শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কলেস্টেরল ও হৃদরোগ

খাদ্যে কলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে, হজমের পর রক্তে কলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। এজন্য হৃদরোগ চিকিৎসায় অধিক চর্বিযুক্ত খাবার নিষেধ।

এ কথা সবারই জানা যে, হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ রক্তের উচ্চমাত্রার কলেস্টেরল। রক্তে বিদ্যমান কলেস্টেরলের বেশ কয়টি রূপ বা শ্রেণি রয়েছে। যেমন- হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল), লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল), ট্রাইগ্লিসারাইড (টিজি) এবং সর্বোপরি রক্তে বিদ্যমান সব ধরনের কলেস্টেরলে মোট পরিমাণ বা টোটাল কলেস্টেরল (টিসি)। এদের মধ্যে রক্তে বিদ্যমান এলডিএল হৃদরোগ সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে এবং টিজি অবশ্যই এলডিএল এর চেয়ে অনেকটা কম ক্ষতিকারক। রক্তে এইচডিএল এর মাত্রা যত বেশি থাকে হৃদরোগ হওয়ার প্রবণতা তত কমে যায় এবং এর মাত্রা বেশি কমে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এর বিপরীত হলে এলডিএল অর্থাৎ এলডিএল এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায় তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এলডিএল কে ক্ষতি কারক কলেস্টেরল এবং এইচডিএল কে হৃদবান্ধব কলেস্টেরল বলা হয়। রক্তে টিজি মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় তবে এর ক্ষতিকারক ক্ষমতা এলডিএল এর চেয়ে অনেক কম।

 

খাদ্যে কলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে, খাদ্য হজমের পর রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এজন্যই হৃদরোগ চিকিৎসায় এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে অধিক চর্বি যুক্ত খাদ্য বর্জন করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ পশুপাখির চর্বিতে প্রচুর পরিমাণে কলেস্টেরল বিদ্যমান থাকে। রক্তের কলেস্টেরল দুটি উৎস থেকে আসে। এক খাদ্য চর্বি যা থেকে কলেস্টেরল রক্তে প্রবেশ করে। এবং দ্বিতীয়টি হলো আমাদের লিভারের বা কলিজার কার্যক্রমের মাধ্যমে উৎপাদিত কলেস্টেরল। শারীরিক প্রয়োজনে লিভার অন্য খাদ্য বস্তুর নির্যাস থেকে কলেস্টেরল তৈরি করতে পারে। রক্তে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় কলেস্টেরল থাকা অত্যাবশ্যকীয় তা না হলে শারীরিক বিপাকীয় কার্যক্রম ব্যবহৃত হয়ে অসুস্থতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মতৎপরতার জন্য কলেস্টেরলের প্রয়োজন হয়, স্টেরয়েড হরমোন ও সেক্স হরমোন তৈরির প্রধান কাঁচামাল কলেস্টেরল, ত্বকের লাবণ্যতা ধরে রাখার জন্য এবং ত্বকের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কলেস্টেরল মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গ যে কোটি কোটি কোষের (সেল) মাধ্যমে গঠিত ওই সব কোষের আবরণ তৈরি করতে কলেস্টেরলে প্রয়োজন হয় তাই কলেস্টেরল ছাড়া কোনো অঙ্গই তার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবে না।

রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকলে দিনে দিনে রক্তনালির বিশেষ বিশেষ স্থানে কলেস্টেরল ও অন্যান্য চর্বি জাতীয় বস্তু জমা হতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে (১০, ২০, ৩০ বছর) এভাবে কলেস্টেরল ও অন্যান্য চর্বি জাতীয় বস্তু জমা হতে হতে হার্ট ব্লক ও অন্যান্য অঙ্গ যেমন- ব্রেইন, কিডনি ইত্যাদির রক্তনালিতে ব্লক সৃষ্টি করে অর্থাৎ রক্ত প্রবাহের পথ আটকে দিয়ে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করে হৃদরোগ, হার্টঅ্যাটাক, ব্রেইনস্ট্রোক, কিডনি ফেইলুর সৃষ্টি করে থাকে। রক্তনালিতে কলেস্টেরল জমা হয়ে রক্ত প্রবাহ ব্যাহত করার প্রক্রিয়াটা এত ধীর গতির যে এর প্রভাবে রোগ সৃষ্টি হতে বহু বছর (১০ থেকে ৩০ বছর) লেগে যায় এবং অনুরূপভাবে কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং কলেস্টেরল কমানোর মেডিসিন গ্রহণ করে এর ফলাফল পেতে ও দীর্ঘসময় লেগে যায়। অনেকে কলেস্টেরলের মাত্রা ৬ মাস বা ১ বছর ধরে কমিয়ে রেখে এর থেকে সুফল পাওয়ার আশা করতে থাকেন এটা ঠিক নয়। মেডিসিনের পরিবর্তে খাদ্যাভ্যাস ও কায়িকশ্রমের মাধ্যমে কলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা বিজ্ঞানসম্মত, দীর্ঘমেয়াদি এবং অধিক কার্যকর।

 

মেডিসিনের মাধ্যমে কলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করে

প্রাকৃতিক উপায়ে কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করলে তা থেকে অধিক সুফল পাওয়া যায় এবং এটাকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত মেডিসিনের অনেক পাশর্^প্রতিক্রিয়া থাকে, এতে অনেকের মাংসপেশির প্রদাহ, ত্বকের এলার্জি ও লিভারের সমস্যা হতে দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী এ ধরনের মেডিসিনের মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি এবং এ থেকে সুফল পেতে হলে এ জাতীয় মেডিসিন দীর্ঘসময় (১০/২০ বছর) ধরে সেবন করতে হবে। যা আমাদের দেশের দরিদ্র রোগীদের জন্য উপযোগী নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার অনিয়ন্ত্রিত থাকলে পরোক্ষভাবে কলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এ ধরনের রোগীদের সুগার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

 

লেখক-

ডা. এম, শমশের আলী

(কার্ডিওলজিস্ট), সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর