চলার আনন্দ দিয়েছে পছন্দসই একটি স্কুটি। নিজেকে ফ্যাশনেবল করে তুলতেও আজকাল তরুণীরা বেছে নিচ্ছেন উপযুক্ত একটি স্কুটি। সময় ও টাকা বাঁচানোর সুবিধা থাকায় ছাত্রী, অফিসগামী নারী বা গৃহিণী সবার কাছেই গুরুত্ব পেয়েছে এই বাহনটি। বলতে গেলে সাধ্যের মধ্যেই স্কুটি কিনতে পাওয়া যায়। গাড়ির ঠেলাঠেলি নেই, সিএনজি-অটোর ভাড়া নিয়ে দরদাম নেই-  বরং স্কুটি থাকায় মন যেখানে চায় সেখানে যেতে পারার স্বাধীনতা পেয়েছে আজকের নারীরা। পুরো জীবনযাত্রা যেন বদলে গেছে এই সঙ্গীকে পেয়ে। বেশ কিছুদিন আগেও অনেকেই ভাবতেন, আধুনিক, সাহসী বা পয়সাওয়ালা মেয়েরা শখের বশে কেবল স্কুটি ব্যবহার করেন। কিন্তু সে ধারণা গত হয়েছে। বর্তমানে সব বয়সী মেয়ে ব্যবহার করছেন সহজলভ্য এই বাহনটি। বড় কথা হলো, স্কুটি এখন শুধু ফ্যাশন নয়, প্রয়োজন। একটা সময় কেবল এনজিওতে কর্মরত নারী স্কুটি চালাতেন। তাও আবার নেহায়েত হাতেগোনা কয়েকজন। কিন্তু এখন! আশপাশে তাকালেই দেখবেন রাজধানীসহ সারা দেশে যানজটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছতে মেয়েদের সঙ্গী এখন স্কুটি।

আপনাকে যদি ভাবতে হয়, বাসা থেকে  বের হয়ে প্রথমে রিকশা, তারপর গাড়ি, তারপর আবার রিকশা, তারপর হাঁটা।  ফেরার পথে আবার একই ঝামেলা। আর যেতে পথে অসহ্য যানজট তো থাকছেই। এমন অবস্থায় হাতে একটি স্কুটি থাকলে দূরত্ব বা যানবাহন জটিলতা কোনো ব্যাপারই নয়। যারা খুব টাইট শিডিউলে চলাফেরা করেন, তাদের ক্ষেত্রে মাসের পর মাস আপন লোকদের সঙ্গে দেখা করা হয়ে ওঠে না। কারণ হাতে থাকা দিনের দুয়েক ঘণ্টায় তাদের কাছে পৌঁছানো আবার ফিরে আসা কঠিন। আপনার হাতে কম সময় থাকলেও স্কুটিতে চেপে চলে যেতে পারেন গন্তব্যে। ফলে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যাবে কয়েক ধাপ।

বাহন হিসেবে যে মেয়ের হাতে একটি স্কুটি আছে তার জীবনযাত্রায়ও পড়তে পারে ভিন্নরকম প্রভাব। এই যেমন ধরুন, কাজ শেষে হুট করেই  বেরিয়ে পড়লেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়। অথচ রাস্তায় যানজটের ভয় থাকলে আপনাকে রাজি করানোর সাধ্য কার? আজকাল তরুণদের কাছে সেলফ ডেট খুবই পছন্দের হয়ে উঠেছে। মনেরমতো সাজগোজ করে হাতের স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন যে কেউ। সবকিছু মিলিয়ে যাপিত জীবনকে আরও বেশি সহজ করা ও ভিন্নতার জোগান দিতে তরুণীদের কাছে দিন দিন স্কুটিই পরম ভরসা হয়ে উঠছে।

 

কেমন স্কুটি চাই?

 লেডিস স্কুটি তৈরিতে ব্যবহার হয় হালকা মেটাল। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে কম। মোটরসাইকেলের চেয়ে স্কুটি চালানো বেশ সহজ। কিছুটা কম গতির ও পার্কের সুবিধার্থে রয়েছে ইজি সেন্টার স্ট্যান্ড। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য আছে ৯০ মিলিমিটার চওড়া অ্যান্টি স্টিড টায়ার। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার জন্য এতে আলাদা চেম্বার যুক্ত আছে। তাই শুধু জিন্স প্যান্ট আর ফতুয়া পরেই নয়, স্কুটি চালানো যেতে পারে সালোয়ার-কামিজ এমনকি শাড়ি পরেও। বাজারে লাল, নীল, সাদা, হলুদ, পিংক ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের স্কুটি পাওয়া যায়। বেছে নিতে পারেন এর ভিতর থেকে পছন্দের একটি।

 

ফ্যাশন হিসেবে স্কুটি

প্রয়োজনের পাশাপাশি ফ্যাশনেও স্কুটির জুড়ি নেই। টিনএজারদের কথা মাথায় রেখেই এটি বানানো বলে রং ও ডিজাইনে রয়েছে এর যথেষ্ট বৈচিত্র্য। প্রায় ৫০টির বেশি রঙের স্কুটি এখন বাজারে চোখে পড়ছে। তবে পিংক রংটিই নারীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। স্কুটি মেয়েদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও কর্মক্ষম করে তোলে। তাই সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মেয়েদের কাছে স্কুটিই এখন সেরা। আমাদের বাজারে হিরো হোন্ডা, টিভিএস, ইয়ামাহা, মাহেন্দ্র, সুজুকিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্কুটি পাওয়া যায়। ব্র্যান্ডের সঙ্গে সঙ্গে মডেলের রয়েছে ভিন্নতা। যেমন প্লেজার, উই গো, স্কুটি পেপ, স্কুটি টিনজ, ভেসপা, স্ট্রিক ইত্যাদি।  চালকের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে স্কুটিগুলোতে ১২০ সিসির ইঞ্জিন থাকে। তাই বাইকটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ ছাড়াও টিউবলেস টায়ার থাকায় চাকা ফুটো হলেও আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার চলা যায়। এ ছাড়া স্কুটির রয়েছে সুবিধাজনক গিয়ার-ব্যবস্থা, যেমনটি আপনি চান।

 

সাবধানতা

স্কুটির সুবিধা পুরোপুরি ভোগ করার ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা মানা বাঞ্ছনীয়। ট্রাফিক আইন অনুযায়ী তো বটেই নিরাপত্তার জন্য বাইকে চালক ও আরোহী দুজনকেই মাথায় হেলমেট পরতে হবে। স্কুটি চালানোর সময় সহজে সামলানো যায় এমন পোশাক পরাই উত্তম। স্কার্ফ কিংবা ওড়না সাবধানে রাখতে হবে। লেন পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে রিয়ারভিউ মিরর ব্যবহার ভোলা যাবে না। স্কুটির গতি ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকলে স্কুটি নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে হেডফোনে গান শোনা বা কথা বলা এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।

 

স্কুটির যত্ন

যে বাহনটি আপনাকে শহরময় দুর্দান্ত গতিতে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, তারও কিছু ক্লান্তি আছে। ত্রুটি সৃষ্টি হতে পারে অথবা অযতেœ বিগড়ে যেতে পারে। তাই নিয়মিত সার্ভিসিং করাতে হবে। স্কুটিতে পর্যাপ্ত তেল বা চার্জ আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইঞ্জিন কিংবা অন্য যে কোনো অংশ পরিষ্কার আছে কিনা সে ব্যাপারেও সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। নইলে যে কোনো সময় বিকল হয়ে যেতে পারে। ব্যবহার শেষে ধুলাবালি থেকে রক্ষা করতে স্কুটির ওপর পর্দা দিয়ে রাখতে ভুলবেন না।

 

দরদাম

আমাদের দেশে স্কুটির দরদাম নির্ভর করে ব্র্যান্ডের ওপর। প্লেসারের দুটি মডেলের দাম পড়বে ১ লাখ ৩০ থেকে ৩৫ হাজারের মতো। এ ছাড়া টিভিএস, সুজুকি, মাহেন্দ্র ব্র্যান্ডের স্কুটি পাবেন ৯০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে। বাংলামোটর, বংশাল, তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুরে রয়েছে বাইকের বিভিন্ন শোরুম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর