শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু এবং ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস রোগীদের ডেঙ্গু হলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কারণ বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে (অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার ক্ষেত্রে) একে অপরের পরিপূরক। ডায়াবেটিস রোগীদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্যতা বেশি, ডেঙ্গু রোগীদের বেলায়ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতাও বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের ডেঙ্গু হলে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক সমস্যা দেখা দেয়Ñ

প্রথমত : ডেঙ্গুর চিকিৎসা খানিকটা কঠিন হয়ে পড়ে।

দ্বিতীয়ত : ডেঙ্গুর জটিলতা বেড়ে যায়।

তৃতীয়ত :Convalescent Period   প্রলম্বিত হয়। Convalescent Period হচ্ছে রোগ সেরে ওঠার পর রোগীর শরীর পূর্ণ মাত্রায় গঠন হওয়ার সময় পর্যন্ত।

ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায় ডেঙ্গুর চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় ফলের রস বেশি করে খেতে হয়। ফলের রস খেলে স্বাভাবিকভাবে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।

ডেঙ্গুর জটিলতা বেড়ে যায়

ডায়াবেটিস হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ডায়াবেটিসের সঙ্গে অন্য রোগ থাকলে, অন্য রোগের গতিবিধি অপ্রতিরোধ্য হয়ে যায় এবং বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।

Convalescent Period প্রলম্বিত হয়  Convalescent Period  কি তা আগেই আলোচনা হয়েছে। ডায়াবেটিস যেহেতু শরীর যন্ত্রকে দুর্বল করে ফেলে, শরীরের কোষ এবং টিস্যুগুলোকে দুর্বল করে ফেলে, তাই শরীরকে পুনর্গঠন করতে সময় খানিকটা বেশি লাগে।

এখন আসুন ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে কীভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবেন?

১. অন্যান্য সময় সপ্তাহে একবার, দুবার বা তিনবার ব্লাড সুগার মাপেন। কিন্তু ডেঙ্গু হলে আপনাকে প্রতিদিন দু-তিনবার ব্লাড সুগার মাপতে হবে। কারণ-

প্রথমত : যে কোনো Stress -এ ব্লাড সুগার বেড়ে যায়। রোগ একটি Stress - এবং ডেঙ্গু রোগ আরও বেশি Stress ।

দ্বিতীয়ত : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যায়াম অপরিহার্য। ডেঙ্গুজ্বরে ব্যায়াম নিষেধ বরং ২৪ ঘণ্টা রোগীকে বিছানায় শুয়ে পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হয়। এ অবস্থায় রক্তে শর্করা অনেক বেড়ে যায়।

তৃতীয়ত : ডায়াবেটিসে শর্করাজাতীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করে খেতে হয়। কিন্তু ডেঙ্গুর পথ্য হিসেবে যে খাদ্যগুলোকে নেওয়া হয় (যেমন ফলের রস) তাতে শর্করার প্রাধান্য বেশি।

চতুর্থত : ওই খাদ্যগুলো বার বার খেতে হয়। ফলে রক্তে শর্করা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে।

২. আপনি যদি মুখে খাওয়া ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তাহলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মুখে খাওয়া ওষুধ বন্ধ করে দিন। সাময়িকভাবে ইনসুলিন শুরু করুন। কারণ-

প্রথমত : ডেঙ্গুজ্বরে লিভার দুর্বল থাকে তাই মুখে খাওয়ার ওষুধ তেমন কাজ করে না। বরং তাতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।

দ্বিতীয়ত : ডেঙ্গু রোগীদের বমি হয়ে থাকে এবং Alimentary Tract -এর কর্মক্ষমতা কমে যায় তাই মুখে খাওয়ার ওষুধ রক্তে প্রবেশ করে না।

তৃতীয়ত : ব্লাড সুগার যখন অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং ঘন ঘন ওঠা নামা করে তখন তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মুখে খাওয়ার ওষুধগুলো পেরে ওঠে না।

৩. আপনি ইনসুলিনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করুন। Short Acting ইনসুলিন এবং Long Acting ইনসুলিন দুটোই প্রয়োজন।

৪. ঘন ঘন আপনার ডাক্তারের উপদেশ গ্রহণ করুন। অবহেলা করবেন না।

 

লেখক-

অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী

মেডিসিন বিভাগ (পিআরএল)

ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর